ডি-৮ সদস্যভুক্ত দেশগুলোর ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের উন্নয়নে একটি বিশেষায়িত এসএমই উন্নয়ন ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন, এসএমইখাতে বিরাজমান বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর দ্রুত আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব। এ লক্ষ্যে তিনি সদস্য দেশগুলোর মধ্যে এসএমইখাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে দ্রুত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পরামর্শ দেন।
নাইজেরিয়ার রাজধানী আবুজার ট্রান্সকোভার হিলটন হোটেলে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ ডি-৮ শিল্পমন্ত্রী সম্মেলনের বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী এ প্রস্তাব দেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা এবং বেসরকারি শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশগুলোর এ অর্থনৈতিক জোট বিশ্ব বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। শুধুমাত্র দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃবাণিজ্য বাড়িয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি অটোমোবাইল, জাহাজ নির্মাণ, তৈরি পোশাক, পেট্রোকেমিক্যাল, সফ্টওয়্যার ও আইসিটি শিল্পখাতে বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যৌথ বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণের তাগিদ দেন। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি উল্লেখ করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। গত আট বছরে বাংলাদেশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন, মাথাপিছু আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ বিভিন্ন সূচকে ঈর্ষণীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। বর্তমানে জনগণের মাথাপিছু আয় ১৬১০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত অর্থবছরে সাত দশমিক ২৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বাংলাদেশ অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে এবং বাংলাদেশের নির্মিত জাহাজ ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানি হচ্ছে। সফ্টওয়্যার শিল্পে বর্তমানে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হলেও ২০১৮ সাল নাগাদ এ শিল্পখাত থেকে এক বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সরকার কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিনিয়োগ ও কারিগরি সহায়তা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। মেশিনারী শিল্পে যে সব দেশের দক্ষতা ও উন্নত প্রযুক্তি সুবিধা রয়েছে, সেগুলো অন্য সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি বাণিজ্যের অশুল্ক বাধা দূরীকরণের লক্ষ্যে অভিন্ন মান প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি এ লক্ষ্যে ডি-৮ সচিবালয়কে শক্তিশালীকরণ ও এর জনবল বৃদ্ধির তাগিদ দেন।
আমির হোসেন আমু বলেন, বাংলাদেশ যখন দ্রুত উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন মায়ানমার সরকার পরিকল্পিতভাবে বলপূর্বক সে দেশের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে জাতিগত নিধনের প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে। জনবহুল বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছে। তিনি মিয়ানমারে জাতিগত নিধন বন্ধ এবং দ্রুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির নিজ দেশে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতা ও সমর্থন কামনা করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন