শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

কর্তব্যের জন্য কর্তব্য সম্পাদন করতে হবে

ড. আব্দুল হাই তালুকদার | প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিএনপির অহিংস আন্দোলন দেখে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা খুব অখুশী। তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। বেগম জিয়ার সাজার পর সরকার আশা করছিল বিএনপির লক্ষ-কোটি নেতাকর্মী ঘরে বসে থাকবে না। তারা রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করবে। হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেবে। আর সুযোগমত সরকার ক‚টকৌশলে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা-হামলা শুরু করবে। আগে থেকে হাজার হাজার মামলায় সতের-আঠার লাখ আসামী হওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরা দারুণভাবে পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে। নতুন করে মামলা-হামলা দিয়ে সরকার তাদের দৌড়ের উপর রাখার পরিকল্পনা নিয়েছিল। কিন্তু বেগম জিয়ার দূরদর্শী ও সঠিক সিদ্ধান্তে বিএনপি নেতাকর্মীরা কোন হটকারী, সহিংস আন্দোলনের পথে না গিয়ে শান্তিপূর্ণ পথ ও পদ্ধতিতে আন্দোলন করছেন। ২০১৭ সাল থেকে আমি বিএনপি কর্মী হিসেবে সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছি। ফলে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে দেখছি, নেতাকর্মীদের মনোবল কতটা দৃঢ়। আমি বর্তমানে জয়পুরহাটে স্থায়ীভাবে বসবাস করছি ও সকল রকম কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছি। শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলন খুবই শৃংখলাপূর্ণভাবে পালিত হচ্ছে। মানববন্ধন, বিক্ষোভ, লিফলেট বিতরণ, স্মারকলিপি প্রদান, অবস্থান ধর্মঘট প্রতিটি কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে দেখেছি পুলিশ বাহিনীর বাধা। পার্টি অফিসের গলির মধ্যে আটক থেকে অনেক কর্মসূচি পালন করতে হচ্ছে। আমি এক লেখায় বলেছি, চিনিকলের যানজটমুক্ত সড়কে বিক্ষোভ বা মানববন্ধনের কর্মসূচি পালন করতে পারিনি। সরকারের কর্তাব্যক্তিদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে বাধা না দেবার ঘোষণা স্রেফ বাতকে বাত ঘোষণার সাথে পুলিশের কর্মকান্ডের আকাশ পাতাল পার্থক্য। পুলিশ যেন চাইছিল আমরা একটু গোলমাল-হট্টগোল করি। তাতে পুলিশের বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে ও সরকারের সম্পূর্ণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সুবিধা পাওয়া যায়। আমরা অবশ্য পুলিশের উসকানিতে পা না দিয়ে গলির মধ্যে কর্মসূচি পালন করেছি। আমরা জানি, একটু বিশৃংখলা সৃষ্টি করায় অর্থ নয়াপল্টনে কালো পতাকা প্রদর্শনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ যেভাবে বেধড়ক লাঠিপেটা, টিয়ার গ্যাস ও জলকামান ছুড়েছে, আমাদের পরিণতি সেরকম হতে পারে। পুলিশের অশুভ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। নতুন করে মামলা-হামলা ও গ্রেফতার বাণিজ্য চালাতে না পেরে পুলিশ বেগম জিয়ার সাজার তারিখের কয়েকদিন আগে থেকে গ্রেফতার বাণিজ্য শুরু করেছে। এ পর্যন্ত সাড়ে আট হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার করে রিমান্ড বাণিজ্য চালু করেছে। গয়েশ্বর রায়, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শফিউল ইসলাম বাবু, ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ ক্ষান্ত হয়নি, তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে অত্যাচার-নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। শত অত্যাচার-নির্যাতন মোকাবেলা করে বিএনপি নেতাকর্মীরা মনোবল না হারিয়ে অত্যন্ত ধৈর্য্য সহকারে শান্তিপূর্ণভাবে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। সরকার অবশ্য বেগম জিয়া নির্দেশিত অহিংস শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন দেখে খুবই অখুশী। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বা অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করতে দিতেও সরকার নারাজ। একেক সময় একেক বক্তব্য দিয়ে সরকারি কর্তাব্যক্তিরা হাসির খোরাক যোগাচ্ছেন। মিথ্যা, ভূয়া ও বানোয়াট মামলায় জর্জরিত বিএনপি নেতাকর্মীরা হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি বা হটকারী কোন কাজ না করে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পথ অনুসরণ করছেন। সেতুমন্ত্রী অবশ্য ঘরে কর্মসূচি পালন করলে কোন বাধা না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কী আজব মনমানসিকতা! রাজনৈতিক কর্মসূচি যে ঘরে বসে করা যায় না একথা কে না বোঝে। এত ঠাট্টা মশকরা করা কি কর্তাব্যক্তিদের সাজে? না তা করা উচিত? শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে বাধা না দিয়ে তাতে সহায়তা দেয়া সরকারের উচিত। এতে গণতন্ত্র বিকাশ ও বলবান হয়। গণতন্ত্রের অভাবে দেশে বহুমুখী সমস্যা সংকট তৈরি হচ্ছে।
সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট রাজনৈতিক দলগুলোর শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বাধা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী পশ্চিমা দেশের আদলে এ দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আগ্রহী। বার্নিকাট বাণিজ্যমন্ত্রীর কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছেন, ‘অবাধ নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের শর্তগুলো কেবল ভোটের দিন নয়, সব সময় নিশ্চিত করতে হয়। সবাই যাতে অংশ নিতে পারে, সভা সমাবেশ করতে পারে, সবাই যাতে নির্বিঘ্নে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি চালাতে পারে, তাও নিশ্চিত করতে হয়।’ বার্নিকাটসহ যেসব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনার বাংলাদেশে আছেন তারা সরকারের কর্মকান্ড দেখে নিশ্চয় খুশী হন না। সকল দলের সভা সমাবেশ করার অধিকার নিষ্কণ্টক নয়। পদে পদে বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে সভা-সমাবেশ করতে হয়। পুলিশ ইচ্ছা হলে অনুমতি দেয়, না হলে দেয় না। বছরে দু’একটা বড় সমাবেশের অনুমতি পাওয়া ভাগ্যের কথা। কর্তার ইচ্ছায় কর্ম সম্পাদিত হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সভা-সমাবেশের অনুমিত মিলছে না। দু’ একটা ক্ষেত্রে অনুমতি মিললেও অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকে হয়তো শেষ মুহূর্তে নিশ্চিত হওয়া যায়। এভাবে নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতার মধ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা দেখে পশ্চিমা কূটনীতিকরা নিশ্চয় খুশী হন না। সেকারণে বার্নিকাট সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে রাজনৈতিক কর্মসূচি নির্বিঘ্নে, নিশ্চিন্তে ও স্বাধীনভাবে পালন করতে পারার নিশ্চয়তা প্রত্যাশা করেন।
সরকারের কর্তাব্যাক্তিরা সকল দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রত্যাশা করেন, কেবল আগ্রহী নন গলাটিপে হত্যা করা তত্তাবধায়ক পদ্ধতি পুনঃপ্রবর্তন বিষয়ে। পশ্চিমা ক‚টনীতিকরা বাংলাদেশের নির্বাচন অনুষ্ঠান দেখে নিশ্চয় খুশী হন না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের কথা বলতে চাই না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর করুণদশা সকলকে ভাবিত করে। এইচ এম এরশাদ, ড. কামাল হোসেন প্রমুখ রাজনৈতিক নেতা নির্বাচন তামাশা দেখে বলতে বাধ্য হচ্ছেন, বাংলাদেশে নির্বাচন উধাও হয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জেলখানায় বন্দি রেখে নির্বাচনী তামাশা করা হচ্ছে। নেতাকর্মীরা মামলা-হামলায় জর্জরিত, গ্রেফতার আতংকে আতংকিত, রিমান্ডের জালায় অতীষ্ঠ, আইন আদালত ও জেলখানায় দৌড়াদৌড়িতে ব্যস্ত রেখে সরকার আনন্দের সাথে নির্বাচনী তামাশা অনুষ্ঠান করে চলেছে। নির্বাচনে নিজেদের মধ্যে মারামারি, হানাহানিতে একমাত্র ইউপি নির্বাচনে শতাধিক লোকের প্রাণহানিতে দেশ-বিদেশের রাজনীতিসচেতন মানুষ একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে চিন্তিত, ভাবিত ও উদ্বিগ্ন। বাণিজ্যমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রোলিয়া প্রভৃতি দেশের মতো নির্বাচন করতে আগ্রহী। অর্থাৎ এই সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা সরকার ভাবছে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে সরকারে থেকে নির্বাচন করে কোন দল পরাজিত হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না, একথা জোর দিয়ে বলা যায়। কে এম হাসান বিচারপতি কোনকালে বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকায় আওয়ামী লীগ তার অধীনে নির্বাচন করতে রাজি হয়নি। ফলে দু’ বছর ১/১১ এর অবৈধ সরকার জনগণের কাঁধের উপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছিল। ২০০৮ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনে ও জনদাবি ছাড়া তত্তাবধায়ক পদ্ধতির মতো সকলের প্রশংসিত ও গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি বাতিল করে নিজেদের অধীনে নির্বাচন করে আজীবন ক্ষমতায় থাকার প্রত্যাশা করছে যা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাদের অধীনে নির্বাচনের নাটক মানুষ ২০১৪ সাল থেকে প্রত্যক্ষ করছে। নির্বাচনে মারামারি কাটাকাটি, আহত-নিহতের সংখ্যা দেখে মানুষ ভয় পায়। দেশে আর ভোট হয় না। দলীয়করণের বিষময় ফল মানুষ ভোগ করছে। তাই তো ড. কামাল হোসেনের মতো প্রখ্যাত আইনজীবী ও রাজনীতিক খেদোক্তি করে বলতে বাধ্য হন, ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্র বেদখল হয়ে গেছে। জনগণ মুক্তি চায়।’ সরকার অবশ্য জণগণের মুক্তির থেকে নিজেদের কল্যাণ ও মুক্তি চায়। দীর্ঘ সময় ধরে যেসব অগণতান্ত্রিক ও কর্তৃত্ববাদী কর্মকান্ড চলছে তাতে সরকার পরিবর্তনের সাথে অরাজকতা, বিশৃংখলা, নৈরাজ্য সৃষ্টির আশংকা করে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা শংকিত। তারা শংকা প্রকাশ করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম বক্তব্য দিয়ে মাঠ গরম রাখছেন। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে শত শত লোক খুন হবে, দেশে রক্তের গঙ্গা বয়ে যাবে, দেশ জঙ্গিবাদীতে ভরে যাবে ইত্যাদি। এসব কথা বলে রাজনৈতিক ময়দান গরম করে লাভ নাই। কারণ বেগম জিয়া ২০৩০ ভিশনে খুব দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, প্রতিশোধের রাজনীতি তিনি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। কারও উপর অন্যায় আক্রোশের বশবর্তী হয়ে তিন কোন কাজ করবেন না। ক্ষমতায় এলে তিনি সকল রকম রাগক্রোধ দমনপূর্বক প্রকৃত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। সাত্যিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বলবান করতে কাজ করবেন। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে গিয়ে রক্তের হলিখেলায় মেতে না উঠে উদার মনমানসিকতা নিয়ে বিরোধী দলকে সাথে নিয়ে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করবেন। সংলাপ হবে সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠি। জাতীয় স্বার্থে যেকোন সংকটে আলাপ-আলোচনা ও সংলাপের মধ্যে দিয়ে সংকট উত্তরণে বেগম জিয়া প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
একতাবদ্ধ হয়ে বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করে নেতাকর্মীরা উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। সুখের বিষয় শান্তিপূর্ণ ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে নানারকম উসকানির মধ্যেও তারা ধীরস্থিরভাবে শান্তি বজায় রেখেছেন। দীর্ঘ নয় বছর ধরে শত অত্যাচার, নির্যাতন মোকাবেলা করেও তারা দল ত্যাগ করেননি। তাদের ঐক্যে ফাটল ধরিয়ে সরকার খন্ডাংশকে সাথে নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে যে অলীক স্বপ্ন দেখছে তা কোনদিন সফল হবে না। লড়াই সংগ্রাম বেগম জিয়ার মুক্তি ত্বরান্বিত করবে এ বোধ তাদের দৃঢ়। তাঁকে বৃদ্ধ বয়সে জেলে রেখে একজন নেতাকর্মীও সরে পড়বেন না। তাঁকে জেলে রেখে আপোস করলে তা হবে আত্মঘাতি ও বেঈমানী। এখন তাদের ব্রত হওয়া উচিত বেগম জিয়াকে ষড়যন্ত্র ও ক‚টজাল ছিন্ন করে মুক্ত করা। সকলের দায়িত্ব হলো কর্তব্যের জন্য কর্তব্য সম্পদান করা।
জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট বলেছেন, কর্তব্যের জন্য কর্তব্য করা উচিত। এক্ষেত্রে কোনো রকম আপোস করা চলবে না। উচিত কর্তব্য সম্পাদন নৈতিকতার দাবি। ধরুন, পিতা-মাতার সেবা করা আমাদের উচিত। এক্ষেত্রে সকল রকম চাওয়া-পাওয়াকে উপেক্ষা বা বিচেনায় না নিয়ে সেবা করতে হবে। কোনো কিছু লাভের আশায় পিতা-মাতার সেবা করলে এ কাজের নৈতিক মান শূন্য। পিতা-মাতার সেবা করে তাদের মৃত্যুর পর অনেক সম্পদ লাভ বা পিতা-মাতার আশীর্বাদ লাভ উদ্দেশ্য হলে কান্ট বলেছেন, এ কাজ কর্তব্যের জন্য কর্তব্য না হয়ে প্রত্যাশা পূরণের কাজ বলা যায়। লাভ-লোকসান বিবেচনার অর্থ তোমার মন জরাগ্রস্ত, ব্যাধিগ্রস্ত ও রোগাক্রান্ত। আগে মনের রোগ সারাতে হবে। পরিষ্কার মন নিয়ে কর্তব্যকর্ম নির্ধারণ করে কাজে অগ্রসর হতে হবে। ভালো কাজ করে মানসিক প্রশান্তি লাভ উদ্দেশ্য হলে এটি নৈতিক কর্ম না হয়ে লাভ-লোকসানের কর্ম হিসেব কান্ট বিবেচনা করেছেন। বেগম জিয়ার মুক্তি আমাদের জাতীয় কর্তব্য, এক্ষেত্রে বিএনপি নেতাকর্মীদের কর্তব্য হলো লক্ষ্য অর্জনে কাজ করা। বেগম জিয়ার মুক্তিতে আমি লাভবন হবো এরূপ চিন্তা করাও অনুচিত। তিনি বিনা দোষে কারাগারে থাকবেন, আর আমরা হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকব এটি অনুচিত কর্ম। আমাদের ধ্যান, জ্ঞান, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হওয়া উচিত তার মুক্তি। কোনো কিছু চিন্তা করা বা লাভের আশা করলে কাজের মান নষ্ট হবে। প্রশ্ন হলো, কাজ করতে অসমর্থ হলে বা বিরূপ পরিস্থিতিতে কাজ করতে না পারলে সেক্ষেত্রে নৈতিকতার দাবি মেটানো সম্ভব হবে কি? কান্ট বলেছেন, তোমাকে দেখতে হবে কাজটি করা উচিত কিনা। যদি দেখ কাজটি করা উচিৎ? সেক্ষেত্রে অবশ্যই তুমি করতে পারবে। তোমার করা উচিত মানেই তুমি করতে পারো। লাভ-লোকসান, তাপ-চাপ, চাওয়া-পাওয়া, দয়া-মায়া, করুণা প্রভৃতি বিবেচনা করার সুযোগ নেই। নেতাকর্মীদের বিবেচনায় নিতে হবে তাকে মুক্ত করা উচিত কিনা। সকলের বিবেক বলবে, অবশ্যই উচিত। ঔচিত্যবোধ কর্তব্যকর্ম নির্ধারণের চালিকাশক্তি। এ লক্ষ্যে লা-লোকসান বিবেচনার বাইরে রেখে কর্তব্য সম্পদানে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আর লক্ষ্য অর্জনে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করা উচিত। এ সময় অনৈক্য, বিভেদ ও মান-অভিমানের সুযোগ নেই। মনে রাখতে হবে, United we stand divided we fall.
লেখক: প্রফেসর (অব.) দর্শন বিভাগ ও সাবেক ডিন, কলা অনুষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন