ধা রা বা হি ক
মসনবী শরীফ
মাওলানা জালাল উদ্দীন রূমী রহ.
কাব্যানুবাদ : রূহুল আমীন খান
৩৮৫. সবাই গেল বাইরে চলে- হলো নীরব-নিঝুম ঘর
হাকিম-দাসী মুখোমুখি বসল এবার পরস্পর।
৩৮৬. কোমল স্বরে শুধোন হাকিম কোন শহরে বসত তার
শহর ভেদে বিভিন্ন হয় পদ্ধতিও চিকিৎসার।
৩৮৭. সেই শহরে ছিলেন কে কে, আত্মীয় ও বন্ধুজন
ঘনিষ্ঠতা কাদের সাথে ছিল বলো বিলক্ষণ।
৩৮৮. ভাগ্য ফেরে কেমনে কোথায় করলে জীবন-সময় পাড় ?
নাড়ির উপর আঙ্গুল টিপে চললো ধারা জিজ্ঞাসার।
৩৮৯. পদতলে বিদ্ধ হলে কাঁটা কারো তুলতে তায়
বাধ্যহয়ে সেজন তখন কোলের ওপর পা উঠায়।
৩৯০. এর পরে সে সূচের ডগায় খোঁজে মাথা কণ্টকের
তাতেও যদি না পায় তখন লাগায় লালা নিজ ঠোটের।
৩৯১. পায়ের কাঁটা খুঁজে পাওয়াই যখন কঠিন কাজ তবে
মনের কাঁটা পাওয়া তখন কতইনা কঠিন হবে।
৩৯২. মনের কাঁটা দেখতো যদি এই বেখবর মানুষ, হায়!
ভুগত কি আর তারা তবে দুঃখ জ¦ালা যন্ত্রণায় ?
৩৯৩. গুঁজে দিলে কাঁটা কেহ লেজের নিচে গর্দভের
জানেনা সে খুলতে কাঁটা কেবল লাফায় ব্যথায় এর।
৩৯৪. যতোই গাধা লাফায় ততই কাঁটা অধিক বিদ্ধ হয়
কাঁটা তোলাÑ দক্ষ কোনো ব্যক্তি ছাড়া সহজ নয়।
৩৯৫. দৌড় ঝাঁপে তো হলোই না লাঘব আদৌ কষ্টভার
বরং দেহের শত জাগায় হলো যখম সেই গাধার।
৩৯৬. লাঠি, লাথি, শক্তিপেশির নয় সমাধান সঙ্কটের
বিদ্ধ কাঁটা উৎপাটনে সাহায্য চাই বিজ্ঞদের।
৩৯৭. গায়বী হাকিম ছিলেন পটু চিকিৎসা অভিজ্ঞতায়
করেন শুরু চিকিৎসা তাঁর হাত বুলিয়ে রুগীর গায়।
৩৯৮. হাকিম সাহেব দাসীর কাছে প্রশ্ন করেন, শুনতে চান
ফেলে আসা সময়কালের একে একে সব বয়ান।
৩৯৯. বলতে থাকে দাসী তখন উত্তরে সে জিজ্ঞাসার
শহর, মালিক, বন্ধু-স্বজন যেথায় যেমন ছিলেন তার।
৪০০. কোন্ কথাটি বলার সময় নাড়ির গতি হয় কেমন
একাগ্রতার সঙ্গে হাকিম করে চলেন নিরীক্ষণ।
৪০১. কথার সাথে মন-মানসের, মনের সাথে নাড়ির যোগ
এই কারণে উভয় ’পরেই দেন মনোযোগ এই ভিষক।
৪০২. অগ্রে দাসী নিজের শহর, পরে অন্য শহর ধাম
বন্ধু-স্বজন, একে একে বলতে থাকে সবার নাম।
৪০৩. শুধোন হাকিম, ছেড়ে তোমার নিজের শহর নিজ মকান
কোন্্ শহরে করলে গিয়ে দীর্ঘ সময় অবস্থান ?
৪০৪. এক শহরের নাম বলে সে, বলল খুলে হাল হেথার
দেখেন হাকিম, বদন, নাড়িÑ একই হালে রইছে তার।
৪০৫. বলে গেল, মনীবগণের, শহরগুলোর দোষ ও গুণ
খাবার-দাবার, চলাফেরা, নিয়ম-নীতি, তমদ্দুন।
৪০৬. বলে গেল, হর শহরের, হরেক ঘরের সকল হাল
দেখেন হাকিম, চেহারা ঠিক, হয়নি নাড়ি টালমাটাল।
৪০৭. হাল ছিল তার বেশ স্বাভাবিক, দেখেন হাকিম আকলমন্দ
কিন্তু গেল পাল্টে হালত বলার সাথে সমরখন্দ।
৪০৮. মুখ ফ্যাকাশে, নাড়ির গতি দ্রæত হল অমনি তার
যার বিরহে ব্যাকুল সে ওই সমরখন্দের স্বর্ণকার।
৪০৯. চন্দ্রাননার নেত্র-নদে চলল বয়ে অশ্রæঢল
বেরিয়ে এলো পাঁজর ভেঙে দীর্ঘ নিঃশ্বাস হীম শীতল।
৪১০. বিজ্ঞ হাকিম পেলেন এবার সূত্রটি মূল সমস্যার
সূত্র ধরে করে ফেলেন ঠিক ব্যাধিটি আবিষ্কার।
৪১১. বলল দাসী : সমরখন্দে আনেন জনৈক সওদাগর
সেথা থেকেই কিনে নিলেন আমাকে এক স্বর্ণকার।
৪১২. বলেন হাকিম, কোন্্ সড়কে, কোন্ গলিতে ঘরটি তার
বলল, বাড়ি সারগুলেতে গলির নাম হলো গাৎফার।
৪১৩. বলেন হাকিম, ধরেছি রোগ, ফেলোনা আর অশ্রæজল
ইলাজে মোর পাবে তুমি যাদুর মতো দ্রæত ফল।
৪১৪. নন্দিত হও, রোগ নিরাময় করব তোমার দেখবে ফল
বাগ-বাগিচায় করে যেরূপ শ্যামল সবুজ বিষ্টিজল।
৪১৫. ভাবনা তোমার ভাবছি আমি তোমার কিবা ভাবনা আর
তোমার তরে আমার বুকে মমতা হাজার পিতার।
৪১৬. রোগটি তোমার রাখবে গোপন সবার কাছে, খবরদার
শাহানশা’ খোদ শুধালেও বলবে নাকো নিকট তাঁর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন