বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) উপনির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে বিএনপি এ নির্বাচনকে তাদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের বড় সুযোগ হিসেবে দেখছে। এ বিবেচনা থেকে ভোটের ময়দানে দৃঢ়তার সাথে শেষ পর্যন্ত থাকতে চায় বিএনপি। দলটি মনে করছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জিততে পারলে এর প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে। এ ছাড়া নির্বাচনে কোন প্রকার অনিয়ম কারচুপি হলেও তাকে আন্দোলনের বড় ইস্যু হিসেবে কাজে লাগাতে পারবে। দলের সিনিয়র নেতারা বলছেন, সরকারের ওপর সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ। সুষ্ঠু ভোট হলে তাদের মনোনীত প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত। তবে সীমানা জটিলতার কারণে এ নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কি না সে বিষয়েও তারা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারপরও নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়ার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন দলীয় এবং জোটের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। নির্বাচনে জয় লাভের লক্ষ্যে জোটের একক প্রার্থী দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ জোটের মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষনা করা হবে। ইতোমধ্যে জোটের এক বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচার প্রচারণার সার্বিক প্রস্তুতি নেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী জোটের সিনিয়র নেতারা ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে থাকবেন। শুধু তাই নয় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া নিজেও ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণায় নামবেন। নির্বাচনী প্রচারণার শেষের পাঁচ দিন ২০দলীয় জোট নেতা বিএনপি চেয়ারপার্সন মাঠে থাকতে পারেন এমনটি জোটের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। গত ৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জোটের বৈঠকে আসন্ন এ নির্বাচন নিয়ে নানা শঙ্কার বিষয়ও আলোচনা হয়। নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা থাকলেও অংশগ্রহণের বিষয়ে জোটের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০দলীয় জোট তাদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণাসহ সার্বিক প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি রাখতে চায় না। এ ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সকল বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত মেয়র নির্বাচনের মাঝপথে নির্বাচনের মাঠ থেকে এবার আর তারা সরে আসবে না। জোটের প্রার্থীর পক্ষে শেষ পর্যন্ত সবাই মাঠে থাকবে। ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে অন্যতম শরিকদল জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ঘোষনার বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে। জামায়াত শেষ পর্যন্ত জোটের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে নির্বাচনে কাজ করবে বলে বৈঠক সূত্রে জানা যায়। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত ৯ জানুয়ারি জোটের বৈঠকে একক প্রার্থী ঠিক করতে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সে আলোকে আগামীকাল (আজ) শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তারপর জোটের মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষনা করা হবে। বৈঠকে অংশ নেওয়া জামায়াত প্রতিনিধি বলেন, বৈঠক হলে, আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে কোনো সমস্যা হবে না। ২০ দলীয় জোটের শীর্ষনেতা খালেদা জিয়া যে সিদ্ধান্ত নেবেন, জামায়াত তা মেনে নেবে।
আগামী ২৬ ফেব্রæয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) উপনির্বাচন। এতে ধানের শীষের প্রার্থী এখনো ঘোষণা করেনি বিএনপি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সিটি নির্বাচনে ২০দলীয় জোটের পক্ষ থেকে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আজ (শনিবার) খালেদা জিয়া দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সাথে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে কে হচ্ছেন জোটের প্রার্থী তার নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।
বিএনপিতে মেয়র পদে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও বিগত নির্বাচনে দলের প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকেই মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি অনেটাই চূড়ান্ত বলা যায়। বিএনপির বাইরে ২০ দলীয় জোটের অন্যান্য শরীক দলেরও মেয়র পদে একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। এদের মধ্যে জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোঃ সেলিম উদ্দিন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রচারণাও চালাচ্ছেন তিনি। এ ছাড়া বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের নামও মেয়র প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। তবে বিএনপি স্থায়ী কমিটির আজকের (শনিবার) বৈঠকে জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা করেই একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল নির্বাচনের জন্য পুরো প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তেজগাঁও ৪১৯-৪২০ নং ভবনে একটি নির্বাচনী অফিসও খুলেছেন। ওই অফিসে তিনি ঘরোয়াভাবে বিএনপি নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটির ১৮ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে মহানগর উত্তর বিএনপি। প্রথম দিনে সাধারণ ও সংরক্ষিত পদে ২৮টি ফরম বিক্রি হয়। নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগর বিএনপি কার্যালয় থেকে এ ফরম বিক্রি করা হচ্ছে। উত্তর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রথম দিনে আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়ন ফরম কিনে নিচ্ছেন।
নির্বাচনের প্রচার প্রচারণার জন্য বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোট এবার ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ঘরে প্রতিটি ভোটারের কাছে তাদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা পৌঁছে দেয়ার নতুন কৌশল নিনর্ধারণ করা হচ্ছে। প্রতিপি ওয়ার্ডে প্রতিটি মহল্লায় থাকবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। বিএিনপি সকল কেন্দ্রীয় নেতা এবং শরীক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রচার কমিটিতে থাকবেন। এ ছাড়া সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট এবং নিপিড়ন নির্যাতনের বিষয়ও লিফলেট ও পুস্তিকার মাধ্যমে ভোটারদের কাছে তুলে ধরা হবে। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সন শেষ পাঁচদিন মাঠে প্রচারণা চালাবেন। গত নির্বাচনেও ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে তিনি প্রচারণা চালিয়ে ছিলেন। ওই সময় পরপর তিন দিন খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা চালানো হয়েছিল। খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িতে লাঠিসোটা দিয়ে আক্রমণ করা হয়। তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত সিএসএফ (চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স) সদস্যরাও মারাত্মকভাবে আহত হন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন