জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ট্রাম্পের স্বীকৃতি দেয়া বিস্ময়কর কিছু নয় শুধু তাদের কাছে ছাড়া যারা রাজনৈতিক যুক্তিহীন বা অপকর্মের সহযোগী এবং যা ঘটেছে তাতে তারা খুশি। ট্রাম্পকে এ ধরনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হুুঁশিয়ার করে দিয়ে কোনো বিবৃতির ব্যবহার নেই, যে পদক্ষেপ এ অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থের জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনবে। আরব নেতারা তােেদর জনগণের কাছে মুখরক্ষার জন্য দায়সারা নিন্দা করা ছাড়া তাকে থামানোর জন্য কিছু করবেন না এটা না বুঝলে ট্রাম্প এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার সাহস করতেন না। ট্রাম্প যা করেছেন তার জন্য আমরা তাকে অভিযুক্ত করতে পারি না কিংবা অথবা নজিরবিহীন সাফল্য লাভের কারণে আনন্দে মত্ত ইসরাইলকেও দায়ী করতে পারি না। আরব নেতারা সরকারী ভাবে নিশ্চুপ থাকবেন এ নিশ্চয়তা পেয়ে তারা কঠোর পরিশ্রম করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট যা করেছেন তা তার নির্বাচনী অঙ্গীকার রক্ষার জন্যই করেছেন যে অঙ্গীকার তিনি করেছিলেন নির্দিষ্ট ভাবে এক বছর আগে এক ইহুদি ধর্মীয় অধিকার গ্রæপের কাছে। ট্রাম্প ভালোভাবেই জানতেন যে তিনি এ চক্রগেুলোর কাছে তার রাজনৈতিক ও নির্বাচনী বিশ^াসযোগ্যতা বৃদ্ধি করেছেন। গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে আমেরিকান ইসরাইল পাবলিক এফেয়ারস কমিটির ( এআইপিএসি) বার্ষিক সভায় ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান ও মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের অঙ্গীকার করেন। তিনি প্রভাবশালী ইসরাইলপন্থী লবির নির্বাচনী সমর্থন পাওয়ার জন্যই তা করেছিলেন। এ পদক্ষেপ নিয়ে তিনি ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে তার একটি নির্বাচনী ওয়াদা রক্ষা করলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার এ বলিষ্ঠতা যদি তিনি ইমপিচমেন্টের সম্মুখীন না হন তাহলে আগাম নির্বাচনে তার জন্য একটি ভালো অবস্থান তৈরি করবে।
আমরা আস্থার সাথে বলতে পারি যে এ পদক্ষেপ অনিবার্য ছিল। কারণ ১৯৯৫ সালে মার্কিন কংগ্রেস জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তথাকথিত শান্তি প্রক্রিয়া চলার মধ্যে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু তখন থেকে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টই আলোচনা প্রক্রিয়া ও এ অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থের উপর এর ফলাফলের কথা ভেবে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেননি।
জেরুজালেম বিষয়ে ট্রাম্পকে রিয়াদ ও কায়রো সবুজ সংকেত দেয়
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের মত, মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরে দু’ বছর লাগতে পারে। ট্রাম্প মার্কিন স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত সহ প্রতিক্রিয়ার কথা বিবেচনায় না এনেই এ সিদ্ধান্ত নেন। কয়েকদিন আগে নিউইয়র্ক টাইমস রিপোর্ট করে যে আরব দেশগুলো ও মুসলিম নেতাদের সমর্থন নিশ্চিত করেই তিনি এ পদক্ষেপ গ্রহণে অগ্রসর হন। তিনি নিশ্চিতই পানি পরীক্ষা করেন। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া এ বিষয়ে এক ধরনের চুক্তিরও ্ইঙ্গিত দেয়। কেউ আশা করে না যে এই বোকা নেতারা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কিছু বলবেন বা তা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করবেন। কারণ, ওয়াশিংটনের সাথে তাদের নিজস্ব হিসাব ও সংযোগের কারণে ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত নেয়ার সাথে তারা জড়িত ছিলেন। এ অবস্থায় কেউ কেউ প্রকাশ্যে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের নিন্দা করলেও আসলে তারা তা সমর্থন করেন। এ কারণেই ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতি দিয়েছেন।
কিছু আরব নেতা তাদের দুর্বল ও দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থানের কারণে আমাদের হতাশ করেননি, বিশেষ করে সউদী আরব ও মিসরের মত বড় দেশগুলো যারা নতুন ধরনের ব্যর্থতা ও হতাশায় নিমজ্জিত। যারা ট্রাম্পের নিন্দা করেননি তাদের কাছ থেকে যদিও খারাপ প্রতিক্রিয়া এসেছে এভাবে যে তারা হুঁশিয়ার করে বলেছেন সহিংসতাকে যৌক্তিক করতে উগ্রপন্থীরা পরিস্থিতিকে ব্যবহার করতে পারে। আরব লীগের সভায় মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শুকরি এ হুঁশিয়ারি দেন।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের চেয়ে যাদি কোনো কিছু খারাপ হয় সে হচ্ছে আরব বুদ্ধিজীবীদের অনৈক্য যারা ট্রাম্পের জেরুজালেম সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করার পরিবর্তে আসলে ফিলিস্তিনিদেরই সমালেচনা করেছেন ও ঘটনার জন্য তাদেরই দায়ী করেছেন। ফিলিস্তিনিরা আত্মসমর্পণ করেছে ও ইসরাইলিদের কাছে তাদের ভ‚মি বিক্রি করেছে বলে তাদের দায়ী করা হবে বানোয়াট কথার উপর ভিত্তি করে যেমনটি একটি টুইটে বলেছেন একজন বিশিষ্ট সউদী বুদ্ধিজীবী। আরেকজন লেখক সুস্পষ্টভাবে জেরুজালেমকে হারানোর জন্য ফিলিস্তিন মুক্তি আন্দোলন (পিএলও)-কে অভিযুক্ত করেছেন যা সত্যের অপলাপ ছাড়া কিছু নয়।
এ সব কিছু এটাই বোঝায় যে ফিলিস্তিনি স্বার্থের একমাত্র খাঁটি প্রবক্তা হচ্ছে জনগণ যারা এ অঞ্চলের গণচত্বরগুলোতে সমবেত হয়ে প্রতিবাদে গর্জে উঠছে যা ট্রাম্প কিংবা তার আরব অনুগত দাসদের কেউই আশা করেননি। যাহোক আমরা এমন একটি ঘটনায় আরব ব্যর্থতার সম্মুখীন হলাম যা শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই নয়, সারাবিশে^ই অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত ও বৈধ বিষয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন