এম এ মোহসিন চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) থেকে ঃ চট্টগ্রামের চন্দনাইশে কৃষকরা এখন আর ইরি, বোরো ও আমন ধানের চাষাবাদে সীমাবদ্ধ না থেকে মৌসুমে নানা জাতের অধিক ফলনশীল সবজি চাষ করে এ এলাকার কৃষিতে রীতিমত বিপ্লব ঘটিয়েছে। চন্দনাইশ উপজেলার শস্যভাÐার হিসেবে খ্যাত বৈলতলী, বশরতনগর, জাফরাবাদ, ধোপাছড়ি, জামিজুরী, হাতিয়াখোলা, লালুটিয়া, দিয়াকুল এলাকায় রবিশস্য চাষিরা নানা জাতের সবজি চাষ করছে। গরমের আগমনের শুরুতে শীতকালীন সবজির দাম বাড়তে শুরু করেছে। চন্দনাইশে বিভিন্ন সবজির মধ্যে সিম, কাকরোল, তিত করলা, চিচিঙ্গা, বরবটি, ফুলকপি, বাধাকপি, মুলা, ঝিঙ্গা, বেগুন, ঢেঁড়স, লাউ ভালো জন্মে। এলাকায় আবাদি জমির মাটি থেকে সর্বোচ্চ ৪/৫ ফুট উঁচু কাটি ও বাঁশের মাচা তৈরি করে আবাদ করা হয়েছে কাকরোল, তিত করলা, বরবটি, চিচিঙ্গা, কুমড়া, লাউ ও ঢেঁড়সসহ নানা জাতের সবজি।
এসব সবজিক্ষেত পুরো এলাকাজুড়ে সাজিয়ে রাখে সবুজের চাদরে। বৈলতলী এলাকায় ষাট উর্ধ্ব কৃষক মেহরাজ আলী জানান, এক সময় ইরি, বোরো, আমন ও প্রচলিত মৌসুমি শাকসবজি চাষ করে কোনো রকমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু বছর শেষে দেখা যেত জমির সেচ ও সার প্রয়োগসহ বিভিন্ন উপকরণে ব্যয় এবং মহাজনী সুদ পরিশোধ করে উৎপাদিত ফসলের সাথে আর্থিক হিসাব মেলানো কঠিন হয়ে যেত। কোন সময় নাম মাত্র লাভ হলেও আবার অনেক সময় উৎপাদন খরচ উঠতো না। তাই আমি বিগত কয়েক বছর ধরে অন্যান্য কৃষকদের মতো ধান চাষ বাদ দিয়ে সবজি চাষ শুরু করি। প্রথম বছরেই ভালো লাভ হওয়ায় ফিবছর সবজি চাষের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি। চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী লালুটিয়া শংখ নদীর তীরবর্তী বিশাল চরজুড়ে মুলা, সিম, বেগুন, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, বরবটিসহ শাকসবজি ভালো উৎপাদিত হয়। প্রতি বছর শংখ নদীর চরে পাহাড়ি ঢলে প্রবাহিত পলি মাটির কারণে উর্বরা শক্তি বৃদ্ধির ফলে এখানে প্রচুর সবজি চাষ হয় বলে জানালেন কৃষি পুরষ্কারপ্রাপ্ত দিয়াকুলের কৃষক আবু ছৈয়দ। একই কারণে শংখ নদীর ভাটি এলাকায় অনুরূপভাবে বৈলতলী, মৈশামুড়া, চাগাচর, আমিলাইষ, চরতি ও খোদারহাট এলাকায় শীতকালীন ফুলকপি, বাধাকপি, মুলা, বেগুন, টমেটো, বাদাম ও কাঁচা মরিচসহ হরেক প্রজাতির সবজি চাষ হয়। এসব এলাকার কৃষকরা হারভাঙ্গা পরিশ্রমে ফসলাদি উৎপাদন করে তা বিক্রি করে অনেকে এখন শূন্য থেকে লাখপতি। দোহাজারী রেলস্টেশনে বসে সবজির বড় বাজার। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা তাদের রুচিসম্মত সবজি ক্রয় করে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকে। এককালে রেলযোগে এসব পণ্য স্বল্প পরিবহন খরচে গন্তব্য স্থলে নিয়ে যেত।
এতে রেলওয়েরও বিপুল পরিমাণ বুকিং বাবদ রাজস্ব আদায় হত। বিগত ১০ বছর যাবত রেলওয়ে মালামাল পরিবহন বন্ধ থাকায় একদিকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে অপরদিকে পরিবহন খরচ বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা তাদের কঠোর পরিশ্রমে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না বলে জানালেন সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের কৃষক জসিম উদ্দিন।
তিনি আরো বলেন, সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত সার, কীটনাশক ও উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ পাওয়া যায় না, বাজার থেকে যে সমস্ত বীজ কিংবা প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ পাওয়া যায় তা ভেজালে ভরা। তাছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ কিংবা মাঠ কর্মীর দেখা মেলে না। সরকার কৃষিখাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় বা ভুর্তকি প্রদান করলেও তা সঠিক জায়গায় পৌঁছে না। যার কারণে এসব কৃষিপণ্য উৎপাদনে কৃষিঋণ পেতে কৃষকদের ব্যাংকে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন