অর্থনৈতিক রিপোর্টার : দেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। কিন্তু কোনো ক্রমেই দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। গেল সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসের মধ্যে একদিন কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও দরপতন হয়েছে বাকি তিনদিন। এ সময় সব ধরনের মূল্য সূচকের পাশাপাশি কমেছে টাকার অংকে লেনদেনের পরিমাণ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে দুই হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। ডিএসই সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটিদিন থাকায় এ সপ্তাহে চারদিন লেনদেন হয়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, একদিকে দেশের শেয়ারবাজারে পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহ নেই।
অন্যদিকে লোকসানের ভয়ে সেকেন্ডারি মার্কেটে আসছে না নতুন বিনিয়োগকারী। এছাড়াও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও বাজারে অনেকটা নিষ্ক্রিয় রয়েছে। ফলে ৩০০ কোটি টাকার ঘরেই ঘুরপাক খাচ্ছে লেনদেন। আর এসব করণে আস্থাহীনতায় নতুন করে শেয়ার কিনছে না বিনিয়োগকারীরা।
যাদের বাজারে বিনিয়োগ রয়েছে তারাও আস্তে আস্তে শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে যেতে চাচ্ছে। ফলে ধারাবাহিকভাবে কমছে বাজার মূলধন।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গেল সপ্তাহে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টাকার অংকে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫১০ কোটি ৩৯ লাখ ২ হাজার ৯২৪ টাকা। যা এর আগের সপ্তাহের চেয়ে ১০৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা বা ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ কম। আগের সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৬১৪ কোটি ৬৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৫৮ টাকার।
তবে গত সপ্তাহে ডিএসইতে বেড়েছে টার্নওভারের পরিমাণ। গড়ে প্রতিদিন টার্নওভার দাঁড়িয়ে হয়েছে ৩৭৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। যা তার আগের সপ্তাহে ছিল ৩২২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে টার্নওভার বেড়েছে ৫৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বা ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ কম।
গেল সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার লেনদেন শুরুতে ডিএসই’র বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ১০ হাজার ৭৭২ কোটি ১৭ লাখ ৮ হাজার ৮২৪ টাকা এবং শেষ কার্যদিবসে বুধবার লেনদেন শেষে বাজার মূলধন নেমে এসেছে ৩ লাখ ৭ হাজার ৯৮৪ কোটি ১১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৮ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ২ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫ লাখ টাকা বা দশমিক ৯০ শতাংশ।
সপ্তাহ শেষে ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৩৮ পয়েন্ট বা দশমিক ৮৫ শতাংশ। ডিএস ৩০ সূচক কমেছে ২৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬১ শতাংশ। আর শরীয়াহ বা ডিএসইএস সূচক কমেছে ৫ পয়েন্ট বা দশমিক ৪৭ শতাংশ।
গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৩০টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৩৪টির, কমেছে ১৬৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৪টির আর লেনদেন হয়নি ৬টি কোম্পানির শেয়ার। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারের সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১ দশমিক ২৩ শতাংশ কমে ১৪ দশমিক ৭৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
গেল সপ্তাহে দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সিএএসপিআই সূচক কমেছে দশমিক ৭০ শতাংশ। সিএসই ৩০ সূচক কমেছে ১ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং সার্বিক সূচক সিএসইএক্স কমেছে দশমিক ৭২ শতাংশ, সিএসই ৫০ সূচক কমেছে ১ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং শরীয়াহ সিএসআই সূচক কমেছে দশমিক ২৯ শতাংশ।
সপ্তাহে সিএসইতে গড়ে মোট লেনদেন হয়েছে ২৭৩টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১১৯টির, কমেছে ১২৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৫টির। চার দিনে টাকার অংকে লেনদেন হয়েছে ১০৮ কোটি ৮৬ লাখ ৩১ হাজার ৪৬৩ টাকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন