বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে সরকার কু-রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সেই দিন শেষ হয়ে গেছে, জনগণকে আর ধোঁকা দিয়ে কেউ পার পাবে না। আওয়ামী লীগের সামনে একটাই পথ নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। অন্যথা তারা পলায়নেরও রাস্তা খোঁজে পাবে না। কারণ দেশের জনগণ আর একতরফা নির্বাচন করতে দেবে না। গতকাল (শনিবার) জাতীয় প্রেসক্লাবে কল্যাণ পার্টির দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও তারেক রহমানের সম্পদ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এই খবর পাওয়ার পরে আমরা তন্ন তন্ন করে খুঁজছি, সব জায়গায়। আমরা জিজ্ঞাসা করেছি রাষ্ট্রদূতদের, এর কোনো ভিত্তি আছে কি না? কোনো ভিত্তি নেই, কোনো সত্যতা নেই। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, এই কু-রাজনীতি করে কি আনতে চান? আপনারা আবারও ২০১৪ সালের মতোই নির্বাচন করতে চান। এজন্য ২০ দলীয় জোট, বিএনপিকে দূরে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, তাই তো শুরু করেছেন।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আর কখনোই ২০১৪ এর মতো নির্বাচন হতে দেবে না। বাংলাদেশে মানুষকে আন্ডার এস্টিমেট করবেন না। সব কিছু যে সহ্য করে নেবে, সব কিছু যে মেনে নেবে- এটা মনে করবেন না।
তিনি বলেন, বলেন, যে সংসদে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয় সে সংসদ দেশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে না। যে আইন তৈরি করা হয়, সংবিধান যেভাবে পরিবর্তন করা হয় সেটা জনগণের জন্য আইন কিংবা সংবিধান নয়। এটাই বাস্তবতা। বিএনপি নেতা বলেন, ক্ষমতায় যেতে যারা বাধা দেবে ও দিচ্ছে তাদেরকে গুম করছে আওয়ামী লীগ সরকার। শুধু তাই নয়, এরা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে মানুষকে বোকা বানিয়ে অধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চায়। মূলত আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন তাদের আসল চেহারায় ফিরে আসে। সেই চেহারা হচ্ছে ধ্বংসাত্মক ও ফ্যাসিস্ট। মনে রাখতে হবে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের যে লড়াই তা অসম। তবে আমরা এখন নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্দোলন করে যাচ্ছি।
কল্যাণ পার্টির মহাসচিব নিখোঁজ এম এম আমিনুর রহমানের সন্ধানও দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, একটি পার্টির সাধারণ সম্পাদককে (আমিনুর রহমান) পর্যন্ত গুম হয়ে যেতে হল, কোনো খবর নেই আজকে ৯৭ দিন। একজন সাবেক রাষ্ট্রদূতকে গাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সংসদ সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলীসহ আমাদের নেতা ইলিয়াস আলী, কমিশনার চৌধুরী আলমসহ অসংখ্যক মানুষকে গুম করা হয়েছে। কোথায় যাবেন? এরা এভাবে ভিন্নমত যে পোষণ করবে, তাদের মতের বাইরে যে যাবে, এভাবে তাদেরকে তারা (সরকার) গুম করে দেবে। সেই দলটিকে আমরা কি গণতান্ত্রিক দল বলতে পারি? এই দলটি (আওয়ামী লীগ) গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে অতীতে। যখনই তারা ক্ষমতায় আসে, তাদের আসল ফ্যাসিস্ট চেহারাটা পরিষ্কার হয়ে ফুটে উঠে।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, সরকার তার সকল ক্ষমতা নিয়ে নিয়ে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটকে নিষ্ক্রিয়, নিস্তেজ, স্তব্ধ করার জন্যে সকল প্রকার ষড়যন্ত্রমূলক ও অষড়যন্ত্রমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমরা যদি সাবধান না থাকি, তাদের যে কোনোরকম দুরভিসন্ধিমূলক পদক্ষেপের মধ্যে পড়ে আমরা বিপথগামী হতে পারি। আমার আবেদন থাকবে, তাদের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে আমরা পা দেব না।
সভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, নাকে খত দিয়ে আসতে হবে (বিএনপিকে)। এটা কি উনার বক্তব্য, না উনি ভারতের দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে পাওয়া নির্দেশনা? আওয়ামী লীগ কি নিজেদের শক্তিতে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, না ভারতীয়রা কলকাঠি নাড়ছেন? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথার ফাঁদে পড়ে আন্দোলন ব্যাহত না করতে বিএনপিকে পরামর্শ দিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিএনপির জন্য আন্দোলন একমাত্র পথ। অথচ প্রধানমন্ত্রী কথার জালে বিএনপিকে দিনে নয়াপল্টন এবং রাতে গুলশান অফিসে আটকে রেখেছে। বিএনপি মহাসচিবের উদ্দেশে তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল আপনি বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিবেন। প্রশ্নটা হচ্ছে আপনি কোন বিচারকের কাছে বিচার চাইবেন, তাদের কি সেই বিচার বিভাগ ও বিবেক আছে। যারা বিচারের আগেই ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। জাফরুল্লাহ বলেন, সবাই আজ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ক্ষুব্ধ তবে আমি ততোটা ক্ষুব্ধ নই। কারণ ইতোমধ্যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় উনি উনার পিতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী আপনি বলেছেন প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন আর হবে না, তাহলে ভয়টা কোথায়?
কল্যাণ পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নুরুল কবির ভুঁইয়া পিন্টুর পরিচালনায় আলোচনা সভায় জাগপার সভাপতি রেহানা প্রধান, এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্তজা, ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, কল্যাণ পার্টির নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ, কাহির মাহমুদ, আজাদ মাহবুব, শাহজাদা আলম, মো. ইলিয়াস হোসেন, শাহিদুর রহমান তামান্না, নজরুল ইসলাম, বনি আমিন বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফোরকান ইবরাহিম, বিএনপির আখতারুজ্জামান, সারোয়ার হোসেন, মিজানুর রহমান, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন