রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

পাট থেকে ডেনিম : সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

| প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে পোশাক-আশাক ও গৃহস্থালী পণ্যে বিশ্বে প্রাকৃত তন্তুর চাহিদা ও ব্যবহার বাড়ছে। সহজলভ্য ন্যাচারাল ফাইবার হিসেবে তুলার পরই পাটের স্থান। আর পাট উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। সেই সাথে ডেনিম ফেব্রিক ও ডেনিম জিন্স উৎপাদন ও রফতানীতে বিশ্বে বাংলাদেশ ক্রমশ শীর্ষ অবস্থানের দিকে এগিয়ে চলেছে। সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে জানা যায়, গত বছরের প্রথমার্ধে ইউরোপীয় বাজারে ডেনিম রফতানীতে বাংলাদেশ চিনকেও ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশের সামগ্রিক গার্মেন্ট রফতানীতে ডেনিমের অবন্থান এখনো ১০ ভাগের বেশী নয়। তবে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের গার্মেন্ট রফতানী লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ডেনিম রফতানী থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে অন্তত ৭ বিলিয়র ডলার। দেশে তৈরী ডেনিম কাপড়ের পাশাপাশি ভারত ও চীন থেকে ফেব্রিক আমদানী করছে বাংলাদেশের ডেনিম রফতানীকারকরা। সামগ্রিকভাবে তৈরী পোশাক খাতে আমদানী নির্ভরতা ক্রমে কমে আসছে। এ ক্ষেত্রে পাট থেকে ডেনিম সুতা ও কাপড় তৈরী করে ডেনিম ফেব্রিকে বাংলাদেশ এক নতুন মাত্রা যুক্ত করতে চলেছে। বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন(বিজেএমসি) নিজস্ব উদ্যোগে ইতিমধ্যে পাট ও তুলার সংমিশ্রনে এক নতুন ধরনের ডেনিম সুতা ও ফেব্রিক উৎপাদনে সফল হয়েছে। বিজেএমসি’র উৎপাদিত পাটের ডেনিম ফেব্রিক ডেনিম জিন্সের স্বাভাবিক ব্যবহারিক সুবিধা, স্থায়ীত্ব, স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত সুবিধার দিক থেকেও বিশ্ব বাজারে স্থান করে নিতে সক্ষম হবে বলে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন।
এক সময়ের সোনালী আঁশ পাটের হারানো ঐতিহ্য ও গৌরব ফিরিয়ে আনতে পাটের নতুন বাজার সম্প্রসারণ এবং পাটপণ্যের বহুমুখীকরণের উপর জোর দিচ্ছে সরকার। বর্তমানে বিশ্বের শতাধিক রাষ্ট্রে বাংলাদেশর পাট ও পাটপণ্য রফতানী হলেও পাটের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এখনো অধরাই রয়ে গেছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তজার্তিক ডেনিম এক্সপোতে বাংলাদেশের পাশাপাশি চীন, ভারত, পাকিস্তান, জার্মানী, ইটালি, জাপান, তুরস্ক, স্পেনসহ ৫২টি দেশের সহশ্রাধিক কোম্পানীর পণ্য প্রদর্শিত হয়। ডেনিম শিল্পের বাংলাদেশের উদ্ভাবনী ও অগ্রযাত্রার জানান দিতে এক্সপোতে বাংলাদেশ থেকে সর্বাধিক সংখ্যক কোম্পানী অংশগ্রহণ করে। দু দিনের এক্সপোতে ‘ইনোভেশন নাইট’ শিরোনামে ডেনিম ফ্যাশন শো’র আয়োজন করে বাংলাদেশের একটি জিন্স কোম্পানী। সেই সাথে বেশ কয়েকটি সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, প্যানেল ডিসকাসন অনুষ্ঠিত হয়। এসব অনুষ্ঠানাদিতে ডেনিম শিল্পে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠত্ব নানাভাবেই উঠে আসে। জিন্স বা ডেনিম শিল্পে ইতিমধ্যে ৮ ধরনের ডেনিম ফেব্রিক ব্যবহৃত হচ্ছে। তুলার সাথে পাটের সংমিশ্রনে ডেনিম ফেব্রিক তৈরী এবং রফতানীমুখী ও আভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহে বিজেএমসির উদ্যোগ নি:সন্দেহে এ শিল্পে একটি বড় সম্ভাবনাময় অগ্রগতি। আমদানীকৃত তুলার বদলে দেশে উৎপাদিত পাট দিয়ে সুতা তৈরী করে লাখ লাখ মিটার ডেনিম ফেব্রিকের যোগান দেয়া সম্ভব হলে তা আমাদের পাট এবং ডেনিম শিল্পের জন্য অনেক বড় মাইল ফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।
পাট থেকে ডেনিম কাপড় তৈরীর উদ্যোগ পাটের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বাস্তবের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে পারে। অ্যাক্রেলিক ও পলিয়েস্টারের বদলে পাটনির্ভর ডেনিম উদ্ভাবন এই শিল্পকে একই সাথে অধিকতর স্বাস্থ্যসম্মত, পরিবেশবান্ধব ও সুলভ করে তুলতে পারে। বাংলাদেশি পাটের হারানো বাজার ও গৌরব পুনরুদ্ধার এবং সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে অনেক দেরিতে হলেও বিজেএমসি’র যথাযথ উদ্যোগ প্রশংসার দাবী রাখে। এ উদ্যোগ ও পরিকল্পনা সফল হলে বাংলাদেশের পাটচাষী ও পাটশিল্পের সুদিন ফিরে আসবে। বাংলাদেশি পাট আমদানীর উপর ভারতের এন্টি ডাম্পিং ট্যাক্স বাংলাদেশের পাটচাষী ও পাটশিল্পের জন্য বড় ধরনের প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা দিয়েছিল। পাটের বিকল্প বাজার সৃষ্টির পাশাপাশি বহুমুখী ব্যবহার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে অনেক দিন ধরেই। আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন ডেনিম ফেব্রিকে পাটের ব্যবহার সে সুযোগ এনে দিতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে পাটজাত ডেনিম ফেব্রিকের আভ্যন্তরীণ বাজার সৃষ্টি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রফতানীমুখী ডেনিম ফেব্রিক উৎপাদক ও জিন্স রফতানীকারক দেশিয় কোম্পানীগুলো নিজস্ব কারখানাগুলোতে পাটজাত ডেনিম উৎপাদনের উদ্যোগ নিলে তার আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টিতে কার্যকর হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। রাষ্ট্রায়ত্ব পাটশিল্পে ব্যাপক লোকসানের মুখে বিজেএমসি পাটের বহুমুখী ব্যবহার ও বাজার সম্প্রসারণে উদ্বাবনী সম্ভাবনা কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিলে পাটের আরো নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন ও আন্তজার্িিতক বাজার সম্প্রনাণের মাধ্যমে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের নেতৃত্ব পুন:প্রতিষ্ঠিত করা অসম্ভব নয়।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন