শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

গোদাগাড়ীতে বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালন

| প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো. হায়দার আলী, গোদাগাড়ী রাজশাহী থেকে : রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে হাঁস পালনে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। একজনের দেখাদেখি অন্যজন হাঁস পালন শুরু করছেন। গোদাগাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার নিকট ভাল পরামার্শও পাচ্ছেন। এমন ২ জন খামারীর সাথে দেখা হয়। তাদের একজনের বাড়ী উপজেলার নবগ্রাম অন্যজনের বাড়ী হাবাসপুরে। তারা বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালন করছেন। হাবাসপুরে প্রায় ১ হাজার হাঁসের বাচ্চা পালন করে লাভবান হয়েছেন আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, পুকুরের ধারে ফাঁকা জায়গায় হাঁস পালন শুরু করি। বর্তমানে একটি বড় ঘর তৈরী করে হাঁসের পাশাপাশি ছাগল ভেড়া পালন করছি। তবে হাঁসগুলো ডিম দেয়া পর্যন্ত রাখতে পারলে আরো বেশী লাভ হতো কিন্তু রোগবালাই, সময়ের অভাবে আগেই বিক্রি করেছি। উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডা. সাইফুল ইসলাম মনে করেন হাঁস পালনের জন্য সঠিক পরিকল্পনা, জায়গা ও খরচের পরিমান কম হলে এর পালন আরো বৃদ্ধি পাবে। দেশের আবহাওয়া হাঁস পালনে খুবই উপযোগী। তবে হাঁসের মাংস ও ডিম মুরগির মাংসের চেয়ে জনপ্রিয় কম না। বর্তমানে এটি অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এখন হাঁস পালন উপার্জনের লাভজনক একটি মাধ্যম।
গোদাগাড়ীতে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালনে এগিয়ে আসছেন এবং প্রধান পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন হাঁস পালন। তবে হাওড় এলাকায় এর চাষ বেশী। এই এলাকায় হাওড় বা বিল না থাকায় এর চাষাবাদ কম। আর কোনো চাষী, ব্যাক্তি বা খামারী কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে আমরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও চিকিৎসা দিয়ে থাকি। মৎস্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের মতে, পুকুরে হাঁস ও মাছের সমন্বিত চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করলে খুব সহজে বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব। হাঁস পালনে অনেক সুবিধা রয়েছে যেমন মাছের জন্য পুকুরে তেমন বাড়তি সার ও খাদ্য দিতে হয় না । হাঁস থাকলে মাছ দ্রæত বৃদ্ধি পায়। হাঁসের রোগবালাই তুলনামুলক খুবই কম। তাছাড়া খাবারের তেমন অভাব হয় না। দেশি মুরগি যেখানে গড়ে বছরে ৫৫ টি ডিম দেয়, দেশি হাঁস সেখানে ৯০টির বেশি ডিম দিয়ে থাকে। আর উন্নত জাত হলে বছরে ২৫০-৩০০টি ডিম দিয়ে থাকে। হাঁস পালন প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে চাইলে আপনার ৪০-৫০ শতাংশ আয়তনের একটি পুকুর লাগবে। ১০০-২০০টি হাঁস এবং হাঁসের ঘর তৈরি করে নিতে হবে। এসব পরিকল্পিতভাবে করলে ভালো হবে। হাঁসের জাত নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যে জাতের হাঁস বেশি ডিম দেয় সে জাতের হাঁস নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে খাকি ক্যাম্পেবেল, ইন্ডিয়ান রানার, সিলেট মিটি ও নাগেশ্বরী জাত নির্বাচন করা যেতে পারে। এ জাতের হাঁস ৫ মাস বয়স থেকে ২ বছর পর্যন্ত ডিম দেয়। হাঁস বিভিন্ন পদ্ধতিতে পালন করা যায়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে মুক্ত জলাশয়ে হাঁস পালন। এ পদ্ধতিতে ২৫-১০০টি হাঁস মুক্ত পুকুরে, লেকে অথবা ধান কাটার পর পরিত্যক্ত জমিতে পালন করা যায়। অপরটি হচ্ছে ইনটেনসিভ হাঁস পালন। এ পদ্ধতিতে ১-১০ লাখ হাঁস পালন করা সম্ভব। দিনের বেলায় হাঁস পানিতে থাকতে পছন্দ করে। শুধু রাতযাপনের জন্য ঘরের প্রয়োজন।
পুকুরপাড়ে কিংবা পুকুরের ওপর ঘর তৈরি করতে হবে। ঘরের উচ্চতা ৫-৬ ফুট হলে ভালো হয়। ঘর তৈরিতে বাঁশ, বেত, টিন, ছন, খড় ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ইট দিয়ে মজবুত করে ঘর তৈরি করতে পারলে ভালো হবে। ঘর খোলামেলা হতে হবে এবং সাপ ও ইঁদুর থেকে মুক্ত রাখতে হবে। শহরে বিভিন্ন মাপের চৌবাচ্চায় হাঁস পালন করা হচ্ছে । এক্ষেত্রে প্রশস্ত ছাদ থাকলে সুবিধা বেশি। ছাদের একপাশে ঘর অপর পাশে চৌবাচ্চা নির্মাণ করতে হবে। প্রজননের জন্য ৮ টি হাঁসের সঙ্গে একটি পুরুষ হাঁস রাখা দরকার। এরপর দেশি মুরগির সাহায্যে অথবা ইনকিউবেটরে হাঁসের ডিম ফোটানো যায়। হাঁস পালনে সুবিধা হলো হাঁস খাল-বিল-পুকুর থেকে তার কিছু খাবার সংগ্রহ করে নেয়। তাছাড়া বাজারে হাঁসের তৈরি খাবার কিনতে পাওয়া যায়। শুকনো খাদ্য না দিয়ে হাঁসকে সবসময় ভেজা খাদ্য দেয়া উচিত। খাদ্যে আমিষের পরিমাণ ডিম দেয়া হাঁসের ক্ষেত্রে ১৭-১৮ শতাংশ ও বাচ্চা হাঁসের ক্ষেত্রে ২১ শতাংশ রাখা উচিত। হাঁস দানা, খইল, ভূষি, শামুক, ঝিনুকের গুঁড়ো, ডিমের খোসা, কেঁচোসহ অন্যান্য খাবার বেশি পছন্দ করে। মাছের পুকুরেও হাঁস পালন করা যায়। মাছের পুকুরে হাঁস পালন করলে কৃষকরা বেশি লাভবান হবে। হাঁস বেশি প্রোটিন পায়। মাছ দ্রæত বৃদ্ধি পায়। হাঁস পালনে ২০-৪০ শতাংশের একটি পুকুরে ১০০-২০০টি হাঁসের জন্য এ প্রকল্প শুরু করলে সব মিলে খরচ হবে ৫০-৬০ হাজার টাকা। সঠিক পরিচর্যা আর যতœ নিতে পারলে প্রথম বছরে যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে ২০-৫০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন