শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

বড় ধাক্কায় বিধ্বস্ত বাংলাদেশ দল

প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা ব্যাঙ্গালুরু (ভারত) থেকে : গত পরশু অনুশীলনে প্রাণবন্ত বাংলাদেশ দলের চেহারার সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি গতকাল। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে অনুশীলনের এক ফাঁকে মিডিয়ার সামনে এসে যখন বললেন ফিজিও বায়েজিদুল ইসলামÑ ‘এই মুহূর্তে আমার হাতে কোন রোগী নেই।’ এর অর্থ বুঝতে আর দেরি হয়নি, সহজ সরল চুপচাপ থাকা অভ্যেস যার, সেই মুস্তাফিজুরের রসিকতাই বলে দিয়েছে খেলছেন পরের ম্যাচে তিনি। ফিজিও’র কথা আর মুস্তাফিজুরের অভিব্যাক্তির যোগফলে মিলে গেলে দুইয়ে দুইয়ে চার। মুস্তাফিজুর ফিরছেন, ফিরিয়েছেন হাসি দলের। নেটে অনুশীলন শেষে মাঠে ফিল্ডিং অনুশীলনের প্রাক্কালে সৌম্য’র চেন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে আছে অভিজ্ঞতা, ছোট মাঠে রানে ফিরতে হলে কেমন শট খেলতে হবে, সেই ধারণাটাও দিলেন মিডিয়ায়Ñ ‘এই মাঠে শট খেললে এমনিতেই বলগুলো উপরে উঠে আসে।’ গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই চেন্নাস্বামীতে সেঞ্চুরি এবং ৫ উইকেটে সুরেশ রায়না, ধাওয়ান, মানিস পান্ডেদের একাই হারিয়ে দিয়েছেন ৫০ ওভারের ম্যাচে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে নাসির। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার গ্যারান্টি পাননি সে দিন, তারপরও এমন লাকি গ্রাউন্ডের সেই সুখস্মৃতিটাও রোমন্থন করলেন হাসিমুখে। অথচ, তাসকিন, আরাফাত সানির বোলিং নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার সম্ভাবনা দেখার পরও গতকাল নাসিরের মুখে নেই কোন হাসি!
অনুশীলন করছেন ক্রিকেটাররা, তবে চেনা জানা প্রাণবন্ত, হাসি-খুশি বাংলাদেশ দলকে যে দেখা যায়নি গতকাল। যে যার মতো করছেন অনুশীলন। হাতুরুসিংহে নিশ্চুপ, কষ্ট চেপে হিথ স্ট্রিক, রুয়ান কালপাগেও করিয়েছেন রুটিন ওয়ার্ক। মিডিয়া খুঁজে ফিরেছে তাসকিনকে, প্রচÐ কষ্ট নিয়ে টিম হোটেলে থেকে বেরোনোর মতো মনোবল নেই এই ছেলেটির। একপাশে চেয়ার পেতে গোল হয়ে বসে অনুশীলনের ফাঁকে বিশ্রাম নিচ্ছেন যারা, তাদের মধ্যে আবিষ্কার করা গেলো আরাফাত সানিকে। সতীর্থদের চাঙ্গা রাখতে এসেছিলেন তিনি। কোলকাতায় বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া অস্ট্রেলিয়ান মনোবিদ ফিল জানসি ব্যাঙ্গালুরে দিনে তিনটি করে সেশনে ক্রিকেটার ক্লাস নিয়েছেন, ইতিবাচক ভাবনাগুলো ভাবতে বলেছেন। সেই মনোবিদকেও যায়নি দেখা গতকাল। ভাঙ্গা ঘর মেরামতে কিইবা করার আছে তার?
গত পরশু বিকেলে বিসিবি’র ফোন পেয়ে রাতের ফ্লাইট ধরে ব্যাঙ্গালুরুতে পা রেখে সোজা চলে এসেছেন অনুশীলনে। নির্ঘুম রাত কাটানোয় চোখে-মুখে তার ছাপ স্পষ্ট শুভাগত হোম ও সাকলাইন সজীবের। একটি নেটে দু’জন একাকী অনুশীলন করেছেন। সাকলাইন বল করে গেছেন শুভাগত করেছেন করেছেন। অন্য নেটগুলোতে মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, নাসির হোসেন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকাররা ব্যাটিং করেছেন। বাংলাদেশ দলকে সারাক্ষণ আনন্দে মাতিয়ে রাখেন তাসকিন, তাকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ পুরো দল। সতীর্থদের চাঙ্গা রাখতে সবার সাথে খুঁনসুঁটি করা অভ্যেস অধিনায়ক মাশরাফির, তাসকিন, আরাফাত সানির উপর অন্যায় নিষেধাজ্ঞায় সবচেয়ে বেশি ব্যাথিত এই অধিনায়ক।
টি-২০’র বিশ্বকাপের মাঝপথে দুই বোলারের নিষেধাজ্ঞা যে কতো বড় ধাক্কা দিয়েছে বাংলাদেশ দলকে, তা চাপা রাখতে পারেননি মাশরাফিÑ ‘এক সঙ্গে ২ বোলারকে চলে যেতে হচ্ছে, অবশ্যই আমাদের দলের জন্য এটা বড় এক ধাক্কা। এই ঘটনায় আমরা সবাই ভেঙ্গে পড়েছি। টিমের অবস্থা স্বাভাবিকভাবেই আপনাদের বুঝতে পারার কথা। ঘরের দুইজন ছেলের যদি সমস্যা হয়, আপনি যে কোন কাজই ভালো ভাবে করতে পারবেন না। সেই উদ্যমটা আর পাবেন না। আমাদের কাছে জিনিসটা এখন ওই রকম। আমাদের মানসিক অবস্থা এখন ওইরকম নেই। সবাই দেখলেই বুঝতে পারবেন।’
এর আগেও বাংলাদেশ দলের উপর দিয়ে বয়ে গেছে ঝড়। ২০০৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজকে সামনে রেখে আইসিএলএ টাকার মোহে এক সঙ্গে জাতীয় দলের ৭ ক্রিকেটার দল ছুট হয়েছেন। তারপরও হাতে ক’দিন সময় পাওয়ায় সে যাত্রায় সামাল দিতে পেরেছে বাংলাদেশ দল। কিন্তু সুপার টেনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অবতীর্ণ হওয়ার আগে যে দল পুনর্গঠনে সময়ই পেলো না মাশরাফিরা। তাই দল পুনর্গঠনে ঢাকা থেকে শুভাগতহোম এবং সাকলায়েন সজীবকে উড়িয়ে এনেও ধাক্কা সামাল দেয়াটা কঠিন মনে করছেন মাশরাফিÑ ‘এমন একটা সময় ধাক্কা খেলাম যে আমাদের জন্য ম্যানেজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দুইজন খেলোয়াড়কে আমরা দুইদিন আগে পেলেও ম্যানেজ করে ফেলতে পারতাম। কিন্তু এমন একটা সময়ে খরব পেয়ে দুইজনকে আনলাম, যারা বাধ্য হয়ে সকালে ফ্লাইটে নেমে এখন অনুশীলন করতে এসেছে।’ ইনফর্ম ২ বোলারকে বাইরে রেখে কম্বিনেশন ভেঙ্গে খেলতে হবে, এটাই যে মাইলস্টোন ম্যাচে মাশরাফির মাথা এলোমেলো করে দিয়েছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন