শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পুঁজিবাজারে বড় উল্লম্ফন

চীন হচ্ছে ডিএসইর কৌশলগত অংশীদার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সূচক বেড়েছে দেড়শ’ পয়েন্ট : তিন বছরের মধ্যে সূচকের সর্বোচ্চ বৃদ্ধি//
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত অংশীদার হতে যাচ্ছে চীনা কনসোটিয়াম। এরআগে চীনা প্রস্তাবের বিষয়ে ৫টি ব্যাখ্যা চায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সে বিষয়ে ডিএসইর পক্ষ থেকে চীনা কনসোটিয়ামের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিএসই। এরপর চীনা কনসোটিয়ামের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসে। ডিএসই এবং বিএসইসির সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর তারা ফিরে যায় চীনে। বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, সকল শর্ত মেনেই কৌশলগত অংশীদার হতে চায় চীন। অন্য আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, গতকাল ডিএসইর তিনজন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক বিএসইসির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে কমিশনের ইতিবাচক অবস্থান রয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন পরিচালক বলেন, কৌশলগত অংশীদারের ব্যাপারে কমিশন খবুই ইতিবাচক। অন্যদিকে গতকাল ডিএসইর পরিচালনা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডিএসইর বৈঠকে কৌশলীগত অংশীদার নির্ধারণের জন্য বিশেষ সাধারণ সভার দিন ঠিক করেছে। আগামী ৩০ এপ্রিল এজন্য ডিএসইর বিশেষ সাধারণ সভা হবে। আর বুক ক্লোজিং ৯ এপ্রিল।
পুঁজিবাজারে তিন বছরে সর্বোচ্চ সূচক বৃদ্ধি : ব্যাংকের তারল্য সঙ্কট মেটাতে ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণ বা সিআরআর ১ শতাংশ কমানো এবং সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে যাচ্ছে এমন খবরে শেয়ারবাজারে ব্যাপক উত্থান হয়েছে। পাশাপাশি ডিএসই’র কৌশলগত অংশীদার চীন হতে যাচ্ছে এই খবরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরণের চাঙ্গা ভাব বিরাজ করছে। আর তাই গত বৃহষ্পতিবার থেকে উত্থানে রয়েছে বাজার। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৫০ পয়েন্ট বেড়েছে। যা একক দিন হিসেবে বিগত প্রায় তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উত্থান।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, তারল্য সংকটের কারণে গত কিছুদিন ধরেই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বড় একটি অংশ লেনদেন থেকে দূরে ছিল। তাদের নিষ্ক্রিয় আচরণের কারণে সূচকের সঙ্গে লেনদেন তলানিতে নেমে যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাজার সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাংকের কিছু আইন কানুন সংস্কারের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ে লিখিত দাবি জানায়, ঢাকা স্টক একচেঞ্জের ব্রোকারেজ এসোসিয়েশন ও মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন। তবে তাদের দাবি না মানলেও ব্যাংক মালিকদের সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সিএসআর এবং বেসরকারি ব্যাংকের সরকারি আমানত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এতে ঘুরে দাঁড়ায় শেয়ারবাজার। মূলত তারল্য প্রবাহ বাড়বে এমন আশাবাদেই গত বৃহস্পতিবার ও রোববারের এই সূচকের উত্থান। সেই সঙ্গে বাড়ছে বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আশাবাদ।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তারল্য সংকট বাড়াতে সরকার আন্তরিক এমন আশাবাদেই বৃহস্পতিবারে ডিএসইর সব ধরনের সূচক বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি। এরই ধারাবাহিকতা দেখা গেছে গতকাল। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৫০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৪৭ পয়েন্টে। যা বিগত ২ বছর ১০ মাস ২১ দিন বা ২০১৫ সালের ৯ মে’র মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া ডিএসইর ডিএসইএক্স চালুর পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সূচক বেড়েছে। এর আগে ২০১৫ সালের ১০ মে এ সূচকটি ১৫৫ পয়েন্ট বেড়েছিল। সূচকটির ১৫৫ পয়েন্টই ছিল সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। এছাড়া ২০১৫ সালের ২৫ মে সূচকটি ১৩০ পয়েন্ট বেড়েছিল। যা তৃতীয় সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ২৫ পয়েন্ট এবং ডিএসইএক্স ৪৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩৩৯ ও ২ হাজার ১৫০ পয়েন্টে।
এদিন ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২৯৮টির বা ৮৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে, দর কমে ২৫টির বা ৭ শতাংশের এবং ১৫টির বা ৫ শতাংশের দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ২০৮টির বা ৮৭ শতাংশের, কমেছে ২৫টির বা ১১ শতাংশের এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫টির বা ২ শতাংশের। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৪১ কোটি টাকা। যা আগের দিন থেকে ২৯ কোটি টাকা কম। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৭০ কোটি টাকার। সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩০ কোটি ২১ লাখ টাকার।
শেয়ার কেনায় মনোযোগি বিদেশিরা : চলতি বছরের মার্চ মাসে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিওতে শেয়ার ক্রয়ের হার বেড়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেয়ার বিক্রির তুলনায় ৫২ দশমিক ৩৬ শতাংশ শেয়ার ক্রয় করেছেন তারা। আলোচ্য মাসে বিদেশি পোর্টফোলিওতে শেয়ার ক্রয় করেছেন ৪৫৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকার। এর বিপরীতে শেয়ার বিক্রি করেছেন ২৯৯ কোটি ২৭ লাখ টাকার শেয়ার। সেই হিসাবে আলোচ্য মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয় বেড়েছে ১৫৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার বা ৫২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। তবে গত ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় লেনদেন কমেছে বিদেশি পোর্টফোলিওতে। ফেব্রুয়ারি মাসে মোট লেনদেন ছিল ৮৮০ কোটি ৭০ লাখ টাকার। যা মার্চ মাসে এসে লেনদেন হয়েছে ৭৫৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার। মার্চ মাসে নিট বিনিয়োগ বেড়েছে ১৫৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার। যা ফেব্রুয়ারি মাসে নিট বিনিয়োগ নেতিবাচক ছিল ৯৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকার। ফেব্রুয়ারি মাসে শেয়ারের পরিমাণ ছিল ৩৯৩ কোটি টাকার। আর এর বিপরীতে শেয়ার বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৮৮ কোটি টাকার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন