সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

মাশরাফি ঝড়ে উড়ন্ত রংপুর

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আগের ম্যাচেই শেষ ওভারে ১৫ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেনি রংপুর রাইডার্স। এবার চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে প্রয়োজন ছিল ১৪ রান। আবার তালগোল পাকাতে বসেছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। তবে শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে এবার দলকে দারুণ জয় এনে দিয়েছেন থিসারা পেরেরা। গতকাল তাসকিনের শেষ ওভারে প্রথম দুই বল থেকে এক ছক্কায় থিসারা নেন ৮ রান। পরের দুই বলে দুটি উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে রংপুর। পঞ্চম বলে ঝুঁকিপূর্ণ দুই রান নিয়ে আবার স্ট্রাইকে থাকেন থিসারা। তাসকিনের ওয়াইড বলে কমে একটি রান। জয়ের জন্য শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ৩ রান। কিন্তু ডিপ মিডউইকেট দিয়ে দারুণ এক ছক্কায় দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন থিসারা। রংপুর পেয়ে যায় চলতি আসরে সবচেয়ে বড় লক্ষ্য তাড়া করে জয়।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ম্যাচে ৩ উইকেটে জিতেছে রংপুর। ৮ ম্যাচে চতুর্থ জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে দলটি উঠে এসেছে চার নম্বরে। অন্য দিকে, সমান ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে চিটাগং আছে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতেই।
ব্রেন্ডন ম্যাককালাম পারেন নি, ২০ বলে একটি করে চার-ছয়ে ১৫। ক্রিস গেইল যা খেললেন তাও তার স্বভাব বিরুদ্ধ, ৩টি বিশালকায় ছক্কা থাকলেও এক চারে ২৫ বল খেলে করলেন ৩৩ রান। দুই ব্যাটিং দানবের ব্যর্থতার দিনে গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম মাতালেন অন্য একজন, মাশরাফি বিন মর্তুজা। ওয়ান ডাইনে ব্যাট হাতে নেমে মাত্র ১৭ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪২ রানের ইনিংস খেলে আসল টি-২০’র বিনোদন দিলেন বাংলাদেশের তারকা এই পেসার! তার ব্যাটেই চিটাগং ভাইকিংসের দেয়া ১৭৭ রানের চ্যালেঞ্জকে মামুলি বানানোর চেষ্টায় মেতেছে রংপুর রাইডার্স।
ম্যাককালাম ফিরে যাবার পর ধীরে ধীরে উইকেটে এসে ক্রিস গেইলের সঙ্গে জুটি বাধেন মাশরাফি। তিনি ভালো ব্যাট করতে জানেন এটা সবারই জানা। ২০১৫ সালে ব্যাট হাতে হাফ সেঞ্চুরি করে একবার কুমিল্লাকে জিতিয়েছিলেন- এটিও অজানা নয়। তখন ব্যাটিং অর্ডারে ৭ নম্বর থেকে তিনি উঠে এসেছিলেন ৫ নম্বরে। কিন্তু এবার যে খোন তিন নম্বরের মতো কঠিন একটি পজিশনেই ব্যাট করতে নেমে যাবেন, তা তো ঘূর্ণাক্ষরেও কেউ কখনও ভাবেনি। প্রতিপক্ষের সব পরিকল্পনা ভÐুল করে দিয়ে মাশরাফি তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমেই রীতিমতো ঝড় তুললেন। ইনিংসের ১০ম ওভারের ৪র্থ বলে গিয়ে সানজামুল ইসলামের ¯েøা এবং লো বলে ব্যাট হাঁকাতে গিয়ে বোল্ড হয়ে গেলেন তিনি। আউট হওয়ার সময় তার স্ট্রাইকরেট ছিল ২৪৭.০৫, অথচ তখন ব্যাটিং দানব গেইলের স্ট্রাইকরেট ১৩২! আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন এ বছর। কেন অবসর নিতে হল, এমন ইনিংসের পর প্রশ্নটা আবারও তুললেন রংপুর অধিনায়ক।
ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি এবারের বিপিএলে প্রতি ম্যাচেই ভালো বোলিংও করছেন মাশরাফি। ৮ ম্যাচে মাত্র ৬.৪১ ইকোনমি রেটে উইকেট নিয়েছেন ৯টি। এবার ব্যাট হাতেও জ্বলে উঠলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক। ভাইকিংসের বিপক্ষে রংপুরের নাটকীয় জয়ে মাশরাফির ঝড়ো ব্যাটিংয়ের অবদানটি অনস্বিকার্য। অবশ্য মাশরাফি-পেরেরাদের মাঝে মিঠুনের ২৯ বলে ৪ চারে ৪৪ রানের ইনিংসটি দিয়েছে জয়েল শক্ত ভিত।
এর আগে আগের দিনই ৭ম ম্যাচে এসে জয়ের দেখা পাওয়া চিটাগং ভাইকিংস টস হেরে ৭ উইকেটে করে ১৭৬ রান। স্বাগতিকদের শুরু থেকেই বল হাতে চেপে ধরে রংপুর। ৫৬ রানের মধ্যে তিন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দিয়ে দারুণ শুরুর ইঙ্গিত দেয় পয়েন্ট টেবিলের পাঁচ নম্বর দলটি। তবে ৭৬ রানের জুটি গড়ে চিটাগংকে দাঁড় করান স্তিয়ান ভ্যান জিল ও সিকান্দার রাজা। জিম্বাবুয়ান ব্যাটসম্যান ২২ রানে আউট হলে ভাঙে এ শক্ত জুটি। শুক্রবার প্রতীক্ষিত জয়ে সিলেট সিক্সার্সের বিপক্ষে ৭৩ রানের জুটি গড়েছিলেন তারা দুজন। এদিনও ৪০ বলে তিন চার ও চার ছয়ে ৬৮ রান করে দলের বিপদে ভরসা হয়ে ওঠেন জিল। ২৬ বলে দ্বিতীয় সেরা ৩০ রান করেন সৌম্য সরকার। শেষদিকে ১৬ বলে ২৫ রান করে দলের স্কোর আরও শক্ত করেন নাজিবউল্লাহ জাদরান। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। রংপুরের পক্ষে লাসিথ মালিঙ্গা, থিসারা পেরেরা, রুবেল হোসেন, মাশরাফি মুর্তজা ও নাহিদুল ইসলাম একটি করে উইকেট নেন।
চিটাগং ভাইকিংস : ২০ ওভারে ১৭৬/৭ ( সৌম্য ৩০, জিল ৬৮, সিকান্দার ২২, নাজিবুল্লাহ ২৫; মালিঙ্গা ১/৩৭, মাশরাফি ১/২৪, নাহিদুল ঙ্ক, রুবেল ১/৩৯, পেরেরা ১/৩৫)।
রংপুর রাইডার্স : ২০ ওভারে ১৮০/৭ (ম্যাককালাম ১৫, গেইল ৩৩, মাশরাফি ৪২, মিঠুন ৪৪, পেরেরা ২৮*; আল-আমিন ১/২৯, তাসকিন ১/৩৮, সৌম্য ১/২৪, সানজামুল ১/২৩, তানবীর ১/১৪, রইস ১/১৩)।
ফল : রংপুর রাইডার্স ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মাশরাফি মর্তুজা (রংপুর)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন