রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

মুসলিম ঐক্য আজ বড়ই প্রয়োজন

মুফতী শামছুল হক সা‘দী আল্-হাবীবী | প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৫:২৩ পিএম, ১০ মার্চ, ২০১৮

এক

বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত মুসলিম জাতির ঐক্য আজ বড়ই প্রয়োজন। কথায় আছে একতাই শক্তি, একতাই বল। মিশকাতুল মাসাবীহ ৪২৩ পৃষ্ঠার একটি হাদীসে আছে মুসলমান মুসলমানের ভাই। তাই, ভাইদের মাঝে ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। মুসলিম উম্মাহর অস্তিত্ব উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্পর্কীয় বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে সর্বস্তরের মুসলমানের বিশেষ করে দেশের আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ, দ্বীনের সকল শাখার খাদেমদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া সময়ের দাবী। অনেক বছর আগে একটি ইসলামীক সংগিত শুনেছিলাম; “এক হও মুসলিম এক হও আজ,এক হওয়া ঈমানের মূল কারুকাজ। আল্লাহর রজ্জুকে ধর এক হয়ে...........।” ইমদাদিয়া লাইব্রেরী, চক বাজার, ঢাকা থেকে প্রকাশিত “উর্দূ কী তেছরী কিতাবের ১২৯-১৩০ পৃষ্ঠার মধ্যে লিখিত আছে ঐক্যের শক্তি: এক ব্যক্তির কয়েকজন ছেলে ছিল। এই বেআদব ছেলেরা পরস্পরে প্রতিদিন লড়াই করত। বাবা যথা সম্ভব বোঝাতেন, কিন্তু কোনো লাভ হতনা। একবার বাবা ঐ সকল ছেলেকে একত্রিত করে একটি কাঁচা তাগার চড়কি/লাটাই দিলেন এবং বললেন এর উপর নিজ নিজ শক্তি পরীক্ষা কর। প্রত্যেকে দাঁত কটমটরত অবস্থায় যথেষ্ট শক্তি প্রয়োগ করল, চড়কি /লাটাইকে একজনও ছিঁড়তে পারল না। অত:পর বাবা প্রত্যেককে একটি একটি করে কাঁচা তাগা দিয়ে বললেন একে ছিঁড়ে ফেলো। সবাই এক এক হেঁচকা টানেই নিজ নিজ তাগা ছিঁড়ে ফেললো। এখন বাবা বললেন, দেখো! কাঁচা তাগা কত দূর্বল হয়ে থাকে, কিন্তু অনেকগুলো দূর্বল মিলে এ পরিমাণ শক্তিশালী হয়ে গিয়েছে যে, তোমাদের মধ্য থেকে কেউও ওগুলোকে ছিঁড়তে পারলে না। কিন্তু যখন এই তাগা পৃথক পৃথক করে দেয়া হয়েছে তখন তোমাদের মধ্য থেকে প্রত্যকেই সবগুলোকে সহজেই ছিঁড়ে ফেললে।এমনিভাবে স্মরণ রেখো! যে, তোমরা ভাই ভাই যদি এক হয়ে মিলে মিশে থাকো তাহলে কোনো শক্র তোমাদের কোনো প্রকারের ক্ষতি পৌঁছাতে পারবে না। আর যদি একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে যাও তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তি তোমাদের উপর বিজয়ী থাকবে। আমাদের এ ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সবধরনের ক্ষতিকর অনৈক্য পরিহার করা উচিত। এজন্য পরস্পরে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি, গিবাত, শেকায়েত; হিংসা বাদ দিয়ে একে অপরের প্রকৃত বন্ধু, মঙ্গলকামী, সহযোগী, উৎসাহ প্রদানকারী, ভালাই কামনাকারী হওয়া উচিৎ। পরস্পরের মাঝে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক কায়েম করা উচিত। কেননা, মানবতার বাসযোগ্য সুন্দর এক পৃথিবী গড়তে পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কোনো বিকল্প নেই।
জলীলুল কদর সাহাবী হযরত আনাস রাযি. এর সূত্রে বর্ণিত একটি সহীহ হাদীসে প্রিয় নবী কারীম সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, পরস্পরে শক্রতা কোরো না। পরস্পরে হিংসা পোষণ কোরো না। একে অন্যের ছিদ্রান্বেষণ কোরো না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার বান্দাহ সকলেই ভাই ভাই হয়ে যাও। (সহীহ বুখারী শরীফ : ৮৯২ পৃষ্ঠা) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেছেন, মুমিন নর-নারী এক অপরের বন্ধু। [মহাগ্রন্থ আল কুরআনুল কারীম (হাফেজী) ১৯৯ পৃষ্ঠা, ১০ নং পারা, সূরা আত-তাওবাহ ৭১নং আয়াত] অতএব, ঐক্য রক্ষার খাতিরে সত্যিকারে কোনো ভুল হলে প্রকাশ্যে না বলে গোপনে হিকমতের সাথে, ইজ্জতের সাথে, আদবের সাথে বলা। “ইখতিলাফ মা‘আল ইত্তিহাদ/ইখতিলাফ মা‘আল ই’তিলাফ তথা বৈধ মতপার্থক্য সহকারে ঐক্য/ বৈধ মতপার্থক্য সহকারে পারস্পরিক মুহাব্বাত” মূলনীতি অনুসরণ করা। পারস্পরিক হামদর্দী/সহানুভূতি, ভালো ও তাক্বওয়ার কাজে সাহায্য, সহযোগীতা অব্যহত রাখা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদের কে এগুলোর উপর সহীহভাবে আমল করার এবং এক হওয়ার, সারা জীবন পরস্পরে মিলে মিশে এক থাকার তৌফিক দান করুন, আমীন।
উল্লেখ্য যে, আমার মুহতারাম শাইখ মুসলিহুল উম্মাহ আল্লামা মুফতী নূরুল আমীন সাহেব দা.বা., পীরসাহেব (সুলাইমান নগর ও জিরো পয়েন্ট) খুলনাকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, আমাদের মাশায়েখ, রুমিয়ে যামানা, কুতবুল আলম, আল্লামা শাহ্ হাকীম মুহাম্মাদ আখতার সাহেব রহ., পীরসাহেব, করাচী, পাকিস্তান), বলেন যে, দ্বীনের এক শাখার খাদেম অন্য শাখার খাদেমকে রফীক তথা বন্ধু মনে করবে, ফরীক মনে করবে না, ফরীক মানে গ্রæপ, দল, দুশমন, প্রতিদ›িদ্ব। (উদাহরণ স্বরূপ) তাবলীগওয়ালারা সূলুকওয়ালাদেরকে/তাসাওউফ, তাযকিয়া, পীর-মুরীদী ওয়ালাদেরকে বন্ধু মনে করবে। আবার সূলূক (তরীকত)ওয়ালারা তাবলীগ ওয়ালাদেরকে বন্ধু মনে করবে। আবার এরা দুজনে মিলে মাদ্রাসা ওয়ালাদেরকে/তা‘লীম ওয়ালাদেরকে বন্ধু মনে করবে। আবার এরা সবাই মিলে জিহাদ/ক্বিতাল কি সাবিলিল্লাহ ওয়ালাদের কে বন্ধু মনে করবে। এভাবে সবাই একে অপরকে বন্ধু মনে করবে। (উদাহরণ স্বরূপ) তাবলীগ তো আমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন। আমারও করার দরকার ছিল, আমি করতে পারছিনা, এটা আমার দুর্বলতা, তাই যে করছে সে আমার বন্ধু (অনুরূপ ভাবে দ্বীনের সব শাখার কাজের ব্যাপারে নিজের দুর্বলতার দিকে লক্ষ্য করে দ্বীনের অন্যান্য শাখার খাদেমদেরকে বন্ধু মনে করবে।)
দোস্ত আযিযো, দাওয়াত ও তাবলীগকে যেমন নবীওয়ালা কাজ মনে করবো অনুরূপ ভাবে তা‘লীম-তাযকিয়া, জিহাদ (ক্বিতাল) সহ দ্বীনের সকল কাজকে নবী ওয়ালা কাজ মনে করবো। আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলমী নবী (বিশ্ব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। নবীর সব কাজ আলমী/বিশ্ব কাজ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Ahmed Shakir ৯ মার্চ, ২০১৮, ১:৩৭ পিএম says : 0
yes
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন