শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

কোহলি বীরত্বে সেমিতে ভারত মোহালিতে আরেক বিরাট শো

প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অস্ট্রেলিয়া : ১৬০/৬ (২০ ওভার)
ভারত : ১৬১/৪ (১৯.১ ওভার)
ফল : ভারত ৬ উইকেটে জয়ী।
ইমরান মাহমুদ
শুরুটা যদি কালবৈশাখীর তা-ব হয়, শেষটা স্রেফ দমকা বাতাস। ব্যাট হাতে যে ঝড় তুলে শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়া, শেষ পর্যন্ত সেই ঝড় থাকল না। আর থাকল না বলেই অঘোষিত কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতকে ছুড়ে দেওয়া লক্ষ্যটা বিশাল কিছু হলো না। ১৬১ রান ভারতের ব্যাটিং লাইনআপের জন্য খুব কঠিন কি? না হলেও সেটিই একটা সময় বিশাল কিছু হয়ে পড়েছিলো মহেন্দ্র সিং ধোনির জন্য। তবে বিরাট এই বাধা অনায়েসেই টপকে গেলো বিরাট কোহলির ব্যাটে ভর করে। দুর্দান্ত সব শটে ৫১ বলে তার হার না মানা ৮২ রানে ভর করে অস্ট্রেলিয়াকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ভারত টিকে রইলো ঘরের মাঠে টি-২০ বিশ্বকাপে। ম্যাচ জয়ী ইনিংসে তিনি হাঁকিয়েছেন নয়টি চার ও দুটি ছক্কা। অনুমিতভাবে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন বিরাট কোহলিই। আগামী ৩১ মার্চ দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে ভারত। একদিন আগে প্রথম সেমিতে মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড।
১৮ বলে ৩৯ রান। হাতে আছে ৬ উইকেট। সবচেয়ে বড় কথা তখনও ক্রিকেজ টিকে আছেন অনেক ম্যাচ জয়ের সাক্ষী কোহলি-ধোনি। মোহালির পাঞ্জাব ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন আইএস বিন্দ্রা স্টেডিয়ামের দর্শকদের বুকের ধুকপুকানি শোনা যাচ্ছিলো ব্যাট-বলের ঘর্ষণকে ছাপিয়েও। ১৭তম ওভারে বল হাতে এলেন ফকনার। প্রথম বলেই স্কয়ার লেগের সীমানা ছাড়িয়ে শাস্তি দিলেন কোহলি শর্ট বলটিকে। পরের বলের পরিণতিও এক, এবার ফফ সাইডকে বেছে নিলেন ম্যাচ জয়ের নায়ক। তিন নম্বর বলটিকে আর মাটি কামড়ে নয়, ওয়াইড লং অফ দিয়ে সীমানা ছাড়া করলেন ছক্কার চুমোয়। পুরো মোহালিতে তখন মন্ত্রমুগ্ধের মত উচ্চারিত হচ্ছে কোহলির নাম। পরে আর বাইন্ডারি না হলেও ৩ বলে ৫বার জায়গা বদল করেন ধোনি-কোহলি। ১৮তম ওভারে বোলার পাল্টে কোল্টার নাইলের হাতে দায়িত্ব দেন স্মিথ। প্রথম বলটি দেখে শুনে ছেড়ে দেন তার আগেই ফিফটির স্বাদ পূর্ণ করা কোহলি। পরের বল থেকেই উপূর্যপরি ৩ ও এক বল বাদে অপর চারের মারে ম্যাচ হাতের মুঠোয় নিয়ে নেন এই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান। বাকি থাকে তখন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। সেই কাজ টুকু অধিনায়কের হাতে সঁপে দিয়ে টেলএন্ডে দাঁড়িয়েই প্রথম বলে জয়োৎযাপনে মাতলেন কোহলিসহ পুরো ভারত।
জিতলে সেমিফাইনাল, হারলে এখানেই শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পথচলা। কঠিন এই ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা হলো অবিশ্বাস্য রকমের ভালো। আশিস নেহরার প্রথম ওভারে ৪, জশপ্রীত বুমরার পরের ওভারে ১৭। তৃতীয় ওভারে নেহরা আবার বল হাতে নিয়ে দিলেন ১০ রান। কিন্তু রবিচন্দ্রন অশ্বিন এসে ছাড়িয়ে গেলেন সবাইকে। তাঁর করা ইনিংসের চতুর্থ ওভার থেকেই এল ২২ রান! সব মিলিয়ে ৪ ওভারেই ৫৩। টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ৪ ওভারে এর চেয়ে বেশি রান অস্ট্রেলিয়া একবারই করেছে, ২০১০ সালে। সিডনিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওই ম্যাচে প্রথম ৪ ওভারে ৫৫ করেছিল অস্ট্রেলিয়া।
শুরুর তা-বটা চালিয়েছেন মূলত উসমান খাজা। ১৬ বলে ২৬, প্রথম ২৪ রানই বাউন্ডারি থেকে! দলের ৫৪ রানে খাজা ফিরে যাওয়ার পর হঠাৎই নিজেদের গুটিয়ে নেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা। সে কারণেই ২২ বলে যেখানে প্রথম ৫০ হয়েছিল, সেখানে পরের ৫০ রান আসে ৫৬ বলে। ৭.৩ ওভারের পর টানা ৩১ বল কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া।
অ্যারন ফিঞ্চ এক প্রান্ত থেকে চেষ্টা করছিলেন রানরেট বাড়ানোর। কিন্ত ৩৪ বলে ৪৩ রান করার পর তাঁকেও ফিরে যেতে হলো হার্দিক পান্ডিয়ার বলে শিখর ধাওয়ানকে ক্যাচ দিয়ে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এসে থিতু হওয়ার পর যখন হাত খুলে খেলবেন বলে ঠিক করলেন, তখনই তাঁকেও ফেরালেন বুমরা। অস্ট্রেলিয়ানরা এ রকম চাপে পড়ে যাওয়ার পুরো সুযোগটা নিয়েছেন অনেক দিন পর বল হাতে পাওয়া যুবরাজ সিং। ৩ ওভার বল করে মাত্র ১৯ রান দিয়ে নিয়েছেন স্টিভেন স্মিথের উইকেটটি। যদিও মহেন্দ্র সিং ধোনির হাতে কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরে যাওয়ার সময় অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ককে খুব সন্তুষ্ট মনে হয়নি। রিল্পেতেও আউটের পরিষ্কার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সপ্তম উইকেটে শেন ওয়াটসন ও পিটার নেভিল জুটি ৫ বলে ১৫ তোলায় ৬ উইকেটে ১৬০ রানে শেষ হয় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস।
শুরুটাও ভালোই ছিল তাদের। সাবলিল ঢঙে রান আসতে শুরু করে। তবে চতুর্থ ওভারেই ছন্দপতন। বিদায় নেন শিখর ধাওয়ান। ভারতের দলীয় রান তখন ২৩। শর্ট ফাইন লেগে উসমান খাজার হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ১২ বলে ১৩ রান করা ভারতের এই ওপেনার। বেশীক্ষণ থিতু হতে পারেননি আরেক ওপেনার রোহিত শর্মাও। ৫.৫ ওভারে শেন ওয়াটসনের বলে সরাসরি বোল্ড তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে ১৭ বলে এক চারে ১২ রান করে যান রোহিত। দ্রুত ফেরেন সুরেশ রায়নাও। তিনিও ওয়াটসনের শিকার। সাত বলে ১০ রান করে নেভিলের হাত ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
তবে এরপর কোহলির সঙ্গে দৃঢ় জুটি গড়ার আভাস দেন যুবরাজ সিং। পায়ে চোট পেয়েও সাবলিল ছিলেন তিনি। কিন্তু দলীয় ৯৪ রানের মাথায় যুবরাজকে ফিরিয়ে ভারত শিবিরে হতাশা উপহার দেন অজি বোলার ফকনার। চতুর্থ উইকেট জুটিতে কোহলি-যুবরাজ করেন ৪৫ রান। ১৮ বলে এক ছয় ও এক চারে ২১ রান করে ফকনারের বলে ওয়াটসনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন যুবরাজ।
তবে এরপর জয়ের জন্য বাকি কাজটুকু কোহলি করেছেন অধিনায়ক ধোনিকে সঙ্গে করেই। চার-ছক্কার ফুলঝুড়িয়ে সাজিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান কোহলি। শেষটা করেছেন অবশ্য ধোনি। ১০ বলে তিন চারে ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন ধোনি। আর ৫১ বলে ৮২ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন কোহলি। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওয়াটসন দুটি, ফকনার ও কাটার নীল নেন একটি করে উইকেট।

সেমিফাইনালের লাইনআপ
৩০ মার্চ : নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ড, দিল্লী
৩১ মার্চ : ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ, মুম্বাই

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন