শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

‘মোহালির ইনিংসটিই নম্বর ওয়ান’

প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক : হার না মানা এক ইনিংস, কালজয়ী বললেও কি বেশী বলা হবে? টি-২০ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার-ফাইনালে রূপ নেওয়া ম্যাচে প্রবল চাপ জয় করে খেলা অসাধারণ ঐ ইনিংসটি ‘বিরাট’ কোহলিকে করেছে আরো ‘বিশাল’। ৫১ বলে ৮২ রানের মহাকাব্যিক সেই ইনিংসে অজিদের হাতের মুঠো থেকে থেকে ম্যাচটা যেভাবে বের করে আনলেন, কোহলির প্রশংসায় সাবেক ক্রিকেটাররা সবাই পঞ্চমুখ। শচীন টেন্ডুলকার থেকে শুরু করে ব্রায়ান লারা, কেউই বাদ যাননি। এমনকি ইংলিশ তারকা ফুটবলার হ্যারি কেন, সাবেক লিভারপুল মিডফিল্ডার ডিডি হামানও টুইট করেছেন কোহলিকে নিয়ে। তাহলে কোহলি নিজে নিজের সেই ইনিংসটিকে নিয়ে কি ভাবতে পারেন? অনেক ম্যাচ জয়ের সাক্ষি কোহলি বলেছেন, ‘মোহালির ইনিংসটিই নম্বর ওয়ান’।
গেলপরশু রান তাড়ায় শুরু থেকেই রান-বলের সমীকরণে পিছিয়ে ছিল ভারত। কিন্তু সেই চাপের ছাপ একটুও দেখা যায়নি কোহলির ব্যাটিংয়ে। ঠাÐা মাথায় টেনে নিয়ে গেছেন দলের ইনিংস। সময় মত একটি-দুটি চারে রানরেটকে যেতে দেননি নাগালের বাইরে। আর প্রয়োজনমত তুলেছেন ঝড়। ৯টি চার ও ২টি ছক্কা মিলে মোট ১১টি বাউন্ডারির শেষ আটটিই তিনি মারেন শেষ পাঁচ ওভারে, ঠিক যখন প্রয়োজনটা বড় হয়ে ওঠে। ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে কোহলি বলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই এটা শীর্ষ তিনে থাকবে। সম্ভবত এখন এটাই শীর্ষে, কারণ আমি একটু আবেগী, তাই এটাকে আমি শীর্ষে রাখতে চাইব। বিশ্ব মানের দল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এটা আমাদের জন্য কোয়ার্টার-ফাইনাল ছিল।’
হারলেই বিদায়- এমন লড়াইয়ে ১৬১ রানের লক্ষ্য বড় কিছু না হলেও রোহিত-ধাওয়ান-রায়নাদের ব্যর্থতায় শুরু থেকেই ধুঁকছিল স্বাগতিকরা। অষ্টম ওভারে স্কোরবোর্ডে ৪৯ রান তুলতে ৩ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়া দলকে পথ দেখান কোহলি। যুবরাজ সিংয়ের সঙ্গে ৪৫ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর পর ধোনির সঙ্গে ৩১ বলে ৬৭ রানের জুটিতে দলকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে।
কোহলির প্রশংসায় অধিনায়ক ধোনি বলেন, ‘আমার মতে, গত দুই-তিন, হয়তো চার বছর ধরে সে অসাধারণ খেলে চলেছে। এক জন ক্রিকেটার হিসেবে তার বেড়ে ওঠা দেখেছি আমরা।’
কোহলি এর আগেও অনেকবার খেলেছেন ম্যাচ জয়ী ইনিংস। এ মাসের শুরুতেই এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে অপরাজিত ৪১ রানের ইনিংসে জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন। বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী পাকিস্তানকে হারাতে খেলেন অপরাজিত ৫৫ রানের ম্যাচ সেরা ইনিংস। তবে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে যেন ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকেও। মাঠের চারপাশে চমৎকার সব শটে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের প্রশংসাও অর্জন করে নেন কোহলি, ‘এটা দারুণ সিরিয়াস একটি ইনিংস। চাপের মুখে সে সব ধরনের শটই খেলেছে এবং ফাঁক খুঁজে নিয়েছে। অনেকটা সময় ধরে সে এটা করেছে, প্রশংসা তার প্রাপ্য।’
যখন যুবরাজ আউট হলেন, ভারতের ছয় ওভারে আরও দরকার ৬৭ রান। মোহালির ¯øথ হয়ে আসা উইকেটে সেটা কঠিন বললেও কম বলা হয়। সেখান থেকে কোহলি-ধোনি ৫ বল বাকি থাকতেই খেলা শেষ করে দিলেন। ওই ৬৭ রানে ধোনির অবদান মাত্র ১৮। কোহলি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৫১ বলে ৮২ রান করে। অনেকেই তখন থেকেই টুইট শুরু করে দিয়েছেন। লারা যেমন রীতিমতো আচ্ছন্ন, ‘অবিশ্বাস্য একজন ব্যাটসম্যান সে। আর কিছু বলার দরকার নেই।’ যাঁর সঙ্গে কোহলির তুলনা বিভিন্ন সময়েই চলে আসে, টেন্ডুলকারও টুইট করেছেন, ‘ওয়াও কোহলি! স্পেশাল একটা ইনিংসটা ছিল এটা। দারুণ একটা জয়!’
শেন ওয়াটসন খুব কাছ থেকেই দেখেছেন কোহলির কীর্তিটা, কাল তো অস্ট্রেলিয়ার হয়ে শেষ ম্যাচটা খেলে ফেলেছেন এই অলরাউন্ডার। কোহলিকে নিয়ে মুগ্ধ তিনিও, ‘এ রকম ইনিংস দেখতে পারাটা দারুণ আনন্দের। অবিশ্বাস্য! রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে আমরা একসঙ্গে খেলব, আর তর সইছে না আমার।’ কোহলি-কীর্তির আরেক সাক্ষী গেøন ম্যাক্সওয়েলও টুইট করেছেন, ‘ওটা ছিল অন্য পর্যায়ের একটা ইনিংস। আর কিছু বলার নেই। খুবই বিধ্বস্ত। একজনের কাছেই আমরা হেরে গেলাম।’
যুবরাজ সিং, রোহিত শর্মারাও পরে কোহলিকে ভাসিয়ে দিয়েছেন প্রশংসায়। মাইকেল ভন, স্কট স্টাইরিসদের মতো সাবেক থেকে শুরু করে এই সময়ের ডোয়াইন ব্রাভো, ড্যারেন স্যামি, রস টেলররাও কোহলির বন্দনায় মুখর। তবে হ্যারি কেনের টুইটটা একটু বিস্ময় হয়েই এসেছে। টটেনহামের ইংলিশ স্ট্রাইকার যে ক্রিকেট দেখেন, সেটা অনেকেই জানতেন না। কাল কেন টুইট করেছেন, ‘বিরাট কোহলি অসাধারণ খেলোয়াড়। চাপের সময় সে যেভাবে নিজের সেরাটা বের করে আনে সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছে সে কোন মানের।’ লিভারপুলের সাবেক মিডফিল্ডার ডিডি হামান অবশ্য ক্রিকেট ভক্ত অনেক আগে থেকেই। কালকের ম্যাচের পর তাঁর টুইট, ‘আমি কি সর্বকালের ধ্রæপদি ইনিংসগুলোর একটি মিস করে ফেললাম?’ এমন আক্ষেপ থাকতে পারে অনেকেরই!

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন