বিশেষ সংবাদদাতা : ফেভারিট হয়েও ১৯৯২’র বিশ্বকাপে এসে থেমে যেতে হয়েছে নিউজিল্যান্ডকে। সেই থেকে সেমিফাইনালই যেনো নিয়তি মেনে বিশ্বকাপে খেলতে হয়েছে নিউজিল্যান্ডকে। মার্টিন ক্রোদের সেই হতাশা ভুলিয়ে ২০১৫ বিশ্বকাপে বৃত্ত ভেঙ্গে প্রথমবারের মতো ফাইনালিস্ট কিউইরা! টি-২০ বিশ্বকাপের অভিষেক আসরের সেমিফাইনালিস্ট নিউজিল্যান্ড ৪ আসর পর আবারো সেমিতে। এবার কি তাহলে ব্রান্ডন ম্যাককালামদের দুঃখ ভুলিয়ে নুতন ইতিহাস রচনা করতে যাচ্ছে কেন উইলিয়ামসরা?
ম্যাককালাম অবসর পরবর্তী দলটিকে ঘিরে টুর্নামেন্ট পূর্ব আলোচনায় কিউইদের নিয়ে কিন্তু এতোটা সম্ভাবনা দেখেনি কেউ। যে গ্রæপে ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশের মতো প্রতিদ্ব›দ্বীÑসেই গ্রæপে সব ক’টি ম্যাচ সহজে জিতে গ্রæপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনাল! নিউজিল্যান্ডের কাছে এতোটা প্রত্যাশা কিন্তু করেনি কেউ। অথচ, ভারতকে ১২৭ টার্গেট দিয়ে ৪৭ রানের জয়ে কিউদের সেই যে শুরু, তাতে লÐ ভÐ একটার পর একটা প্রতিপক্ষ। আসরে রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয়টি পর্যন্ত তাদের (বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭৫ রানের)।
অন্যদিকে গেইল ঝড়ে লÐ ভÐ ইংল্যান্ড উইন্ডিজের কাছে ৬ উইকেটে হেরে রাতারাতি বদলে যাওয়া দলে আবির্ভূত। দ.আফ্রিকার ২২৯/৪’র চ্যালেঞ্জে জিতে যাওয়ার পর আর তাকায়নি পেছনে মরগানের দলটি। ২০১০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটি থেকে ট্রফি জয়ের অতীত স্মৃতিই এখন টনিক হয়ে দেখা দিচ্ছে মরগানদের। টি-২০ বিশ্বকাপের আগের ৫টি আসরে একবার ফাইনালে উঠে সেই আসরের ট্রফিটা নিয়ে ফিরেছে ইংলিশরা। এবারো যে ফাইনালে চোখ তাদের।
টি-২০তে দু’দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে অবশ্য ৮-৪এ এগিয়ে ইংল্যান্ড। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা ৬ ম্যাচের সব ক’টিতে জয়ের অতীত আছে তাদের। অবশ্য টি-২০ বিশ্বকাপে তাদের লড়াই ২-২ এ সমতা।
আজ দিল্লীর ফিরোজ শাহ কোটলায় ফাইনালে লড়াইটা হবে কিউই স্পিন ভার্সেস ইংল্যান্ডের ব্যাটিং। আশ্চর্য হলেও সত্য, কিউই পেস অ্যাটাকের মূল অস্ত্র টীম সাউদি এবং ট্রেন্ট বোল্টকে ছাড়াই বোলিংয়ে ভয়ংকর রুপ ছড়িয়েছে নিউজিল্যান্ড চলমান টি-২০ বিশ্বকাপে। সুপার টেনে ৪ ম্যাচে নিউজিল্যান্ড বোলারদের উইকেটের সমষ্টি ৩২টি। যেখানে স্পিন ত্রয়ীর শিকার সংখ্যা ২০টি ! বাঁ হাতি স্পিনার স্যন্টনারের শিকার সংখ্যা ৯, সেখানে লেগ স্পিনার ইস সোধির উইকেট সংখ্যা ৮! ভারতে খেলতে এসে স্পিনে যে ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড! উইকেট পিছু দলটির খরচা ১২.৯৭, এখন পর্যন্ত সুপার টেনে সেরা। ওভারপিছু খরচা ৫.৯৭Ñএমন মিতব্যয়ী বোলিংয়ে বিস্ময় ছড়িয়েছে নিউজিল্যান্ড।
অন্যদিকে চলমান টি-২০ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড যেনো ব্যাটিং নির্ভর দলে হাজির। বড় রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডটি তাদেরই। শুধু তাই নয়, জো রুট, বাটলার, জেসন রয়কে ঘিরে আবর্তিত ব্যাটিং লাইন আপে সুপার টেন পর্বে ওভারপ্রতি ৯.১০ রান সংগ্রহ করেছে ইংল্যান্ড। কিন্তু বোলিংটা যে সেভাবে আশ্বস্ত করতে পারেনি দলটিকে। ওভারপ্রতি খরচা করতে হয়েছে ৮.৯৫! ইংল্যান্ডের বোলিংটা অনেকটাই যেনো সাদামাটা। সুপার টেনে ৪ ম্যাচে ইংলিশ বোলারদের উইকেটের সমষ্টি ২২টি। স্পিনটা বড়ই নাজুক দেখাচ্ছে। দুই স্পিনার মইন আলী এবং আদিল রশিদের শিকার সংখ্যা মোট ৮টি।
অবশ্য দিল্লীর ফিরোজ শাহ কোটলায় খেলার অতীত এগিয়ে রাখবে ইংল্যান্ডকে। সুপার টেনে ফিরোজ শাহ কোটলায় ২ ম্যাচ খেলে তৃতীয়বারের মতো একই ভেন্যু পাচ্ছে ইংল্যান্ড। সেখানে চলমান টি-২০ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড আজ প্রথমবারের মতো দিল্লীর সঙ্গে পরিচিত হতে পারছে। তবে ঘুরে ফিরে সুপার টেনের ৪ ম্যাচ ৪ ভেন্যুতে (নাগপুর, ধর্মশালা, মোহালী, কোলকাতা) খেলে সব ধরনের উইকেটের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে পেরেছে নিউজিল্যান্ড।
উড়ন্ত নিউজিল্যান্ড সেমিতে এসে থামতে চায় না। টি-২০ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠে ইতিহাস রচনার দিকে তাকিয়ে কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনÑ ‘আমাদের দিক থেকে দলগতভাবে ভাবে উন্নতির ধারা বজায় রাখতে চাইছি। দল হিসেবে আর মাত্র ক’ধাপ দূরে আমরা দাঁড়িয়ে। হার-জিত বড় কথা নয়, খেলাটির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে খেলতে চাই। আমাদের স্পিনাররা এই ধরনের উইকেটে অসাধারণ। তারা ইতোমধ্যে দারুনভাবে মানিয়ে নিয়েছে।’ সেমিফাইনালেও আগ্রাসী ক্রিকেটকে গুরুত্ব দিচ্ছে ইংল্যান্ড, এমনটাই জানিয়েছেন অধিনায়ক মরগানÑ‘সাদা বলের ক্রিকেটে কতোটা পথ পেরিয়ে এসেছি, তা আমার নিজের কাছেও বিশ্বাস হচ্ছে না। আমরা যে ছেলেদের নির্বাচিত করেছি, তারা অসাধারণ কিছু করে দেখিয়েছে। শক্তিধর দলগুলোর সঙ্গে খেলে এতোদূর আসা কিন্তু মোটেও সহজ ছিল না। আমাদের কাছে অনেক আগ্রাসী বিকল্প প্রস্তত আছে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন