ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণের ব্যয় বহন করতে হবে শিক্ষার্থীদের। স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ হয়ে গেলে ২০২০ সাল থেকে প্রতি শিক্ষার্থীকে বছরে অতিরিক্ত ২১ হাজার টাকা করে পরিশোধ করতে হবে। ইতোমধ্যে এই বাড়তি অর্থ আদায়ের জন্য ঘোষণা ও নোটিশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যা নিয়ে ইতোমধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাড়তি ফি আদায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামী ২০২০ সাল থেকে ওই ক্যাম্পাসেই ক্লাস, পরীক্ষাসহ সকল কার্যক্রম পরিচালনা হবে। তবে ওই ক্যাম্পাসের নির্মাণ ব্যয় বহন করতে হবে শিক্ষার্থীদের। ২০২০ সাল থেকে যতদিন পর্যন্ত না নির্মাণ ব্যয় পরিশোধ হবে ততদিন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি সেমিস্টারে (চার মাসে এক সেমিস্টার) ৭ হাজার টাকা এবং বছরে ২১ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. সৈয়দ সাদ আন্দালিব বাড়তি ফি আদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন এবং পরবর্তীতে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে নোটিশেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বাড়তি ফি আদায়ের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় এমনিতেই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে দাবি করে তারা নতুন করে আর কোন ফি দিতে রাজি না। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামারও ঘোষণা দিয়েছেন তারা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন ক্যাম্পাস পরিচালনা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার জন্যই বাড়তি ওই টাকা তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেবে।
শিক্ষার্থীরা জানান, গত ৩ জানুয়ারি নবীন বরণ অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সাদ আন্দালিব জানান, ২০২০ সাল থেকে প্রতি সেমিস্টারে সাত হাজার টাকা করে ‘ক্যাম্পাস উন্নয়ন’ ফি দিতে হবে। এরপর ১০ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে অতিরিক্ত ফির ওই নির্দেশনা আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্ত জানিয়ে সেখানে বলা হয়, নতুন ক্যাম্পাসে ক্লাস করতে এবং নতুন ক্যাম্পাসের সুবিধা গ্রহণ করতে বর্তমান ও নতুন- সকল শিক্ষার্থীকে প্রতি সেমিস্টারে অতিরিক্ত সাত হাজার টাকা করে দিতে হবে, অর্থাৎ বছরে তিন সেমিস্টারে দিতে হবে মোট ২১ হাজার টাকা। নোটিসে এই বাড়তি অর্থকে ‘ক্যাম্পাস উন্নয়ন ফি’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বলছেন, ওই ফি তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সেমিস্টারের ছাত্র সাকিব হাসান জানান, ভর্তি হওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক খরচ হিসেব করে এবং খোঁজ খবর নিয়েই ভর্তি হয়েছেন। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল অনার্স শেষ করতে ৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে। এরপরই তিনি ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু এখন নতুন করে বাড়তি অর্থ আদায়ের ঘোষণা দিলে তা মেনে নেওয়া যায় না। তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী নওরীন বলেন, আমরা যারা পুরনো ক্যাম্পাসের ছাত্রছাত্রী তারা কেন নতুন ক্যাম্পাসের ব্যয় বহন করতে যাবো। একটি নির্দিষ্ট অর্থের কথা বলে আমাদের এখানে ভর্তি করানো হয়েছে। বাবা-মাও সেভাবে অর্থের সংকুলান করেছেন। কিন্তু হঠাৎ করে বাড়তি ফি চাইলে আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হবে না।
চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী রুমিন রহমান জানান, ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় নতুন ক্যাম্পাসে যাওয়ার পর অন্তত এক বছর লাগবে তার স্নাতক শেষ করতে। তিনি বলেন, এমন তো না যে নতুন ক্যাম্পাসের কিছু অংশ আমি পাব। বাড়তি ২১ হাজার টাকা কোন হিসাবে দেব আমি বুঝতে পারছি না। এমনিতেই এত টাকা দিয়ে পড়ছি, আবার এই অতিরিক্ত ফি মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মত।
এ বিষয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শিব নারায়ণ কৈরি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফি বাড়ানোর হবে। তবে এটা এখনই না ২০২০ সাল থেকে। নতুন ক্যাম্পাসে গেলে শিক্ষার্থীদের অনেক সুযোগ-সুবিধা বাড়বে সেজন্যই এই ফি নেওয়া হবে। কারণ সেখানে আমাদের মেনটেইনেন্স কস্টটা অনেক বেশি হবে। কতদিন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এই বাড়তি ফি দিতে হবে জানতে চাইলে তিনি সুনির্দিষ্ট সময় না বললেও যতদিন পর্যন্ত ক্যাম্পাসের ব্যয় পরিশোধ না হবে ততদিন পর্যন্ত হতে পারে বলে ধারণা দেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, সিন্ডিকেট নিবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে বাড়তি ফি আদায়ের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলেছে, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তাদের কিছু জানানোই হয়নি। কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণের ক্ষেত্রে কোন ফি আদায় করতে পারবেনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ইউজিসির কোনো ধরনের নির্দেশনা নেই নতুন ক্যাম্পাস বা বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে অতিরিক্ত ফি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়ার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান আইনের একটা ধারায় আছে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিবেচনায় ধার্য করা বেতন/ফি ইউজিসিকে জানাতে হবে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করলে অথবা ফির বিরোধিতা করলে ইউজিসি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়কে কারণ দর্শানোর নোটিস দিতে পারে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, এর আগে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি এ ধরনের একটা কাজ করতে চেয়েছিল, ছাত্ররা এর বিরোধিতা করেছিল। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের ফি ‘চাপিয়ে দেয়’ মন্তব্য করে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, এভাবে হঠাৎ ফি বৃদ্ধি আমি নৈতিকভাবে সাপোর্ট করি না।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সংশ্লিষ্ট সবাইকে ব্যবসা ও মুনাফার চিন্তা ত্যাগ করে জনকল্যাণে, সেবার মনোভাব ও শিক্ষার জন্য অবদান রাখা হবে। আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষকে সব সময় অনুরোধ জানাই তারা যেন আমাদের দেশের বাস্তবতা এবং জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও টিউশন ফিসহ সকল প্রকার ব্যয় একটি সীমা পর্যন্ত নির্ধারিত রাখতে উদার দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেন। কিন্তু এরপরও কেউ অনিয়ম করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন