বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

দু’জনের বোলিং অ্যাকশনই অবৈধ!

টি-২০ বিশ্বকাপ শেষ তাসকিন-সানির

প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী ব্যাঙ্গালুরু (ভারত) থেকে : ধর্মশালায় গত ৯ মার্চ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বড় জয়ের পর তাসকিন, আরাফাত সানির বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন ভারত আম্পায়ার সুন্দরম রবি এবং অস্ট্রেলিয়ান আম্পায়ার রড টাকার। ম্যাচ রেফারী এন্ডি পাইক্রফটের কাছ থেকে এই সন্দেহের কথা শুনকে পেয়ে ওই দুই আম্পায়ারের ভূমিকা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছিলেন বাংলাদেশ কোচ হাতুরুসিংহে। বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক পর্যন্ত তাসকিনের বোলিং অ্যাকশনে ত্রæটির কিছুই দেখছেন না বলে জানিয়েছিলেন মিডিয়ায়। অথচ, সেই সন্দেহ থেকে ম্যাচ রেফারীকে রিপোর্ট এবং তার প্রেক্ষিতে চেন্নাইয়ের পরীক্ষাগারের রিপোর্টÑসব কিছুই এলোমেলো করে দিয়েছে বাংলাদেশ দলকে। বোলিং অ্যাকশনের বৈধতা নিরূপণে বায়োমেকানিক্স পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে যেখানে অতীতে অপেক্ষা করতে হতো অন্তত ২ থেকে তিন সপ্তাহ, সেখানে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশিত হলো আরাফাত সানি, তাসকিনের বোলিং অ্যাকশনের রিপোর্ট। কোলকাতায় পাকিস্তানের কাছে ৫৫ রানে হেওে সেমি’র লড়াইয়ে ফিরতে যখন ব্যঙ্গালুরুতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কৌশলী খেলার ছক আঁকছে বাংলাদেশ টীম ম্যানেজমেন্ট, তার ঠিক ৫০ ঘন্টা আগে পেতে হলো দুঃসংবাদ। তাসকিন এবং আরাফাত সানির বোলিং অ্যাকশনকে অবৈধ ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ করে মিডিয়া রিলিজের মাধ্যমে সে সংবাদ দিয়েছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসি। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতে আপাতত বাধা নেই। বোলিং অ্যাকশন সংশোধন করে আবারো বায়োমেকানিক্স পরীক্ষা দিয়ে ফিরতে পারবেন তারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।
গতকাল সকালে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে অনুশীলনের সময়ই পাওয়া গিয়েছিল আভাস। দুপুর তিনটার মধ্যে আরাফাত সানির বোলিং অ্যাকশনের রিপোর্ট পাওয়া যাবে বলে প্রথমে শোনা গেলেও পরবর্তীতে টিম ম্যানেজার খালেদ মেহমুদ সুজন জানিয়েছিলেন এক সঙ্গে দু’জনের রিপোর্ট আসছে। তখন থেকেই তৎপর মিডিয়া। আইসিসি’র ওয়েবসাইটে খবরটি প্রকাশিত হওয়ার ঘন্টাখানেক আগে খবরটি জেনেছে বিসিবি, সেখান থেকে টীম ম্যানেজমেন্টের কাছে পৌছেছে দুঃসংবাদ। এক সঙ্গে ২ বোলারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিংয়ে নিষেধাজ্ঞাদেশ বাংলাদেশের ক্রিকেটে এটাই প্রথম। যে চেন্নাইয়ের ল্যাবরেটরীতে ২০১৪ সালে পরীক্ষা দিয়ে বোলিং অ্যাকশনের বৈধতা পেয়েছেন আল আমিন, সোহাগ গাজীÑ সেই একই ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষা দিয়ে ব্যর্থ তাসকিন,আল আমিন। এই দুঃসংবাদটি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই টুয়েন্টি-২০ বিশ্বকাপ টেকনিক্যাল কমিটির কাছে রিপ্লেসমেন্ট চেয়েছে বিসিবি। দুই স্পিনার শুভাগতহোম এবং সাকলায়েন সজীবকে তাসকিন এবং আরাফাত সানির স্থলে রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে টেকনিক্যাল কমিটি। গতকাল রাত ৯টার ফ্লাইটে ঢাকা থেকে ব্যাঙ্গালুরুর উদ্দেশে উড়াল দিয়েছেন এই ২ ক্রিকেটার।
রিপোর্টে নাকি আরাফাতের অধিকাংশ ডেলিভারীর সময় হাতের কনুই ১৫ ডিগ্রির বেশি ভেঙ্গেছে। তাসকিনের কোন কোন ডেলিভারী ১৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলেও আরাফাতের মতো মাত্রাটা বেশি ছাড়িয়ে যায়নি। বিকেল ৫টায় দুঃসংবাদটি দিয়েছেন বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার এবং সাবেক অধিনায়ক খালেদ মেহমুদ সুজনÑ ‘কিছুক্ষণ আগে রিপোর্ট পেলাম, ওরা দু’জনই পজিটিভ। অনেক বড় রিপোর্ট। তাসকিনকে নিয়ে ভাবছি আমরা। ওর রিপোর্টটি পড়ছি।’ ২০১৫ বিশ্বকাপে ৯ উইকেটÑএমন দুর্দান্ত পারফরমেন্সে বাংলাদেশ দলকে তুলেছেন তাসকিন কোয়ার্টার ফাইনালে। সর্বশেষ এশিয়া কাপ টি-২০তেও বাংলাদেশের দলের ফাইনালে খেলার পেছনে অবদানটাও যথেষ্ট এই পেস বোলারের। এশিয়া কাপে ১৪৮ কিলোমিটার গতিতে দ্রæতগতির ডেলিভারীতে আলোচনায় উঠে আসা তাসকিন টুয়েন্টি-২০ বিশ্বকাপের চলমান আসরে তিন ইনিংসে পেয়েছেন ৩ উইকেট। টি-২০ বিশ্বকাপে হয়ে যাওয়া তিন ইনিংসে সর্বমোট বল করেছেন ৬০ টি তাসকিন, এই ৬০ ডেলিভারীর মধ্যে ৩১টিই ডট বল করেছেন যে বোলার, তাকে হারিয়ে দুর্ভাবনায় না পড়ে কি উপায় আছে? ইডেন গার্ডেনসে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচেও কিন্তু এই দুই বোলারের বোলিংটাই যা কিছু উল্লেখ করার মতো ছিল। তাসকিন ৩২ রান খরচায় শিকার করেছেন ২ উইকেট, সেখানে আরাফাত সানি ৩০ রানে পেয়েছেন ২ উইকেট। এক সঙ্গে দুই বোলারের টি-২০ বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাওয়ায় তাই কপালে বড় ধরনের দুর্ভাবনার ভাঁজ পড়েছে বাংলাদেশ টীম ম্যানেজমেন্টের। এই ধাক্কা সামাল দেয়াটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মেহমুদ সুজনÑ ‘কঠিন পরিস্থিতিতে এখন পড়তে হলো। অতীতে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে বেশ ক’বারই কিন্তু ভালভাবে ফিরেছি। আমার বিশ্বাস এবারো পারব।’
গত ৯ মার্চ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে পেস বোলার তাসকিন আহমেদ এবং বাঁ হাতি স্পিনার আরাফাত সানির বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ পোষণ করায় আইসিসি’র নির্দেশিত চেন্নাইয়ের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা বায়োমেকানিক্স পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়েছে আরাফাত সানিকে গত ১২ মার্চ। ধর্মশালা থেকে বাংলাদেশ দলের শ্রীলংকান স্পিন বোলিং কোচ রুয়ান কালপাগের সঙ্গেই চেন্নাইয়ে পাঠানো হয়েছিল ২৯ বছর বয়সী আরাফাত সানিকে। পরীক্ষা দিয়ে ১৩ তারিখে ওমানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আরফাত। আর তাসকিন ধর্মশালায় টুয়েন্টি-২০ বিশ্বকাপের প্রথম পর্বের সব ক’টি ম্যাচ শেষ করে চেন্নাইয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন গত ১৫ মার্চ। তাকে সঙ্গে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক।
পরীক্ষার ফল বেরুনোর আগে কিন্তু তাসকিন এবং আরাফাত সানির চেহারায় এতোটুকু দুশ্চিন্তার ছাপ দেখা যায়নি। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে দু’জনই লম্বা সময় ধরে করেছেন নেটে বোলিং, ফিল্ডিংয়েও ছিলেন প্রাণবন্ত। অনুশীলনের এক ফাঁকে মিডিয়ার সঙ্গে বলেছেন কথা দু’জনই। আরাফাত সানি বলেছেনÑ ‘চিন্তা করে লাভ কি, যা হওয়ার তাই হবে।’ ফুরফুরে মেজাজে মিডিয়ার সামনে আসা তাসকিন বলেছেনÑ ‘ইনজুরির পর অনেক কিছু হয়েছে। কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ার অভিজ্ঞতা আছে, সুতরাং বোলিং পরীক্ষায় কি আসে,তা নিয়ে ভেবে লাভ কি বলেন?’ ইডেনে পাকিস্তানের কাছে বিধ্বস্ত হয়ে ব্যাঙ্গালুরুতে যখন ফেরার চেষ্টা, তখন দলের ২ অপরিহার্য বোলারকে হারিয়ে টি-২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জটা যে আরো কঠিন হয়ে গেল।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন