জেএফএ (অনুর্ধ্ব-১৪) মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে আজ ময়মনসিংহ মাঠে নামবে ঠাকুরগাঁও জেলার বিপক্ষে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বেলা তিনটায় শুরু হবে ম্যাচটি। ফাইনাল জিতে শিরোপা ঘরে তোলাই ময়মনসিংহের লক্ষ্য। আর এ শিরোপা তারা উৎসর্গ করবে অকালে ঝরে পড়া ধোবাউরার কলসিন্দুর স্কুল তথা অনুর্ধ্ব-১৬ জাতীয় দলের কৃতি ফুটবলার প্রয়াত সাবিনা খাতুনকে। গতকাল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্যই জানান ময়মনসিংহ দলের অধিনায়ক ইয়াসমিন আক্তার। অশ্রæসজল চোখে তিনি বলেন, ‘আমাদের ধোবাউরার ১০ জন মেয়ে জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৬ দলে খেলে থাকে। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল সাবিনা। কিন্তু আমরা তাকে হারিয়েছি। আমার সহপাঠিনী ছিল সে। কিছুদিন আগে সাবিনা আমাদেরকে ছেড়ে পরপারে চলে গেছে। জেএফএ (অনুর্ধ্ব-১৪) চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে আমরা সাবিনাকে উৎসর্গ করতে চাই।’
টুর্নামেন্টের ফাইনালে জয় পেয়ে শিরোপা ঘরে তোলা দু’দলের লক্ষ্য হলেও ময়মনসিংহ তাদের কৃতি ফুটবলার সাবিনাকে হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করতে চায়। ঠাকুরগাঁওয়ের বিপক্ষে জ্বলে উঠতে চায় তারা। শুধু তাই নয়, চ্যাম্পিয়ন ট্রফি নিয়ে উল্লাস না করে সাবিনার কবর জিয়ারত করতে চায় দলটি। এ প্রসঙ্গে ইয়াসমিন বলেন, ‘আমরা ঠাকুরগাঁওকে হারিয়ে ট্রফি নিয়ে সাবিনার কবরে গিয়ে তার জন্য দোয়া করতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘ট্রফি জিততেই আমরা চুড়ান্ত পর্বে এসেছি। এ পর্যন্ত আসতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। চূড়ান্ত পর্বে টানা তিন ম্যাচ জিতেছি আমরা। আশাকরি ফাইনালেও জিতবো।’ দু’দলের মধ্যে কারা সেরা? এমন প্রশ্নে ইয়াসমিনের উত্তর, ‘মাঠেই প্রমাণ হবে কারা সেরা। আমরা খেলায় বিশ্বাসী। যদিও ফাইনালে ওঠা দু’টি দলই শক্তিশালী।’ টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়নও ময়মনসিংহ। দলের কোচ সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি মনে করি টুর্নামেন্টে আমরাই সেরা। বর্তমান চ্যাম্পিয়নও আমরা। তাছাড়া বঙ্গমাতা ফুটবলে আমাদের নান্দাইল উপজেলা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আশাকরি কালও (আজ) মেয়েরা ভালো খেলবে এবং শিরোপা জিতবে।’
ঠাকুরগাঁওয়ের রানিশংকৈ উপজেলার রাঙ্গাটুঙ্গী গ্রামের মেয়েদের নিয়েই ফাইনালে উঠেছেন কোচ সুগা মুরমু। গত আসরে রংপুরের কাছে টাইব্রেকারে হেরে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিলো ঠাকুরগাও। অজপাড়াগাঁয়ের একটি দলকে কিভাবে সেরা বানালেন সুগা। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সুগা’র উত্তর, ‘একদিন এলাকার প্রিন্সিপাল স্যার মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমরা কি কেবল ছেলেদের খেলাই দেখবে। নাকি নিজেরাও খেলবে? উনার ওই একটি কথাতেই ঠাকুরগাঁওয়ের মেয়েরা ফুটবল খেলতে শুরু করে। ২০১৪ সালে আমি মেয়েদের নিয়ে মাঠে নেমে পড়ি। তখন মেয়েরা সেলোয়ার কামিজ ও মাথায় স্কার্ফ পড়ে খেলতে আসতো। গ্রামের মেয়েদের হাফ প্যান্ট পড়ানো তখন অনেক কঠিন কাজ ছিল। কিন্তু গতবার যখন এই মেয়েরাই সেমিফাইনালে উঠে, তখন আমাদের গ্রামের দৃশ্যপট পাল্টে যায়। এখন অবশ্য এতটা সমস্যা হয় না। এই দলের সোহেলী ও আদরী বর্তমান অনূর্ধ্ব-১৬ জাতীয় দলে খেলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আসলে ফুটবলের মাধ্যমে মেয়েদের জীবনে পরিবর্তন আনতে শুরু করেছি আমরা। টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আশাকরি মেয়েরা আমাকে নিরাশ করবে না।’ অধিনায়ক বীথিকা কিসকুর কথা, ‘আমরা এখানে বিজয় অর্জন করতে এসেছি। জেলায় যেন সম্মান নিয়ে ফিরতে পারি, সেই জন্য সবার দোয়া কামনা করছি।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন