বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

রাসুল (সা.)-এর আদর্শের সর্বজনীনতা

মুফতি আহমদ আবদুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সর্বজনীনতা ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, জাতি নির্বিশেষে গোটা মানবজাতির জন্য প্রয়োগযোগ্য কল্যাণ। ব্যক্তির আত্মিক নিবেদনের আকুতি যদিও ব্যক্তিকেন্দ্রিক, কিন্তু জাগতিক সংলগ্নতায় স্রষ্টার ঈপ্সিত মানব সমাজ নির্মাণে আত্মিকতা হচ্ছে মননের উৎসে দৃষ্টিকোণ এবং মূল্যবোধ হিসেবে বহুমাত্রিক। এটি স্রষ্টাসূত্র ছাড়াও মানবিক, অর্থনীতিক, রাষ্ট্রীয় ও সাংস্কৃতিক উপযোগীতায় সক্রিয় সাপেক্ষ। অন্তর্গত আত্মিকতা ও জাগতিক বহিরাবরণ উভয় ক্ষেত্রেই আত্মিকতার অবদান। মানুষের মধ্যে ভেদ-অসাম্য, শোষণ-বঞ্চনা ও অত্যাচার-নিপীড়নমুক্ত সবার জন্য কল্যাণবহ মানব পরিবেশ এর স্বর্ণফসল।
বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র জীবনাচরণ, কথামালা ও ইঙ্গিতাদি সম্বলিত পবিত্র হাদিসের নির্যাসকে এক কথায় ‘মানবতা’ও বলা যায়। এ মানবতা সর্বজনীন, তা আল্লাহর কালাম কোরআনেরই বাস্তবতার বহিঃপ্রকাশ। সর্বজনীনতা বলতে আমরা যে সর্বমানবের কল্যাণধর্মিতা বুঝি, ইসলামের সামগ্রিক নিয়ে পৃথিবীতে আবির্ভূত মহানবী (সা.)-এর বাণীর সর্বজনীনতার আওতায় তা তো বটেই, গোটা বিশ্ব- জীব-জন্তু, কীট-পতঙ্গ, নিসর্গজগত তাবৎ মাখলুকাত কল্যাণ ও শান্তির আশ্বাস পাচ্ছে। জলে-স্থলে, অন্তরীক্ষে শাখা-প্রশাখায় বিস্তৃত এ সর্বজনীন জীবন দর্শনের শান্তির ছায়াবৃক্ষ। প্রিয়নবী (সা.) কে শুধু মুসলিম উম্মহর জন্য রাসুল রূপে মনে করার অবকাশ নেই; কেবল মানবজাতির ত্রাণকর্তারূপে দেখাটাও বেশ সীমিত। তিনি তো সারা সৃষ্টিজগতের জন্য কল্যাণ ও শান্তির শ্রেষ্ঠ বার্তাবাহী, বিশ্বজগতের জন্য রহমত। এটা কোনো মানবীয় দাবী বা অতিশয়োক্তি নয়, মহান রাব্বুল আলামিনের ঘোষণায় এ সত্যই উচ্চারিত হয়েছে। ‘আমি তো আপনাকে প্রেরণ করেছি বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ। (সুরা আম্বিয়া : ১০৭)। তাইতো এই পরশমণির পরম সৌভাগ্য যারা লাভ করলো, চরিত্র তাদের সুষম হলো, জীবন্ত স্বপ্ন তাদের সফল হলো। খাঁটি সোনার চেয়েও খাঁটি হলো তারা। এ স্বর্গ পুষ্পের সান্নিধ্য সৌরভ যারা পেলো, বিশ্ব বাগানে তারা গোলাপের খোশবু ছড়ালো। সেই মহামানবই হলেন রহমাতুল্লিল আলামিন আমাদের প্রিয়নবী রাসুলে আরাবি মুহাম্মদ (সা.)। এই মহামানবের উত্তম আদর্শ নিয়েই বক্ষ্যমাণ নিবন্ধের মূল বিষয়।
রাসুল (স.)-এর চরিত্র মাধুরী : মুহাম্মদ (সা.) হলেন মহান চরিত্রের অধিকারী ও আদর্শের জীবন্ত প্রতীক। জন্মের পর হতেই তার মাঝে বিরাজ করছিলো সর্বোত্তম চরিত্র মাধুরী, সর্বোত্তম আদর্শ, সর্বোত্তম মহৎ মানুষ ও সর্বোত্তম প্রতিবেশী ইত্যাকার মহত্তম গুণ। বাল্যকাল থেকেই তার স্বভাব ছিলো কলুষতা, কাঠিন্য, কর্কশতা ও অহমিকামুক্ত। অনুক্ষণ তিনি ছিলেন দায়শীল, শ্রদ্ধাশীল সহানুভূতিশীল ও ঔদার্যশীল এবং নিষ্কলুষ নির্ভেজাল সোনা। তাইতো অতি অল্প বয়েসেই ‘আল-আমিন’ উপাধিতে বিভূষিত হন। অধিকন্তু পরনিন্দা, অশ্লীল ও অশিষ্ট বাক্য কখনই তার পবিত্র মুখ হতে নিঃসৃত হয়নি। এক কথায় তিনি হলেন, সকল গুণের আধার। বিশ্ববাসী সকলের নিমিত্ত নমুনা ও মহান আদর্শ। প্রিয়নবী (সা.)-এর সর্বজনীন কল্যাণমুখী আচরণ ও কর্মকান্ড অভেদ মানবিক একাত্মতার সর্বোচ্চ উদাহরণ হিসেবে নন্দিত হয়েছে। শ্রেষ্ঠ রাসুলরূপে অনুপম চরিত্র মাহাত্ম্য ছিলো তার মহিমার ভূষণ। এ জন্য আর্দশিক কারণে তার শত্রু বা ভিন্ন মতাবলম্বীরাও তাকে বিশ্বস্ততার শ্রেষ্ঠ, অতুলনীয় প্রতীক হিসেবে সম্মান জানিয়েছে তার সময়ে এবং পরবর্তী সময়ে দেশ-বিদেশে। রাসুল (সা.)-এর আগমন যে গোটা মানবজাতির তথা সৃষ্টি জগতের জন্য কল্যাণবহ, এ কথাটি ভিন্ন মতের তাত্তি¡ক কিংবা মূল্যায়নকারীরা কোনো-না-কোনো পর্যায়ে বলতে বাধ্য হয়েছেন। এ এক অনিবার্য অর্জন, বিজয়।
রাসুল (সা.)-এর সততা : সততা উত্তম চরিত্রের পূর্বশর্ত, সততা উত্তম আদর্শ। সততার মাঝেই নিহিত আছে ইহকালিন সাফল্য ও পরকালের নাজাত। বলা বাহুল্য, জন্ম হতে মৃত্যু অবধি রাসুল (সা.) হলেন সততার মূর্ত প্রতীক। যার দরূন মক্কার কাফির-মুশরিক সকলের সকাশে তিনি আস-সাদিক তথা সত্যবাদী নামে পরিচিত। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, মক্কার কাফের গোষ্ঠী ছিলো তার ঘোরতর শত্রু। তাকে হত্যা করে ইসলামের বিলুপ্তির জন্য সদা অধীর আগ্রহে প্রহর গুনতো। এতদসত্তে¡ও তাদের ধনসম্পদ গচ্ছিত রাখার সর্বাধিক বিশ্বস্ত বলে তাকেই জ্ঞান করতো। সুতরাং তার সততার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেই মানুষ দলে দলে ইসলামে প্রবিষ্ট হয়েছিলো। তাই তার সততা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা একান্ত অপরিহার্য।
রাসুল (সা.)-এর উদারতা : প্রিয়নবী (সা.)-এর অনুপম বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে একটি বিশেষ গুণ হলো, উদারতা। ইসলাম আবির্ভাবের পর দুনিয়ার বুক থেকে এ গুণটি নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য বিধর্মীরা কোনো প্রচেষ্টাই বাদ রাখেনি। এমনকি প্রিয় নবীজির উপর নৃশংস নির্যাতনও চালিয়েছে তারা। তৎসত্তে¡ও সবসময় তিনি তাদের প্রতি ছিলেন উদার, ছিলেন মহৎপ্রাণ। একবার উহুদ প্রান্তরে কাফের বাহিনীর তরবারির আঘাতে হুজুর (সা.)- এর পবিত্র দেহ রক্তে রঞ্জিত হয়েছিলো। বর্শার ফলা শিরস্ত্রাণ ভেদ করে মাথায় আঘাত হেনেছিলো। দাঁত মুবারক শহিদ হয়েছিলো। কিন্তু সেই করুণ মুহূর্তেও তিনি ঔদার্য ও ক্ষমার আদর্শ ত্যাগ করেন নি। বরং কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে এই বলে দোয়া করলেন, ‘হে রাব্বুল আলামিন! ওদের ক্ষমা করে দাও। এরা তো অবুঝ।’ (চলবে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন