সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাহিত্য

ইতিহাস ঐতিহ্যে বিক্রমপুর নতুন ইতিহাসের সংযোজন

অনু ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইতিহাস কথা বলে ওঠে। এই কথার সত্যতা হয়তো আমরা সকলেই কমবেশি অনুধাবন করে থাকি। যে কোন দেশ, জাতি বা অঞ্চলের জন্যেই ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সেদিক বিবেচনা করলে তেমনি ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে ইতিহাস গবেষক গোলাম আশরাফ খান উজ্জ্বল এর একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫- এ। গ্রন্থটির নাম ইতিহাস ঐতিহ্যে বিক্রমপুর। যা বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জের জন্যে আরেকটি নতুন ইতিহাসের সংযোজন। এই গ্রন্থটিতে লেখক তার নিজের জন্মভূমি বিক্রমপুর তথা বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করেছেন। লেখক বইটিতে বিক্রমপুর যে প্রাচীন বাংলার একটি রাজধানী ছিলো তার প্রেক্ষাপট এবং বিক্রমপুর রাজধানীটি কোন কোন অঞ্চল নিয়ে গঠিত ছিলো তাছাড়া এই অঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন আমলে যে সকল রাজাদের ধারা পরিচালিত হয়েছে ও বিক্রমপুর রাজধানীটি কোথায় এবং এই রাজধানীর বিক্রমপুর নামটি কিভাবে উৎপত্তি ঘটেছিলো তার কারণসমূহ চিহিৃত করার চেষ্টা করেছেন।। তিনি বিক্রমপুর শাসনমালা নিয়ে লেখাটিতে সেন বংশের রাজা থেকে শুরু করে অন্য যে সকল রাজাদের আগমন ঘটেছিলো বিভিন্ন আমলে এবং সর্বশেষ রাজা কেদার রায়ের পরাজিত হবার ঘটনাক্রমের মধ্য দিয়ে কিভাবে মুঘল আমলের উত্থান তার ইতিহাস উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া সেই সময়কার শাসন আমলে যে সকল তা¤্রলিপি, মূদ্রালিপি থেকে চিহিৃত করা গেছে যে, বিক্রমপুরই ছিলো প্রাচীন বাংলার রাজধানী। সেই সকল লিপিগুলো সম্পর্কে অবগত করার চেষ্টা করেছেন। এই প্রাচীন রাজধানীর বিভিন্ন নগরী বা স্থাপত্যগুলো কিভাবে হারিয়ে গেছে বা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে তা নিয়েও বিশদ আলোচনা করেছেন। তাছাড়া প্রাচীন নগরী বিক্রমপুরের নামকরা মহারাজা বল্লালসেনের রাজবাড়িটি কোথায় ছিলো তা নির্ধারণ করেছেন এবং সে সম্পর্কে বেশকিছু তথ্য প্রদান করেছেন। বল্লালসেন প্রার্থনার উপাসক হিসেবে যে অর্ধনারীশ্বর মূর্তিটির পুজো দিতেন সেই মূর্তিটি কোথায়, কিভাবে পরে আবিষ্কৃত হলো এবং তা কোথায় আছে এবং সেই মূর্তিটি স্থানান্তর করার জন্যে তাগিদ দিয়েছেন। লেখক তার নিজ জন্মগ্রাম কেওয়ার গ্রামের নামকরণের কারণ, কেওয়ার এর আয়তন, শিক্ষা, সৌন্দর্য, পরিবেশ ও কেওযারের ঐতিহ্য সম্পর্কে অবহিত করার চেষ্টা করেছেন। বিক্রমপুর প্রাচীন বাংলার রাজধানী হওয়ার সুবাধে সেখানে বিহার ছিলো বলে ধারণা করা হতো সেই বিহারটি কোথায় তা নিয়ে লেখক গবেষকের ভূমিকা নিয়ে বিহারের খোঁজ করেছেন দীর্ঘ সময় ধরে এবং বিহারটি কোথায় তা চিহিৃত করতে সচেষ্ট হয়েছেন বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। এই সম্পর্কেও পাঠক জানতে পারবেন। ইদ্রাকপুর কেল্লা, এই কেল্লাটি মুন্সীগঞ্জের একটি ঐতিহাসিক স্থপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই কেল্লাটি কিভাবে এই অঞ্চলে স্থাপিত হলো এবং কিভাবে ইদ্রাকপুর কেল্লা থেকে পর্যায়ক্রমে বিক্রমপুর এর নাম মুন্সীগঞ্জ হলো তা নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। লেখক একেবারেই নতুন ভাবে আবিস্কার করে পাঠকের সামনে হাজির করেছেন এই অঞ্চলের আবদুল্লাহপুরেও একসময় যে দেশসেরা মসলিন এর মুগা সিল্ক বা সুতার কাপড় প্রস্তুত হতো সেই দিকটি। বইটির শেষদিকের ৯৪ পৃষ্টা থেকে ১১১ পৃষ্টা জুড়ে রয়েছে মুন্সীগঞ্জ তথা প্রাচীন বিক্রমপুরের বেশ কিছু হারিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন ম্যাপ, মূর্তি, তা¤্রলিপি এছাড়াও মাজার, মসজিদ, স্থাপনা, পুল, মঠ, মন্দির ও বিহারের নমুনা সংবলিত ইত্যাদির ছবি রয়েছে। যা পাঠকদের ইতিহাসের অংশের সাথে সাদৃশ্যময় পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মতোই বলে মনে হয়। বইটি সৃজনী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বইটির মূল্য ২০০ টাকা মাত্র। পাঠক বা ইতিহাস চর্চাকারীরা ইতিহাস ঐতিহ্যে বিক্রমপুর বইটি সংগ্রহ করে ইতিহাস জানা ও পড়ার কৌতুহল বা প্রয়োজন মিটাতে পারবেন বলে আশা করা যায়।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন