সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

মুসলিম ঐক্য আজ বড়ই প্রয়োজন

মুফতী শামছুল হক সা‘দী আল্-হাবীবী | প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

\ শেষ \
কাজেই, আমার ভাই ও দোস্ত, তাবলীগকে যেমন আলমী কাজ মনে করবো তদ্রুপ দ্বীনের অন্যান্য কাজ তথা তা’লীম, তাযকিয়া, জিহাদ/ক্বিতাল ফি সাবিলিল্লাহ, ইত্যাদিকেও আলমী কাজ মনে করবো এবং মাশওয়ারা, বাইয়াত, ঈমান, নেক আ’মাল, জিহাদের/ক্বিতাল ফি সাবিলিল্লাহর মাধ্যমে অর্জিত ইসলামী খিলাফত প্রাপ্ত রাষ্ট্রে সিয়াসাত (ইসলামি রাজনীতি) তথা আদল-ইনসাফ শরয়ী হুদুদ তাযীর (শাস্তি) ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করাকেও আলমী কাজ মনে করবো। জিহাদকেও আমরা আলমী কাজ মনে করবো। আপনি মনে করেন বা না করেন আল্লাহ পাক মনে করিয়ে ছাড়বেন যে, জিহাদও আমার একটা আলমী কাজ, দেখেন না, এক আফগানে হামলা হয়েছে অত:পর জিহাদী আলম জারি হয়ে গেছে, তাই সারা বিশ্ব নড়ে চড়ে উঠেছেএ জিহাদ কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে, বন্ধ হবেনা। (আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং ২৫৩২)
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,আল্লাহ পাক যখন আমাকে প্রেরণ করেছেন তখন থেকে নিয়ে এই উম্মাহ্র শেষ লোকেরা দাজ্জালকে ক্বতল/হত্যা করা পর্যন্ত তথা কিয়ামত পর্যন্ত জিহাদ/ক্বিতাল চলতে থাকবে এটাকে কোন জালিমের জুলুম এবং ইনসাফকারীর ইনসাফ তথা জালিম বাদশাহর জুলুম, ইনসাফকারী বাদশাহর ইনসাফ জিহাদকে বন্ধ করতে পারবে না। (আবূ দাউদ শরীফ, মেশকাত শরীফ ১৭-১৮ পৃ:, ফয়জুল কালাম ১৫, ১৬, নং পৃ: হাদীস নং ১০।)
ভাইও দোস্ত আযিযো! তাবলীগ কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে, তা‘লীম কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে, অনুরূপ ভাবে আল্লাহর মুহাব্বত ও যিকিরের সিলসিলা (সহীহ তাসাওউফ, সূলূক, পীর-মুরিদী) কিয়ামত পর্র্যন্ত চলতে থাকবে। অর্থাৎ আল্লাহর পরিপূর্ণ দ্বীন ইসলামই কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং ২৭টি স্বশস্ত্র জিহাদে অংশ গ্রহণ করেছেন, (এবং জীবনের শেষ ৮ বছরে ছোট বড় প্রায় ১০০ জিহাদী অভিযান পরিচালনা করেছেন।) আমি করাচীতে খানকায় বসে নিজ কানে শুনেছি, আমার শায়েখ আল্লামা শাহ্ হাকীম মুহাম্মাদ আখতার সাহেব রাহ. বলেছেন তাবলীগের বিরোধীতা করা আমি হারাম মনে করি। (অনুরূপ ভাবে দ্বীনের অন্যান্য সমস্ত শাখার বিরোধিতা করাও হারাম।) তাহলে আমার আকীদা আর কি হবে? দোস্ত, শুধু তাবলীগ নয় দ্বীনের আরও যত সহীহ কাজ আছে তথা তা’লীম, তাযকিয়া, জিহাদ (ক্বিতাল ফী সাবীলিল্লাহ) ইত্যাদি ও দ্বীনের সকল সহীহ কাজ, আমার শায়খ রাহ.-এর সুহবাত ও ফয়েজের বরকতে সবগুলোর প্রতি মুহাব্বাত এবং সমর্থন সমান ভাবে রয়েছে। তরীক্বতের (তাসাওউফ ও তাযকিয়ার) আরো যতো লাইন আছে সুন্নাতযুক্ত, বিদ‘আত মুক্ত, এবং ন্যায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য হক্বের আওয়াজ বুলন্দ করার জন্য শর্ত সাপেক্ষে সহীহ তরীকায় পরিচালিত, সুন্নাত যুক্ত, বিদআত মুক্ত এবং প্রচলিত গণতন্ত্রের কুফুরী বিশ্বাস ও কর্ম থেকে মুক্ত, আল্লাহ পাক সকল ক্ষমতার উৎস এই আকীদায় বিশ্বাসী; ইসলামী হুকুমাত প্রতিষ্ঠার পক্ষে পরিচালিত (খিলাফাত আলা মিনহাজুন নাবুউওয়াত): আল্লাহর হুকুম এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তরীক্বার পূর্ণ অনুসারী, সাহাবায়ে কেরাম রাযি. তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা-বিশ্বাস পোষণকারী এবং অনুসরণকারী, সহীহ ইসলামপন্থী রাজনীতির যত লাইন আছে, সকলের প্রতি আমার মুহাব্বাত এবং সমর্থন সমান ভাবে রয়েছে (আলহামদুলিল্লাহ্)। এক কথায় দ্বীনের সকল কাজের প্রতি মুহাব্বাত এবং সমর্থন সমান ভাবে রয়েছে।
বি:দ্র: দ্বীনের সকল শাখার খাদিম ও কর্মীদের ব্যাপারে মধ্যম পন্থার মেজায (মনোভাব) বা ভারসাম্যতা হাসিলের জন্য এবং পরস্পরে নেক ও এক হওয়ার জন্য ও পারস্পারিক মুহাব্বাত, হামদর্দি, সহানুভূতি হাসিল হওয়ার জন্য “মুজাহিদে আ‘জম আল্লামা শামসুল হক ফরীদ পুরী রহ. এর জীবনী পাঠ করা জরুরী ও উপকারী।” আরো একটি চিন্তা ও বুঝার বিষয় (১) তাবলীগে গেলে বলে পিকনিক, (২) মাদ্রাসায় গেলে বলে খয়রাতি, (৩) খানকায় গেলে বলে ভন্ডামী, (৪) জিহাদে/ক্বিতালে গেলে বলে সন্ত্রাসী। এগুলো কী মুসলমানদের মাঝে ফাটল ধরানোর জন্য (বৃটিশ) ইংরেজদের তথা কাফির-মুশরিকদের ষড়যন্ত্র নয় কী? ইংরেজ তথা কাফিরদের এবং নাস্তিক (মুরতাদ), মুশরিকদের নিজেদের মধ্যে সন্ত্রাসী এবং বিশ্ব আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী থাকা সত্তে¡ও তারা নিরিহ শান্তিপ্রিয় আল্লাহ তা‘য়ালার একমাত্র মনোনিত ধর্ম “ইসলাম” এর সামনে আত্মসমর্পনকারী মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী অপবাদ চাপিয়ে দিয়ে এবং বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর মিথ্যা সন্ত্রাসী অপবাদ চাপিয়ে দিয়ে, (উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে) সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে মানবতা বিরোধী অত্যাচার জুলুম নির্যাতন করছে, তারা শিষ্টের দমন দুষ্টের পালন করছে। (যেমন- আফগান, ইরাক, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, চেচনিয়া, বসনিয়া, আরাকান, মিন্দানাও, সিংকিয়াং, ককেশাশ, কাশ্মিরসহ বিভিন্ন মুসলিম জনপদে) এহেন পরিস্তিতিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীস মুসলমান মুসলমানের ভাই (ফয়জুল কালাম হাদিস নং- ৩৩) অর্থাৎ সমস্ত মুসলমান একটি শরীরের মত। (যদি সে শরীরের কোন এক স্থানে ব্যথা পায় তাহলে সমস্ত শরীরই সে ব্যথা অনুভব করে।) এই হাদীস দুটির আলোকে এবং আল্লাহ পাকের বাণী:
অর্থাৎ মু’মিনরা পরস্পর ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে, যাতে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হও। (সূরা হুজুরাত আয়াত:১১)
অর্থাৎ তোমাদের কী হল যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই (ক্বিতাল, জিহাদ) করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিস্কৃতি দান করুন এখানকার অধিবাসীরা যে অত্যাচারী। আর আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষাবলম্বনকারী নির্ধারণ করে দিন এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দিন। (সূরা আন্ নিসা আয়াত:৭৫)
অর্থাৎ তোমরা সকলে মিলে এক হয়ে আল্লাহর রজ্জু (ইসলাম)কে ধর এবং পরস্পরে খন্ড-বিখন্ড হয়োনা অর্থাৎ নিজেদের মধ্যে ফাটল ধরায়োনা (সূরা আল ইমরান আয়াত : ১০৩) এর আলোকে সকল মুসলমানকে নেক ও এক হওয়া দরকার। থানভী রহ.-এর বিশিষ্ট খলীফা, হাফেজ্জী হুযূর রহ.-এর আহবান―দুনিয়ার মুসলিম নেক হও, এক হও।) পাশাপাশি ইংরেজ তথা কাফির, ইয়াহুদি, মুশরিক, নাস্তিক, মুরতাদ গোষ্ঠি যত লাইনে নিরিহ মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র জুলুম নির্যাতন করছে ততো লাইনে তাদের বিরুদ্ধে শিষা ঢালা প্রাচিরের ন্যায় রুখে দাঁড়ানো এবং সর্বাত্মক শক্তি প্রয়োগ করে পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করে সর্ব লাইনে তাদের যথাযথ মুকাবেলা করার জন্য ঝাপিয়ে পড়া দরকার। আল্লাহ পাক আমাদের সকল মুসলমানকে সেই তাওফীক দান করুন (আমীন) এবং ইংরেজ, কাফির, মুশরিক, নাস্তিক, মুরতাদ, ইয়াহুদিদেরকে হিদায়াত দান করুন, আর যদি কোন ভাবেই কপালে হিদায়াত না থাকে তাহলে তাদের সমূলে ধ্বংস করুন। আমীন। (অর্থাৎ : হে আল্লাহ পাক আমাদেরকে হক্বকে হক্ব বলে গ্রহণ করার এবং বাতিলকে বাতিল বলে বর্জন করার তাওফীক দান করুন। আমীন!)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন