বিশেষ সংবাদদাতা : ওয়ানডে’র হাফ সেঞ্চুরি ম্যাচে পারেনি বাংলাদেশ হাসতে, টেস্টের হাফ সেঞ্চুরি ম্যাচের পরিনতিও একই। সিরিজের প্রথম ২ ম্যাচের ২টিতে জয়ে খুলনায় বাংলাদেশের টি-২০’র হাফ সেঞ্চুরি ম্যাচে যে উৎসবের মঞ্চ তৈরি হওয়ার কথা, মাইলস্টোনের ম্যাচে সেখানে হতাশ করেছে বাংলাদেশ দল। পরীক্ষা-নীরিক্ষার ম্যাচে ৩১ রানে হেরে জিম্বাবুয়েকে সিরিজে ফেরার সুযোগ তৈরি করে দেয়ায় হাতুরুসিংহের কৌশলটা হয়েছে বুমেরাং। ওই জয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া জিম্বাবুয়ে শেষ ম্যাচে ১৮ রানে জিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে উপর্যুপরি তৃতীয় সিরিজ ড্র’র আনন্দে উঠল নেচে ! ৯ বছর ৫৫ দিন আগে বাংলাদেশের সঙ্গে নিজেদেরও টি-২০তে অভিষেক যে ভেন্যুতে, সেই খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের হাফ সেঞ্চুরির ম্যাচে স্বাগতিকদের করেছে হতাশ জিম্বাবুয়ে। অভিষেক ম্যাচে ৪৩ রানে জয়ের অতীত থেকেও যে প্রেরণা পেলো না বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মাইলস্টোন ম্যাচে উল্টো বদলাটা নিল জিম্বাবুয়ে।আফগানিস্তানের কাছে ০-২ এ বিপর্যস্ত দলটিতে আতিথ্য দিয়ে আসন্ন এশিয়া কাপ এবং টি-২০ বিশ্বকাপের অনুশীলনে বরং আত্মবিশ্বাসে বড় ধরনের ধাক্কা খেতে হলো বাংলাদেশকে।
মুস্তাফিজুর দলে না থাকলে বোলিং শক্তি কতোটা নাজুক হতে পারে, সিরিজের শেষ ২টি ম্যাচে তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে বাংলাদেশ দল। মুশফিকুরের ইনজুরিও সিরিজের শেষ ২ ম্যাচে যথেস্ট ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে। ইনজুরি থেকে ফিরে প্রত্যাবর্তন ম্যাচে তাসকিন দিতে পারেননি আস্থার প্রতিদান। ছক্কার শটে মাসাকাদজা জানিয়েছেন এই পেসারকে স্বাগত। ওয়ালারকে ইয়র্কাারে বোল্ড আউটে ফিরিয়েছেন ঠিকই, তবে শুরুতে জিম্বাবুয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেননি। বরং নিজের প্রথম ওভারে ১৪ রান খরচা তার। শুধু তাই নয়, রনি’র বলে শর্ট ফাইন লেগে মুতুম্বানির ক্যাচটি ফেলে দিয়েছেন তাসকিন। জানেন, ১০ রানের মাথায় বেঁচে যাওয়া সেই মুতুম্বানি ইনিংস টেনে নিয়েছেন ৩২ পর্যন্ত। মাসাকাদজার সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৫৬ বলে ৮০ রানে রেখেছেন অবদান। দলের সঙ্গে ঘুরে,অনুশীলন করে আরাফাত সানি নিজেও খেলার সুযোগ কল্পনা করেননি, বোর্ড সভাপতির হস্তক্ষেপে দলে এসে নিজের করুন চিত্রটাই করেছেন প্রকাশ এই বাঁ হাতি স্পিনার (৩-০-২৭-০)। দলের মধ্যে অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের ৫০তম ম্যাচে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে উইকেট শিকারের হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন ঠিকই, তবে দ্বিতীয় স্পেলে খেয়েছেন মাসাকাদজার হাতে প্রচÐ মার (১৪তম ওভারে ২০ রান খরচা)। ডেথ বলের বোলার চরিত্রটা মেলে ধরলেও প্রথম স্পেলে কিন্তু হতাশ করেছেন আবু হায়দার রনি।
পাল্লা দিয়ে খরচা করেছেন রান মাশরাফি,সাকিব। ওভারপ্রতি মাশরাফির খরচা ১০.০০, সেখানে সাকিবের খরচা ৮.৭৫। জিম্বাবুয়ের ইনিংসে ৪২টি বল ডট করেও প্রশংসা পাবে না বাংলাদেশ বোলাররা। কারন, ১৮০/৪ স্কোরে ৯ ছক্কা আর ১৩টি চার এ শুধু যোগ করেছে জিম্বাবুয়ে ১০৬ রান। সিরিজের প্রথম ম্যাচের মতো বাংলাদেশের ডট বলের সংখ্যা শেষ ম্যাচেও ৪৫টি !
এই ম্যাচে বাংলাদেশ ডুবেছে বাধ্যতামূলক ব্যাটিং পাওয়ার প্লে’র প্রথম ৬ ওভারে। জিম্বাবুয়ের স্কোর যে পর্বে ৬২/১, সেখানে বাংলাদেশকে ৪৪ রানে হারাতে হয়েছে ৫ উইকেট! সন্তান সম্ভাবা স্ত্রীকে ব্যাংককের হাসপাতালে ভর্তি করতে ব্যাকূল হয়ে ওঠা তামীম নিজেই চেয়েছেন ছুটি, সেই তামীমকে তৃতীয় ম্যাচে সাইড লাইনে রেখে কেন চতুর্থ ম্যাচে নামিয়ে দেয়া হলো মাঠে? মাদজিবাকে ফ্লিক করতে যেয়ে বোল্ড আউটে টীম ম্যানেজমেন্টের জোরাজুরিতে খেলতে বাধ্য হওয়ার কথাই প্রকারান্তরে জানিয়ে দিয়েছেন এই বাঁ হাতি ওপেনার (১)। তার আগে সৌম্য মাদজিবাকে লং অনের উপর দিয়ে ছক্কা মেরে সতর্ক হননি, পরের বলে হাফ হার্টেড খেলতে যেয়ে কট বিহাইন্ড (১১)। চিসোরোকে লং অফের উপর দিয়ে গ্যাপ শট নিতে চেয়ে বোকা বনে গেছেন সাব্বির রহমান রুম্মান (১)। লেগ স্ট্যাম্প ছেড়ে খেলতে যেয়ে সাকিব বোল্ড আউটে বাংলাদেশ দলকে ফেলে দিয়েছেন অথৈ সাগরে (১৭/৪)। সেখান থেকে জংউইকে এক ওভারে ২ চার ১ ছক্কায় শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম মাতানো ইমরুল ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে যেয়ে থেমেছেন ১৮ রানে। ৬ষ্ঠ জুটিতে সোহানকে নিয়ে ৫৭ রানের জুটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাহামুদুল্লাহ। সোহান ১৫ রানে ফিরে যাওয়ায় হারের শংকা তীব্র হতে থাকা বাংলাদেশ দলকে স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন মাহামুদুল্লাহ-মাশরাফি জুটি। তবে ৩৩ বলে টি-২০ ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় ফিফটি উদযাপনের ম্যাচে মাহামুদুল্লাহ থেমেছেন চিসোরের মিডল এন্ড লেগ স্ট্যাম্পে পিচিং ডেলিভারীতে ৫৪ রানে (৪১ বলে ৫ চার ২ ছক্কা)। ১৮ বলে ৪২ রানের টার্গেট কঠিন মনে হলেও মাশরাফি আছেন বলেই স্বপ্নটা ছিল, কিন্তু জংউইকে লং অফের উপর দিয়ে খেলতে যেয়ে তার ক্যাচের সঙ্গে সঙ্গেই (১২ বলে ১ চার ১ ছক্কায় ২২) স্টেডিয়াম হয়েছে স্তব্ধ।
চার ম্যাচের টি-২০ সিরিজে ব্যবধান গড়েছে জিম্বাবুয়ে ওপেনার মাসাকাদজা। বাংলাদেশের সিনিয়ররা যেখানে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন, সেখানে টি-২০ ক্রিকেটে গতকাল নিজের এবং দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ইনিংসটা খেলেছেন তিনি (৮ চার ৫ ছক্কায় ৯৩ নট আউট)। আশ্চর্য হলেও সত্য কোন বাংলাদেশী নয়, খুলনায় ৯ বছর ৫৫ দিনে হয়ে যাওয়া ৫টি টি-২০তে সর্বাধিক রান সংগ্রাহক এই জিম্বাবুইয়ান (২৫৭ রান, গড় ৬৪.২৫, স্ট্রাইক রেট ১৪৫.১৯)! টি-২০ ক্যারিয়ারের দশম ফিফটি উদযপনের ম্যাচে বাংলাদেশকে এতোটাই হতভম্ব করেছেন এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন