বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ওষুধ শিল্প পার্কের তৃতীয় সংশোধন!

| প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

১৪ প্রকল্পে ১৮ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা অনুমোদন একনেকে মাধ্যমিকে তিন হাজার স্কুলের অবকাঠামো উন্নয়ন
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ওষুধ শিল্পের কাঁচামালে আমদানী নির্ভরতা কমাতে এপিআই শিল্প পার্ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০০৮ সালে। ২১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১০ সালেই প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে কয়েকবার। এরই ধারবাহিকতায় প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধী প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এপিআই শিল্প পার্ক প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাড়তি এক দশক সময় লাগছে। সংশোধীত প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৮১ কোটি টাকা। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় বাড়তি ব্যয় হচ্ছে ১৫০ কোটি টাকা।
একনেক সভা শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পের বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি জানান, সভায় মোট ১৪ প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পের মধ্যে নয়টি সম্পূর্ণ নতুন। এর বাইরে সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে পাঁচটি প্রকল্পের। ১৪ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৮ হাজার ৪৮২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে ১৬ হাজার ৩৭০ কোটি ৮১ লাখ টাকা। বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৯৫ কোটি টাকা। এর বাইরে ২ হাজার ১৭ কোটি ১১ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে।
সারাদেশের ৩ হাজার বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। এ লক্ষ্যে অনুমোদন দেয়া নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১০ হাজার ৬৪৯ কোটি ৫ লাখ টাকা। পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, সরকারি অর্থায়নে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি চলতি বছরের জুন থেকে ২০২০ পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়িত হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে তিন হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনসহ অন্যান্য ভবন নির্মাণ এবং তিন হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসবাবপত্র সরবরাহ করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, সার্বজনীন বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে মাধ্যমিক স্তরে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৪ সালের ব্যানবেইস এর রিপোর্ট অনুযায়ী মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯১ লাখ ৬০ হাজার ৩৬৫ জন। এ সকল শিক্ষার্থীদের একটি বিরাট অংশ মাধ্যমিক শিক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছে। মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণে যোগ্য সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণী কক্ষের সংখ্যা বৃদ্ধি করা আবশ্যক। বর্তমানে বাংলাদেশে ৩২৭টি সরকারি ও ১৯ হাজার ৩৫৭টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশের ৩ হাজার বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। মুস্তফা কামাল বলেন, এর মাধ্যমে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বর্ধিত চাহিদা পুরণ ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।
এমপিওভূক্তির দাবিতে এবতিদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের দাবি পূরণ হতে আরও সময় লাগবে বলে এ সময় জানান পরিকল্পনা মন্ত্রী। তিনি বলেন, এবতেদায়ি শিক্ষকরা আগে স্বীকৃতির বাইরে ছিল। বর্তমান সরকার এ সব প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এক সাথে সবকিছু পাওয়া যায় না। এ সব মাদ্রাসা এমপিওর আওতায় আনতে বেশ কিছু প্রক্রিয়ার অবলম্বন করতে হবে। আর তা করতে বেশ কিছু সময় লাগবে বলেও মনে করেন মন্ত্রী।
দুর্যোগের কারণে দুর্যোগ কবলিত এলাকায় দুর্দশাগস্ত জনগোষ্ঠীর কাছে ত্রাণ সামগ্রী ও মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে ৬৪টি জেলায় ৬৬ টি জেলা ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এ লক্ষ্যে ১২৭ কোটি ৪১ টাকা ব্যয় ধরে একপি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর একটি দুর্যোগ প্রবণ দেশ। প্রতি বছর বন্যা, ঝূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ¡াস, নদী-ভাঙ্গন, অগ্নিকান্ড, বজ্রপাত, ভূমিকম্প ইত্যাদি দুর্যোগে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী দেশটির মধ্যবর্তী অঞ্চলে বন্যা, নদী ভাঙ্গন, জলাবদ্ধতা, উত্তর অঞ্চলে প্রচন্ড শীত ও খরা এবং উপকূলীয় অঞ্চলে সাইক্লোন ও জলোচ্ছাস আঘাত হানে। এ সকল দুর্যোগে ত্রাণ সামগ্রী দ্রæত পৌঁছানোর লক্ষ্যে জেলা পর্যায়ে সংরক্ষণের জন্য কোন গুদাম নেই। এ অবস্থায় ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি জলা পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় সেল স্থাপনের লক্ষ্যে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
বৈঠকে ৮৭৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরে অগ্রাধিকারমূলক গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নিরাপদ পানি সরবরাহ ব্যবস্থার স¤প্রসারণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্য ও জীবন-যাত্রা মানের উন্নয়ন করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রকল্পটি সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করেন মন্ত্রী।
১১২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয় ধরে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বহুতল অফিস ভবন নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। অনুমোদন পাওয়া বৃহত্তর ফরিদপুর চরাঞ্চল এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন ও দুগ্ধেও বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিতকরণ কারখানা স্থাপন প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩৪৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
এ ছাড়া বন্যা প্রবণ ও নদী ভাঙন এলাকায় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ (৩য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নে ১ হাজার ৫০৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় মহানন্দা নদী ড্রেজিং ও রাবার ড্যাম প্রকল্পে ১৫৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, বৃহত্তর চট্টগ্রাম গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩ বাস্তবায়নে ১ হাজার ৫০৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয় হবে।
এ ছাড়াও নারায়নগঞ্জের বন্দর উপজেলায় ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণপ্রকল্পের প্রথম সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে একনেক। অণুমোদন পেয়েছে বগুড়া উপজেলার সাথে সংযুক্ত চাঁপাপুর-বরুড়া, নিমসার-বরুড়া এবং খাজুরিয়া-বরুড়া জেলা মহাসড়ক তিনটি যথাযথ মানে ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প। ৭টি র‌্যাব কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী অনুমোদন দিয়ো হয়েছে। জরুরী ২০০৭ ঘূর্ণিঝড় পুনরুদ্ধার ও পুনর্বাসন প্রকল্প (ইসআরআরপি) : প্রকল্পের এলজিইডি অংশ অনুমোদন পেয়েছে তৃতীয় সংশোধনী। একই প্রকল্পের পরিকল্পনা বিভাগের অংশও তৃতীয় দফায় সংশোধন করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন