শুরুর পর গত ৭ বছরে কাজের অগ্রগতি ছিল মাত্র ৯ শতাংশ। নতুন বছরে হঠাৎ গতি পেয়েছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। এরই মধ্যে প্রথম অংশ (বিমানবন্দর-বনানী) দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। দ্বিতীয় (বনানী-তেজগাঁও) ও তৃতীয় অংশ (মগবাজার- কুতুবখালী) দৃশ্যমান করতে সব কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। ২০২০ সালের মধ্যেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চায় বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেতু কর্তৃপক্ষ।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) এ প্রকল্পে বিনিয়োগ ও নির্মাণ কাজের দায়িত্বে আছে ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, জমি অধিগ্রহণে জটিলতা আর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সময়মত অর্থ জোগাড় করতে না পারায় দীর্ঘদিন আটকে ছিল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ।
নির্মাণাধীন চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল লেনের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এটি চালু হলে যানবাহনগুলো রাজধানীর উত্তর অংশ থেকে নির্বিঘেœ মধ্য, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব অংশে যাতায়াত করতে পারবে। যান চলাচলে গতি বৃদ্ধির পাশাপাশি যানজট সহনীয় রাখতেও প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে বনানী-বিমানবন্দর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ দ্রæত এগিয়ে চলছে। কোথাও চলছে পাইলিং। আবার কোথাও পিয়ারের ওপর ক্রস বিম বসানোর প্রস্তুতি চলছে। কোথাও চলছে পিয়ার ঢালাই। বিমানবন্দর এলাকায় প্রথম অংশে একপাশে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, অন্যপাশে রেললাইন। মাঝখানে চলছে প্রকল্পের কাজ। টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা ভেতরে কাজ করছেন দেশী-বিদেশী শ্রমিক-প্রকৌশলীরা।
কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নেমে ডানদিকে তাকালেই চোখে পড়বে অনেকগুলো দৃষ্টিনন্দন পিয়ার। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম অংশের পিয়ার এগুলো। একজন প্রকৌশলী জানান, ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটারের এ অংশে মোট ২৩৩টি পিয়ার হবে। এরই মধ্যে উঠেছে ২৭টি। আংশিক কাজ হয়েছে আরো ৩৯টির। ভূমি থেকে উপরে উঠে দুই পাশে ছড়িয়ে যাওয়া একটি পিয়ারে বসানো হয়েছে ক্রস বিম।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত যাবে এ এক্সপ্রেসওয়ে। মূল লাইনের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। সাতটি ইন্টারচেঞ্জসহ রাম্প করতে হবে আরো ২৭ কিলোমিটার। রাম্পসহ মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রকল্প এলাকাকে তিন অংশে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অংশে বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার, দ্বিতীয় অংশে বনানী থেকে মগবাজার পর্যন্ত ৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার এবং তৃতীয় অংশে মগবাজার থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ৬ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার। চালুর পর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করতে পারবে। পুরো এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে ১১টি টোলপ্লাজা, এর মধ্যে পাঁচটি হবে এক্সপ্রেসওয়ের উপরে।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এতে ব্যয় হচ্ছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার জোগান দিচ্ছে। বাকি টাকা বিনিয়োগ করবে ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি। নির্মাণকালীন তিন বছরসহ মোট ২৫ বছর টোল আদায়ের মাধ্যমে বিনিয়োগকৃত টাকা তুলে নেবে থাইল্যান্ডের প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে এ প্রকল্পে ইতাল-থাইয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয় নির্মাণের জন্য ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি ইতাল-থাইয়ের সঙ্গে প্রথম চুক্তি করে সেতু বিভাগ। সে বছর ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিত্তি স্থাপন করেন। তবে ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতায় কাজ আটকে থাকে দুই বছর। নকশা পরিবর্তন ও মূল্যস্ফীতির কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করে সেতু বিভাগ। চুক্তি সংশোধনের পর ওই বছরই শুরু হয় ভূমি জরিপ। ২০১৪ সালের ৩০ অক্টোবর এবং ২০১৫ সালের ১৬ অগাস্ট দুই দফা এ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
প্রকল্প সূত্র জানায়, চুক্তির সময় প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় তিন বছর। পরবর্তীতে কয়েক দফায় বাড়িয়ে তা ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নেয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন