শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

ক্রুইফের ম্যাচ হারলো বার্সা

প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক : গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর বিতর্কিত সিদ্ধান্তে গোল বাতিল, লাল কার্ড, দর্শনীয় সব গোল এবং একটুর জন্য গোল না হওয়ার উত্তেজনাময় সব মুহূর্তÑবিশ্বের সেরা দুই ক্লাবের লড়াইয়ের সব উপাদান দেখা গেল দ্বিতীয়ার্ধে। বিরতির পর জেরার্ড পিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন কাম্প ন্যু’কে; টইটম্বুর গ্যালারিকে নিশ্চুপ করতে সময় নেননি করিম বেনজেমা। আর শেষ দিকে আসে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জয়সূচক গোল। নিজেদের মাঠে এগিয়ে গিয়েও পারল না বার্সেলোনা; রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয় হলো রিয়াল মাদ্রিদের। কাম্প ন্যু থেকে ২-১ ব্যবধানের দারুণ এক জয় নিয়ে ফিরেছে জিনেদিন জিদানের শিষ্যরা। লা লিগার মৌসুমের প্রথম ক্লাসিকোতে সান্তিয়াগো বার্নাব্যু’য়ে বার্সেলোনার কাছে ৪-০ গোলে হারের প্রতিশোধও নেওয়া হলো রিয়ালের। সেই সঙ্গে থামল লুইস এনরিকের দলের ৩৯ ম্যাচের অপরাজেয় যাত্রা।
সদ্য প্রয়াত ইয়োহান ক্রুইফ বুঝি পরপার থেকে দীর্ঘশ্বাসই ফেললেন! বার্সেলোনার এই ডাচ ফুটবল কিংবদন্তি পৃথিবীর মায়া কাটিয়েছেন খুব বেশি দিন হয়নি। তার মৃত্যুর পর প্রথমবার চিরশত্রু রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হয়েছিল স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনা। ক্রুইফ বেঁচে থাকলে নিশ্চয় মনেপ্রাণে চাইতেন ম্যাচে বার্সার জয় দেখতে। আর বার্সার ফুটবলার, কর্মকর্তা ও সমর্থকরাও মনেপ্রাণেই চেয়েছিলেন রিয়ালকে হারিয়ে সেই জয় ক্রুইফের স্বর্গীয় আত্মার উদ্দেশে উৎসর্গ করতে। কিন্তু মানুষ ভাবে এক বিধাতা ভাবেন আরেক! বার্সার সেই ইচ্ছে আর পূরণ হয়নি। ক্রুইফকে শ্রদ্ধা জানিয়ে যে ম্যাচ শুরু হয়েছিল, ঘরের মাঠে সেই ম্যাচে রিয়ালের কাছে ২-১ গোলে হেরে গেছে বার্সেলোনা।
পরিসংখ্যানের খাতায় রিয়াল মাদ্রিদের জন্য এটা শুধুই একটা জয়। কিন্তুবার্সেলোনার সঙ্গে ২-১ গোলের জয়টা রিয়ালের জন্য বোধ হয় তার চেয়েও বেশি কিছু। ন্যু ক্যাম্পেই বার্সার ৩৯ ম্যাচের রেকর্ডভাঙা অপরাজিতরথ থামিয়ে দেওয়া, বড় ম্যাচে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর নিজেকে প্রমাণ করা বা লা লিগার ম্যাড়ম্যাড়ে শিরোপাদৌড়ে একটু প্রাণ ফিরিয়ে আনাই শুধু নয়। কোচ হিসেবে জিনেদিন জিদানের বড় একটা পরীক্ষায় উৎরে যাওয়ার জন্যও।
বার্সা কিংবদন্তি ক্রুইফের স্মৃতির উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানিয়ে ন্যু ক্যাম্পে শুরু হয়েছিল ম্যাচটি। প্রথমার্ধে অবশ্য এগিয়ে যাওয়ার ভালো সুযোগ পেয়েছিল দুই দলই। ম্যাচের দ্বাদশ মিনিটে বাঁ দিক থেকে নেইমারের বানিয়ে দেওয়া বলে গোলের খুব কাছ থেকেও শট নিতে পারেননি সুয়ারেজ। ১৭তম মিনিটে বিপজ্জনক জায়গা থেকে লিওনেল মেসির ফ্রি-কিক ক্রসবারের সামান্য উপর দিয়ে যায়। দুই মিনিট পর রাকিতিচের শট ডানে শুয়ে পড়ে ঠেকান রিয়াল গোলরক্ষক কেইলর নাভাস। গুছিয়ে নিয়ে পাল্টা আক্রমণে যেতেও দেরি করেনি রিয়াল। ২৫তম মিনিটে রোনালদোর জোরাল শট ঠেকান প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক ক্লদিও ব্রাভো। কিছুক্ষণ পর রোনালদোর ফ্রি-কিক যায় ক্রসবার উঁচিয়ে। বিরতির ঠিক আগে রিয়ালের সবচেয়ে ভালো সুযোগটা নষ্ট করেন বেনজেমা। ডি-বক্সে অরক্ষিত অবস্থায় বল পেয়েও লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন ফরাসি এই ফরোয়ার্ড। ৫৪তম মিনিটে মেসির আচমকা চিপে বল উপরের ডান কোণ দিয়ে জালে ঢুকছিল, কিন্তু দারুণ দক্ষতায় কর্নারের বিনিময়ে তা রক্ষা করেন নাভাস। তবে দুই মিনিট পরই ক্যাম্প ন্যু’কে আনন্দে ভাসান জেরার্ড পিকে। গায়ে লেগে থাকা পেপেকে ফাঁকি দিয়ে দারুণ এক হেডে বার্সেলোনাকে এগিয়ে নেন এই ডিফেন্ডার। সমতা ফেরাতে সময় নেয়নি রিয়ালও। ৬২তম মিনিটে পাওয়া সুযোগটি আর নষ্ট করেননি বেনজামা। পুরো মাঠ জুড়ে খেলা মার্সেলোর বাড়ানো বলে টনি ক্রুসের শট ডেভিদ আলবার পায়ে লেগে বল খানিকটা উপরে উঠেছিল। দর্শনীয় এক ওভারহেড কিকে বল জালে পাঠান বেনজেমা।
৮০তম মিনিটে রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তে গোল পায়নি রিয়াল। মার্সেলোর ক্রসে আলবাকে পরাস্ত করে লাফিয়ে দারুণ এক হেডে বল জালে পাঠিয়েছিলেন গ্যারেথ বেল। আলবাকে ফাউলের অভিযোগে গোলটি দেননি রেফারি! টিভি রিপ্লে দেখে কোনোভাবেই এটাকে ফাউল মনে হয়নি। ৮৩তম মিনিটে সুয়ারেসকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় সার্জিও রামোসকে। তবে ১০ জনের দলে পরিণত হলেও দমে যায়নি অতিথিরা। একটু পরেই রোনালদোর শট ক্রসবারে লাগে। তবে ৮৫তম মিনিটে ঠিকই রিয়ালকে এগিয়ে দেন পর্তুগিজ এই ফরোয়ার্ড। ডান প্রান্ত থেকে বেলের দারুন ক্রস বুক দিয়ে নামিয়ে খুব কাছ থেকে নীচু শটে জালে জড়িয়ে দেন এই মৌসুমে লা লিগার সবোর্চ্চ (২৯) এই গোলদাতা।
বার্সেলোনার ‘এমএসএন’ ত্রয়ীর মধ্যে মেসিই কেবল প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পেরেছেন। অন্যদিকে ‘বিবিসি’ নামে পরিচিত আক্রমণ ত্রয়ীর সবাই জ্বলে ওঠায় যোগ্যতর দল হিসেবেই রোমাঞ্চকর এই ক্লাসিকো জিতে নেয় রিয়াল। নেপথ্যে অবশ্য বড় কৃতিত্ব কোচ হিসেবে প্রথমবারের মতো বার্সেলোনার মুখোমুখি হওয়া জিদানের।
এটি ছিল লিগে দুই দলের ফিরতি ম্যাচ। এর আগে গত নভেম্বরে ঘরের মাঠে বার্সেলোনার কাছে ৪-০ গোলে ম্যাচ হেরে লজ্জায় ডুবেছিল রিয়াল। বার্সেলোনা শেষবার হেরেছিল গত ৩ অক্টোবর। ৩৯ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর হারলেও শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে অনেক এগিয়ে আছে লুইস এনরিকের দল। তবে দুর্দান্ত এই জয়ে রিয়ালের শিরোপা জয়ের ক্ষীণ সম্ভাবনা টিকে থাকল। ৩১ ম্যাচে বার্সেলোনার পয়েন্ট ৭৬। ৭ পয়েন্ট পেছনে থেকে তৃতীয় স্থানে আছে রিয়াল। আগের ম্যাচে রিয়াল বেতিসকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দেওয়া অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ৭০ পয়েন্ট নিয়ে আছে দ্বিতীয় স্থানে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন