গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা ঃ গোপালগঞ্জে মানবদেহের জন্য নিরাপদ বিষমুক্ত বিটি বেগুন উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। গতকাল শনিবার গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার পূর্ব কদমপুর গ্রামে বিটি বেগুনের উপযোগিতা যাচাইয়ের ওপর মাঠ দিবস থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ বেগুনে ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ হয় না। তাই কীটনাশক খরচ ৮০ ভাগ কম লাগে। এ বেগুন সুস্বাদু, বিষমুক্ত ও মানবদেহের জন্য নিরাপদ বলে মাঠ দিবসে বক্তারা জানান।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগের পিরোজপুর-গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন কর্মসূচি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আয়োজিত মাঠ দিবসে প্রধান অতিথি ছিলেন বিটি বেগুনের উদ্ভাবক ও প্রকল্প পরিচালক আ.সা.ম মাহাবুবুর রহমান।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণে ডিডি সমীর কুমার গোস্বামীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মাঠ দিবসে ডিএই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক জিএম রুহুল আমিন, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এইচএম খায়রুল বাসার, মুকসুদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. মোঃ মোশারফ হোসেন, উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সামসুন্নাহার, কৃষক আবুবক্কর মুন্সি, জাকির হোসেন, ওবায়দুর রহমান, সুশান্ত কুমার দাস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
পিরোজপুর-গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন কর্মসূচি সূত্রে জানা গেছে, তিন জেলার ১৬৮ শতাংশ জমিতে ১৩টি প্রদর্শনী প্লটে বিটি বেগুনের চাষ করা হয়েছে। ইতি মধ্যে ইউরোপের একটি প্রতিনিধি দল বিটি বেগুনের প্রদর্শনী প্লট পরিরদর্শন করেছেন।
মুকসুদপুরের কদম পুরের কৃষক জাকির হোসেন ও আবু বক্কর মুন্সি জানান, বিটি বেগুনে ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ হয়নি। তাই বিষ স্প্রের প্রয়োজন পড়েনি। কিন্তু অন্য বেগুনে প্রতিদিন বিষ স্প্রে করতে হয়। ওই বেগুন বিষে জর্জরিত হয়ে পড়ে। মানুষের জন্য ওই বেগুন নিরাপদ নয়। বিটি বেগুনে ৮০ ভাগ কীট নাশক খরচ বাঁচে। উৎপাদন অন্য জাতের বেগুনের তুলনায় বেশ ভাল। খেতে সুস্বাদু। তাই বাজারে বিটি বেগুনের চাহিদা ব্যাপক। একটু বেশি দামে বিষমুক্ত বিটি বেগুন বিক্রি হয়।
কদমপুর গ্রামের কৃষক ওবায়দুর রহমান বলেন, জাকির হোসেন ও আবু বক্কর মুন্সির ক্ষেত দেখে কৃষক বিটি বেগুন চাষে আগ্রহী হয়েছেন। আগামীতে লাভজনক ও বিষমুক্ত বিটি বেগুন চাষ আমাদের এলাকায় সম্প্রসারিত হবে।
পিরোজপুর-গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন কর্মসূচী ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এইচ.এম খায়রুল বসার বলেন, বিটি বেগুন সম্পূর্ণ বিষমুক্ত ও অর্গানিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত হয়। গোপালগঞ্জ সহ ৩ জেলায় এ বেগুন আবাদে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। হাইব্রিড প্রজাতির বেগুন চাষ করে কৃষক বীজ রাখতে পারেন না। কিন্তু বিটি বেগুন চাষ করে কৃষক আগামী বছরের জন্য বীজ রাখতে পারেন। এতেও কৃষক লাভবান হবেন। এছাড়া আমরা এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজম্ম রক্ষায় বিষ মুক্ত অর্গানিক বেগুন উৎপাদন বৃদ্ধি করছি।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ডিডি সমীর কুমার গোস্বামী বলেন,বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার বিরুদ্ধে সমন্বিত চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায়নি। পোকার আক্রমনই ছিলো বেগুনের সবচেয়ে বড় শত্রæ। ফলে কৃষক বেগুন চাষে লাভের মুখ দেখতে পেত না।
বিটি বেগুনের উপযোগিতা যাচাই করে দেখাগেছে এ বেগুনে ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার হয় নেই। ফলে বিষমুক্ত এ বেগুন চাষ করে কৃষক লাভবান হবেন।
বিটি বেগুনের উদ্ভাবক ও কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আ.সা.ম মাহাবুবুর রহমান বলেন, কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট বিটি ১.২,৩ ও ৪ জাতের বেগুন উদ্ভাবন করেছে। আমারা সারাদেশের আরো ১০৩ জাতের বেগুন উন্নত করার কাজ করছি। বেগুন সারা বিশ্বে একটি জনপ্রিয় সবজি। বিটি বেগুন লন্ডনের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে কোন ক্ষতি কারক উপাদান পাওয়া যায়নি। এ বেগুনে মানব দেহের জন্য কোন ক্ষতি কারক দিক নেই। এ বেগুন উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। বিটি বেগুন উৎপাদনে কীটনাশক খরচ সাশ্রয় হয়। তাই কৃষক বেশি লাভবান হন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন