দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ মাওলানা এম. এ. মান্নান (রহঃ)-এর স্ত্রী ও ইনকিলাব গ্রুপ অব কোম্পানিজ- এর চেয়ারম্যান এবং দৈনিক ইনকিলাব-এর সম্পাদক ও বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন-এর মা বেগম হোসনে আরা নিলু গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১টা ৪০ মিনিটে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি চার ছেলে, দুই মেয়ে, নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে দৈনিক ইনকিলাব পরিবার ও তাঁর জন্মস্থান চাঁদপুর সদরের রহমতপুর আবাসিক এলাকায় এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলাস্থ কেওরা গ্রামে মাওলানা এম. এ. মান্নান (রহঃ)-এর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর মৃত্যু সংবাদ শুনে অসংখ্য মানুষ ও শুভানুধ্যায়ী শোক সন্ত¦প্ত পরিবারকে সান্ত¦না দিতে তাঁর বনানীস্থ বাসভবনে ছুটে আসেন। গতকাল বাদ জোহর মহাখালীস্থ গাউছুল আজম মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে মসজিদ কমপ্লেক্সের ভেতর তাঁর স্বামী আলহাজ মাওলানা এম. এ. মান্নান (রহঃ)-এর কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়। বেগম হোসনে আরা নিলুর মৃত্যুতে আমরা শোকাভিভ‚ত ও মরহুমার রূহের মাগফেরাত কামনা এবং মহান আল্লাহ তাঁকে বেহস্ত নসীব করুন এই দোয়া করি। তাঁর শোকসন্ত¦প্ত পরিবারকে আমরা সহমর্মিতা ও সমবেদনা জানাই।
মরহুমা বেগম হোসনে আর নিলু ১৯৪৬ সালের ১৫ জুলাই চাঁদপুর সদরে রহমতপুর আবাসিক এলাকায় সম্ভ্রান্ত মৌলভী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আলহাজ মৌলভী আব্দুল জব্বার একজন প্রথিতযশা আলেম, শিক্ষানুরাগী ও শিক্ষক ছিলেন। চাঁদপুর সদরে অবস্থিত বিখ্যাত মাতৃপীঠ সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং একই স্কুলের শিক্ষকও ছিলেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। এলাকায় একজন সমাজসেবক হিসেবে তার ব্যাপক পরিচিতি ছিল। বাবার পথ ধরে এবং স্বামী আলহাজ মাওলানা এম. এ. মান্নান (রহঃ)-এর অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় বেগম হোসনে আরা নিলুও নিজেকে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে নিয়োজিত করেন। তিনি দেশ ও জনগণের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত দৈনিক ইনকিলাব-এর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে চাঁদপুর সদরে বাবার নামে আলহাজ আব্দুল জব্বার হাফিজিয়া মাদরাসা এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলায় বেগম হোসনে আরা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি এতিম, অসহায় ও দুস্থদের নীরবে-নিভৃতে সহায়তা ও প্রতিষ্ঠিত করতে সবসময় কাজ করে গেছেন। তিনি কয়েকশ’ দুস্থ মানুষকে স্থায়ীভাবে কর্মসংস্থান করে দিয়েছেন। স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে আমৃত্যু তিনি অসহায় মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। এই অকৃত্রিম ও নিঃস্বার্থ মানবসেবার কারণে এলাকায় তিনি দানবীর ও মহীয়সী নারী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। নিজ থেকে খোঁজ নিয়ে তিনি মানুষের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর স্বামী আলহাজ মাওলানা এম. এ. মান্নান (রহঃ) যেমন নিজেকে দেশ ও জাতির সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন, তেমনি তাঁর পাশে থেকে এবং তাঁর অনুপ্রেরণায় নিজেকে একই কাজে সঁপে দিয়েছিলেন। আলহাজ মাওলানা এম. এ. মান্নান (রহঃ)-এর মৃত্যুতে যেমন দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছে, তেমনি বেগম হোসনে আরা নিলুর মৃত্যুতেও দেশ ও জাতি এক মহীয়সী নারীকে হারাল। এই ক্ষতি সহসা পূরণ হবার নয়।
যুগে যুগে সমাজ ও দেশের কল্যাণে যেমন অনেক মহীয়সী নারীর আগমন ঘটেছে, তেমনি তাদের মতোই বেগম হোসনে আরা নিলুর আগমন ঘটেছিল। সুষ্ঠু ও মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ গঠন এবং মানব সেবায় তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। নীরবে মানুষের সেবায় অবিরাম কাজ করে গেছেন। অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে অসহায় ও দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বেগম হোসনে আরা নিলু শুধু একজন মহীয়সী নারীই ছিলেন না, একজন রতœগর্ভা মা-ও ছিলেন। তাঁর চার পুত্র ও দুই কন্যাকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। প্রত্যেকেই স্ব-স্ব জায়গায় প্রতিষ্ঠিত এবং বাবা-মায়ের পথ অনুসরণ করে মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। তাঁর বড় পুত্র এ এম এম বাহাউদ্দীন দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। পিতা আলহাজ মাওলানা এম. এ. মান্নান (রহঃ)-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা শিক্ষকদের একক ও সর্ববৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। মাদরাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী এবং মাদরাসা শিক্ষকদের মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর একক প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে তিনি নিবেদিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। বেগম হোসনে আরা নিলুর পুত্র, কন্যা এবং নাতি-নাতনীরা স্ব-স্ব স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সমাজকে আলোকিত করে চলেছেন। তিনি ইহলোক ত্যাগ করলেও তাঁর আদর্শ ও কর্ম সন্তানদের মাধ্যমে আরও আলোকিত হয়ে উঠবে এবং দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত থাকবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। আমরা আবারও মরহুমা বেগম হোসনে আরা নিলুর রূহের মাগফেরাত কামনা করি এবং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁকে জান্নাতবাসী করুন এই দোয়া করি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন