আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি করে সরকার বিদেশে সম্পদ গড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, দেখুন সরকার বিদ্যুৎ চুক্তি করেছে ভারতের আদানি কোম্পানির সঙ্গে। সেই বিদ্যুৎ চুক্তি সবাই বলছেন, দেশি-বিদেশি সবাই যে, এটা অপ্রয়োজনীয় চুক্তি, অসম চুক্তি। যে কারণে বাংলাদেশকে শুধু পয়সাই দিতে হবে, বাংলাদেশ বেশি লাভ পাবে না।
এই ধরনের চুক্তিগুলোর মধ্য দিয়ে তারা সম্পদ লুট করছে, বিদেশে সম্পদ গড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার যুবদলের নেতাকর্মীদের নিয়ে শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অপর্ণনের পর তিনি সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার আজকে নয়, তারা ক্ষমতায় আসার পর থেকে অর্থাৎ ১৪ বা ১৫ বছর থেকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এই রাষ্ট্রের সব সম্পদ ভোগ করার জন্য একের পর এক বিভিন্ন রকম অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে টাকা ব্যয় করে অর্থ লুট করছে, পাচার করছে এবং বিদেশে সম্পদ গড়ে তুলেছে। এই অবস্থার উত্তরণে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। এই আন্দোলনে আমাদের ১৭ জন নেতাকর্মীকে রাজপথে হত্যা করেছে। সেই কারণে বলছি, আন্দোলন করেই এই গণবিরোধী ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।
জনদুর্ভোগের মধ্যেও সরকার উৎসব শুরু করছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের যেহেতু জনগণের প্রতি দায়-দায়িত্ব নেই, সেই কারণে তারা এখন উৎসব শুরু করেছে। তারা আবদুল হামিদ সাহেবের (প্রেসিডেন্ট) এলাকাতে উৎসব অনুষ্ঠান করছে। তারা তো এটা স্বীকারই করতে চায় না দেশে একটা অর্থনৈতিক সংকট চলছে, দেশে মূল্যস্ফীতি চরম আকার ধারণ করেছে। দেশের সাধারণ মানুষ আজকে চাল কিনতে পারছে না। আমি আবার শুনেছি যেটা ভয়ংকর মারাত্মক যে, ওএমএসের কার্যক্রম তারা বন্ধ করে দেবে এবং কার্ডের মাধ্যমে তারা আবার চাল বিক্রি করবে বা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করবে। কার্ডের মাধ্যমে নিত্যপণ্য বিক্রিতে আরেকটা দুর্নীতির জায়গা খুলবে।
এদিকে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি-পরিবহন-খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতিতে জনগনের ত্রাহি অবস্থা, জনজীবন বিপর্যস্ত। সামষ্টিক অর্থনীতির প্রায় সবকয়টি সূচকই আরো দূর্বল ও প্রকট হয়ে উঠেছে। বর্তমান বাংলাদেশে চারিদিকে শুধু হাহাকার, নেই আর নেই। সমগ্র দেশশটিই যেনো এক ‘নেই’ এর রাজ্যে পরিণত হয়েছে। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের যাতাকলে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। একথায় দেশের অর্থনীতি এক মহাসংকটে নিমজ্জিত।
মির্জা ফখরুল বলেন, গত আগস্টে সরকারি হিসেবেই মূল্যস্ফীতি দেখানো হয় ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। বর্তমান মূল্যস্ফীতি কমছে দেখানো হলেও খাদ্যবর্হিভূত মূল্যস্ফীতি এখনো প্রায় দুই অঙ্কের কাছাকাছি রয়েছে। জানুয়ারি মাসে এই হার ছিলো ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। চাল-ডাল-ডিম এর আকাশছোঁয়া এমনকি ব্রয়লার মুরগীর দাম দুই‘শ টাকার উপরে। অথচ সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরো(বিবিএস) সাধারণ মূল্যস্ফীতি দেখাচ্ছে ৮ মধমকি ৫৭ শতাংশ আর খাদ্য মূলস্ফীতি ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ যার সঠিকতা নিয়ে খোদ অর্থনীতিবিদরাই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বারবার বৃদ্ধি, দেশের রিজার্ভ তলানি নেমে আসা, নজিরবিহীন ডলার সংকট, ডলারের বিনিময়ে টাকার অভূতপূর্ব অবমূল্যায়ন, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে অব্যবস্থাপনা, অপরিনামদর্শী ভ্রান্তনীতি, লাগামহীন দুর্নীতি, বিদেশে অর্থ পাচার, ঋণ খেলাপি বৃদ্ধি পাওয়া, ঋণ প্রাপ্তির অপর্যাপ্ততা, অর্থনৈতিক আয় বৈষম্য, সুশাসনের অভাব এবং গণতন্ত্র না থাকার কারণে দেশে ‘অর্থনৈতিক নৈরাজ্য সৃষ্টি’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার তাদের চিরাচরিত ডেনিয়েল সিনড্রোম থেকে বেরিয়ে এসে আইএমএফের কাছে পাঠানো পত্রে বিরাজমান অর্থনৈতিক দুরযোগের কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কঠিন শর্তে আইএমএফ এর কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে। বলতে গেলে তারা এখন ব্যাংক থেকে ধার করে এবং আইএমএফের ঋণের ওপর ভর করেই চলছে।
দেশের অর্থনৈতিক সংকটের সরকার কেনো স্বীকার করছে না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের না দেখার প্রধান কারণ হচ্ছে তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়, তারা ভোট করে নির্বাচিত হয়ে আসেনি। যদি নির্বাচিত হয়ে আসতো তাহলে তাকে পার্লামেন্টে জবাবদিহি করতে হতো। জনগনের সামনে জবাবদিহি করতে হতো। এখানে তারা (সরকার) সবসময় একটা মিথ্যা প্রচারণা করে, ভয়-ভীতি-ত্রাস সৃষ্টি করে, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে তারা সার্বক্ষনিকভাবে একটি মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে গোয়েবেসের মতো। যারা ফ্যাসিস্ট হয়, যারা ডিক্টেটর হয় তাদের জন্য এই প্রচারণা জরুরী হয়-এটা মিথ্যা ধারণার মধ্যে জনগনকে রাখতে চায়।
তিনি বলেন, বর্তমান গোটা ব্যবস্থায় লাভবান হচ্ছে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ যারা এই সরকারের সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত তারা ব্যবসা-বানিজ্যে বিভিন্ন জায়গায় লাভবান হচ্ছে এবং সো-কল্ড পলিটিশিয়ানস যারা এই সরকারের সঙ্গে জড়িত তারা লাভবান হচ্ছে। সাধারণ মানুষ. খেটে খাওয়া মানুষ তারা সেই ভুক্তভোগী থেকেই যাচ্ছে।
সরকার সরে না গেলে সংকট যাবে না:
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকারকে সরে যেতে হবে। এই সরকার সরে গেলেই দেশে যে ট্রাষ্ট- এটা সৃষ্টি হবে। তখন এইগুলো সমস্যা সমাধানের জন্য যোগ্য যারা ব্যক্তি কাজ করতে পারেন তাদের নিয়ে এসে সমস্যা সমাধান অত্যন্ত দ্রুত করা সম্ভব হবে। সরকার সরে যাওয়া ছাড়া এটা সম্ভব হবে না। এই সরকারকে রেখে এটা করা যাবে না। কারণ এরা এতো বেশি দুর্নীতি পরায়ন হয়ে যাবে, এরা সেন্ট্রাল ব্যাংককে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে, এরা পুরো ইকোনমি সিষ্টেম, মনিটরি সিষ্টেম সব কিছু নষ্ট করে ফেলেছে।ব্যাংকগুলো ভয়াবহভাবে ব্র্যাংকক্রাফট হয়ে যাচ্ছে প্রায়। ভুল ধারনা, ভ্রান্ত ধারণা মধ্যে সরকার েেদ্শর অর্থনীতিকে সচল রাখার চেষ্টা করছে।হ্ইুজ ইজ নট ট্রু। অনলি ওয়ে এই সরকারে চলে যাওয়া।
‘আইএমএফ ঋণ প্রসঙ্গে’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে দেশের অবস্থা আজ এমন শোচনীয় অবস্থায় যেতো না। অনেকে মনে করেন, আইএমএফের ঋণে সংকট কাটবে না। এই ঋণ বরং আলিগার্কদের পেটে যাবে, কষ্ট বাড়বে সাধারণ জনগণের। ব্যাংকি ও রাজস্ব খাতের সংস্কার এবং নীতি সংস্কার করে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার না করলে, শক্তভাবে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার রোধে ব্যর্থ হলে যে সূত্র হতেই ঋণের টাকা আসুন নানা কৌশললে শেষ পর্যন্ত অলিগার্করাই বরং তা লুন্ঠন করে দেবে। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য আর্থিক খাতে সংস্কার, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার উন্নতি, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালীকরণ, কর শুল্ক, আর্থিক খাত, ব্যাংকিং সেক্টার, বাজেট ব্যবস্থাপনা, বানিজ্য নীতির সংস্কার করা আবশ্যক বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, এখন প্রয়োজন দুর্নীতিমুক্ত আইনের শাসন এবং প্রকৃত অর্থেই জনগনের ভোটে নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকার। বিএনপি আশা করে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও আর্থিকথাতে কার্যকর সংস্কার সাধণে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্র্রতিষ্ঠার জন্য আইএমএফ বিশেষ সহযোগিতার হাত বাড়াবে। আমরা সরকার পরিবর্তনে ১০ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করছিৃ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সমগ্র জনগণ নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে দেশনায়ক তারেক রহমানের ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ২৭ দফা বাস্তবায়নে কাক্সিক্ষত জাতীয় সরকার গঠন করবে। আমরা বিশ্বাস করি, বিএনপির নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনে বিজয়ের মাধ্যমে আগামী দিনে দেশের চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট দুরীভূত করা সম্ভব হবে, ইনশাল্লাহ। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ ও ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন