দেশের বৃহৎ ক্রীড়া আসর বাংলাদেশ গেমসে থাকলেও আসন্ন যুব গেমসে নেই দশটি ডিসিপ্লিন। এগুলো হলো- সাইক্লিং, গলফ, জিমন্যাস্টিকস, খো-খো, রোইং, টেনিস, শরীর গঠন, ক্রিকেট, রাগবি ও ফেন্সিং। এর বাইরেও আসর থেকে কাটা পড়ছে আরো ১৫টি ডিসিপ্লিন! ফলে বাদ পড়া ডিসিপ্লিনগুলোর সংশ্লিষ্ট ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা দারুণ ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) উপর। তারা বিওএ’র এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যুব গেমস থেকে বাদ পড়লেও এই ডিসিপ্লিনগুলো দেশে নিয়মিত খেলার আয়োজন করে থাকে। শুধু তাই নয়, বিদেশের মাটি থেকেও পদক জিতে আনছে। তাই যুব গেমসের মতো দেশ ব্যাপী খেলোয়াড় বাছাই প্রক্রিয়ায় যুক্ত না করায় তারা হতাশ।
প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আগামী মাসে দেশের ৬৪ জেলায় প্রথমবারের মতো একযোগে শুরু হচ্ছে ‘বাংলাদেশ যুব গেমস’। ১৮ ডিসেম্বর জেলা পর্যায়ে শুরু হয়ে পরবর্তীতে বিভাগীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই গেমস। দেশের সবক’টি বিভাগে ১০ দিনব্যাপী বিভাগীয় পর্যায়ের বাংলাদেশ যুব গেমস শুরু হবে আগামী বছরের ৬ জানুয়ারি। ৯ মার্চ গড়াবে গেমসের জাতীয় পর্যায়ের খেলা। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের যুব গেমস পরিচালনা করবে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা। জেলা, বিভাগ এবং জাতীয়- প্রত্যেকটি ধাপে সেরাদের নিয়ে দল গঠন করবে বিওএ। জেলা, বিভাগ এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রস্তুতি ও প্রতিযোগিতা চলাকালে ক্রীড়াবিদদের খাবার, বাসস্থান ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধাদী প্রদান করবে বিওএ। প্রতিটি পর্যায়ে সেরা তিনজন ক্রীড়াবিদকে প্রনোদনা এবং বিওএ’র প্রশংসাপত্র দেয়া হবে। দলগত পর্যায়ে সেরা দুই দলকেও এই পুরস্কারে ভুষিত করা হবে। এর মাধ্যমে সারা দেশ থেকে প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদ খুঁজে বের করা হবে। প্রতিটি ক্রীড়ায় ভবিষ্যতের জাতীয় যুব দল গঠনের লক্ষ্যে এই গেমসের আয়োজন করছে বিওএ।
দেশব্যাপী খেলোয়াড় বাছাই করে যুব দল গঠনের এমন সুযোগ থেকে বঞ্চিত দশটিতো আছেই সঙ্গে বাতিলের খাতায় চলে যাচ্ছে অন্য আরও ১৫টি ডিসিপ্লিনও। মোট ২৫টি ডিসিপ্লিন বাদ পড়ছে যুব গেমস থেকে। ফলে ২১টি ডিসিপ্লিন নিয়ে বিওএ আয়োজন করছে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ যুব গেমস। এ প্রসঙ্গে খো খো ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক ফজলুর রহমান বাবুল বলেন, ‘ভারতে অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে একমাত্র খো খো ডিসিপ্লিনই দু’টি রৌপ্যপদক জিতেছে। গত ডিসেম্বরে ভারতের ইনডোরে অনুষ্ঠিত এশিয়ান খো খো চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্সআপও হয়েছি আমরা। অষ্টম বাংলাদেশ গেমসেও আমরা কৃতিত্ব দেখিয়েছি। অথচ আমাদেরকেই বাদ দিয়েছে বিওএ। এটা কোনভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়। সম্ভাবনাময় এই খেলাটিকেও বিবেচনায় আনা উচিত ছিলো বিওএর।’
সাইক্লিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাসান পারভেজ বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায় থেকে আমরা খেলোয়াড় সংগ্রহ করেছি। মাঠ কিংবা রোড নিয়ে আমাদের কোন সমস্যা হয়নি। কারণ জেলা পর্যায়ে রোডে খেলে এসে তারা জাতীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষন নেবে ট্র্যাকে। তাই একজন সাইক্লিস্টকে খুঁজতে জেলায় জেলায় ট্র্যাক বা অন্য কিছুর প্রয়োজন নেই। তাছাড়া তৃণমূল পর্যায় থেকে যাদেরকে আনা হয়েছে, তারা ইতোমধ্যে বিজেএমসিতে চাকুরি পেয়েছে। আমরা চাকরির নিশ্চয়তা দিচ্ছি। তাহলে কেন আমাদের রাখা হলো না যুব গেমসে?’ রাগবি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মৌসুম আলীর কথা, ‘বিওএ’র এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছিলাম। গেল বছর ৩২টি ফেডারেশন নিয়ে (অনূর্ধ্ব-১৬) ক্রীড়া প্রতিভা অন্বেষন হয়েছিল। তখন বাদল রায় বলেছিলেন, এই ফেডারেশনগুলো নিয়েই যুব গেমস হবে। কিন্তু কোথায়। ভাবতেই পারিনি যে যুব গেমসে রাগবি থাকবে না। অন্তত বিওএ’র সদস্যগুলোকে তো তারা রাখতে পারতো। কারণ দেশে বছরে সর্বোচ্চ খেলা আমরাই করে থাকি। বাংলাদেশে বর্ষা বৃষ্টি হলে অনেক খেলাই বন্ধ থাকে। কিন্তু রাগবি বন্ধ থাকে না। তাই যুব গেমস নিয়ে যারা গবেষনা করেছেন, তারা ভুল করেছেন। বঞ্চিত করেছেন যুব সমাজকে।’
এ বিষয়ে বিওএ’র মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা বলেন, ‘সব জেলাতে সব খেলা হয় না। আবার জনপ্রিয়ও নয়। যেমন, সাইক্লিং খেলা যায় না সব জেলাতে। সেখানে ট্র্যাক বা রোড নেই। তাই যে সব খেলা জেলাগুলোতে জনপ্রিয় সেসব খেলাই আমরা যুব গেমসে রেখেছি। এতে করে প্রতিভা খুঁজতে সহজ হবে জেলাগুলোকে। তাছাড়া যে সব জেলা পাঁচটি ডিসিপ্লিনের আয়োজন করতে পারবে, সেসব ডিসিপ্লিনই আমরা রেখেছি যুব গেমসে। তাই আমাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করা ঠিক নয়।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন