শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

উন্নত জাতের হাঁস পালন করে ফিরোজার ভাগ্য বদল

প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. আবু শহীদ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) থেকে

উন্নতজাতের হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার সিদ্দিশী আবাসন প্রকল্পে বসবাসরত ভূমিহীন ফিরোজা বেগম (৫০)। অভাবের সংসারে এসেছে সচ্ছলতা। তার এ সফলতায় এখন এলাকার অনেকেই এসব জাতের হাঁস পালনে আগ্রহী হয়েছেন। ফিরোজা বেগম(৫০)দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার বেতদীঘি ইউনিয়নের সিদ্দিশী আবাসন প্রকল্পের ভ্যান চালক আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী। দুই ছেলে ফরিদ হোসেন ও সুমন আজাদ এবং দুই মেয়ে শাপলা বেগম ও পারুল বেগমসহ মোট ৬ সদস্যের অভাবের সংসারে ভিটেমাটি হারিয়ে গৃহবধূ ফিরোজার প্রায় ১০ বছর আগে ভূমিহীন হিসেবে ঠাঁই হয়েছে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত আবাসন প্রকল্পে। ভ্যান চালক স্বামীর রোজগারে ৬জনের সংসারে অভাব যেন পিছু ছাড়তে চায় না। আবার বছর চারেক আগে বড় মেয়ে ও বড় ছেলের বিয়ের খরচের দেনা বিভিন্ন এনজিও থেকে নেয়া ঋণের বোঝা সইতে না পেরে এক সময় স্বামীর পাশাপাশি গৃহবধূ ফিরোজাও জীবিকার তাগিদে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে হরেক রকমের মনোহরী সামগ্রী বিক্রি করতো আর স্বামী চালাতেন ভ্যান গাড়ি। এতকিছুর পরেও সংসারে অভাব লেগেই থাকে কিন্তু গত ১বছর আগে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ বেতদীঘি ইউনিয়নের প্রোগ্রাম অফিসার বাদল নাগমিন ও প্রজেক্ট অফিসার প্রদীপ কুমার রায়য়ের সহযোগিতায় সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ৪শতক জমির উপর তৈরি বাড়ির সামনেই ফিরোজা বেগম শুরু করেন হাঁসের খামার। আর এতেই তার ভাগ্য খুলে যায়। ফিরোজা বেগম জানান, ছোট মেয়ে পারুল বেগমের স্পন্সরশীপের কারণে ১বছর আগে ওয়ার্ল্ড ভিশন বেতদীঘি শাখা হতে তাকে ৩৫০টি খাঁকি ক্যাম্বেল জাতের হাঁস প্রদান করা হয়। এক মাসের মধ্যে ৩৫০টি হাঁসের মধ্যে ৩১৮টি হাঁস ডিম দিতে শুরু করে। আর প্রতিদিন গড়ে ৩হাজার টাকার ডিম বিক্রি হওয়ায় সংসারের অভাব দূর করেও তিনি বিভিন্নভাবে সংসারে সহযোগিতা করছেন বলে জানান। ফিরোজার সংসারে এখন আর অভাব নেই। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই খামারের হাঁসের ডিম বিক্রির টাকায় তিনি স্বামীকে ৪৫হাজার টাকায় কিনে দিয়েছেন ব্যাটারি চালিত চার্জার ভ্যান। নতুন করে দেড় লাখ টাকায় আরও ২শ’ খাঁকি ক্যাম্বেল জাতের হাঁস কিনেছেন।
খাঁমারে হাঁসের সংখ্যা বেড়ে যাবার কারণে, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগিতায় আবাসনের পাশে সিদ্দিশী পুকুরের পাড়ে পড়ে থাকা ফাঁকা জায়গায় হাঁস রাখার জন্য একটি ঘরও উঠিয়েছেন। তাতেও তার খরচ হয়েছে প্রায় ১লক্ষ ৬০হাজার টাকা। অভাবের কারণে অন্য ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া না হলেও সর্বশেষ ক্লাস সেভেনে পড়া ছোট মেয়ের খরচ যোগানোর ক্ষেত্রে এখন তার আর কোন সমস্যা হয় না। এভাবে স্বামীর পাশাপাশি নারীরাও যে সংসারে সহায়ক হয়ে দাঁড়াতে পারে ফিরোজা বেগম তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ফিরোজার সংসারে এখন আর কোন অভাব নেই, আছে শুধু সফলতা আর স্বপ্নের হাতছানি। কিন্তু তারপরেও তিনি থেমে নেই তার স্বপ্ন খামারটি বড় আকারে বৃদ্ধি করা। আর তার এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তার খামারটি দ্রুত বড় আকারের একটি আয়ের উৎসে পরিণত হবে বলে তিনি আশাবাদি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন