শামীম চৌধুরী : চলমান টি-২০ বিশ্বকাপে ফাইনাল পর্যন্ত ইংল্যান্ড আসতে পেরেছে মূলত তিন টপ অর্ডার জেসন রয়, হেলস, জো রুটের ঘাড়ে চড়ে। পাওয়ার প্লে’র প্রথম ৬ ওভারে সেমিফাইনাল পর্যন্ত তাদের ওভারপ্রতি সংগ্রহ ৯.৫০Ñএই তিন ব্যাটসম্যানের কল্যাণেই। কিন্তু ফাইনালে এসে ধাক্কাটা খেল ইংল্যান্ড পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে। ওভারপ্রতি ৬.৫০ এ আটকে ফেললো তাদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইংল্যান্ডের গর্ব টপ অর্ডারকেও এই পর্বে করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হতভম্ব ( ৩৩/৩)। যে তিন টপ অর্ডারের ওপর ছিল নির্ভার, সেই তিনজনের মধ্যে ২ জনের মৃত্যু ঘটল এই পাওয়ার প্লেতেই! তাতেই প্রত্যাশিত স্কোরের পথ হয়েছে রুদ্ধ। থেমেছে ইংল্যান্ড ১৫৫/৯ এ।
ইডেন গার্ডেনসে পছন্দের উইকেট পেয়েছে দর্শক। বল এসেছে ব্যাটে ঠিকঠাক মতো। কিন্তু এমন উইকেটে ইংল্যান্ডকে বড় পুঁজি পেতে দেয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শ্লোয়ার ডেলিভারীতে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা ধরতে পেরে সেখানেই আঘাত হেনেছে স্যামীর দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রতিটি ম্যাচে হাসিয়েছে স্পিন জুটি স্যামুয়েল বাদরি, সুলেমান বেন। কিন্তু গতকাল বাঁ হাতি স্পিনার সুলেমান বেন প্রচন্ড মার খেয়েছেন (৩-০-৪০-০)! তারপরও ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের ওপর ছড়িটা ঘুরিয়েছে লেগ স্পিনার স্যামুয়েল বাদরি। তার প্রথম স্পেলেই (৩-১-৮-২) ব্যাকফুটে ইংল্যান্ডকে নামিয়ে এনেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে স্ট্রেইটারে জেসন রয়কে বোল্ড আউটে করেছেন হতভম্ব, গুগলিতে মরগানকে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন বাদরি এই স্পেলে। ১ ওভারের প্রথম স্পেলে (১-০-১-১) পেস বোলার আন্দ্রে রাসেল হেলসকে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচের শিকারে করেছেন পরিণত।
পাওয়ার প্লে’র ধাক্কা, স্কোরশিটে ২৩/৩, এমন দুরবস্থা থেকে দলকে টেনে তুলেছেন জো রুট। চতুর্থ উইকেট জুটিতে বাটলারকে নিয়ে ৪০ বলে ৬১ রানের পার্টনারশিপে ফাইনালের আমেজ কিছুটা হলেও দিতে পেরেছে ইংল্যান্ড। সুলেমান বেনকে ৩ ছক্কায় ইডেন গার্ডেনস মাতিয়ে বাটলার ফিরেছেন (২২ বলে ৩৬) ব্রাফেটকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে খেলতে যেয়ে। ব্রেক থ্রু দেয়া এই উইন্ডিজ পেসারই ম্যাচে ইংল্যান্ডকে বড় ধরনের ধাক্কা দিতে পেরেছেন। ইতোপূর্বের ৭ ম্যাচে উইকেট সংখ্যার সমষ্টি যার মাত্র ২টি, চলমান টি-২০ বিশ্বকাপে ইতোপূর্বের তিন ম্যাচে উইকেটহীন এই ব্রাফেটই কি না গতকাল করেছেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং (৪-০-২৩-৩)! বাটলারের পর মূল্যবান শিকার তার জো রুট। টি-২০ ক্যারিয়ারে ৬ষ্ঠ ফিফটি উদযাপনের ম্যাচে ফিরেছেন তিনি উচ্চাভিলাসী শট স্কুপ করতে যেয়ে (৩৬ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৫৪)।
তার পরও প্রথম ১০ ওভারে স্কোর যাদের ৬৭/৩, নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পতনের পরও তারা শেষ ১০ ওভারে যোগ করেছে ৮৮ রান! শ্লগে ওভারপ্রতি ১২.২৭ রানের রেকর্ডটা সেমিফাইনাল পর্যন্ত ছিল ইংল্যান্ডের। সেই নিকট অতীতটাই কিছুটা টনিক জুগিয়েছে ইংল্যান্ডকে। শেষ ৫ ওভারে ওভারপ্রতি ১০ গড়ে রানে স্কোর টেনে নিতে পেরেছে ইংল্যান্ড ১৫৫/৯ পর্যন্ত। ইনিংসের শেষ দিকে এমন ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন উইলি, ডুয়াইন ব্রাভোকে এক ওভারে ২টি ছক্কায় শোভিত ইনিংসটি তার ১৪ বলে ২১।
ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিল্ডিং হয়েছে দারুণ। তিন-তিনটি অসাধারণ ডাইভিং ক্যাচ নিয়েছে উইন্ডিজ ফিল্ডাররা। সমন্বিত পেস অ্যাটাকটা ছিল কৌশলী। ৯ উইকেটের ৬টিই পেসারদের শিকার। ডুয়াইন ব্রাভো ছিলেন পেস অ্যাটাকে সেরা অস্ত্র (৩/৩৭)। স্পিনে কাবু করতে নুতন বল স্যামুয়েল বাদরিকে দিয়ে শুরুর সুফলও পেয়েছেন স্যামী। ২৪টি ডেলিভারীর ১৪টি ডট তার! পুরো ইনিংসে ৪৫টি ডট বলও ইংল্যান্ডকে প্রত্যাশিত স্কোরের পথ করেছে রুদ্ধ। স্যামুয়েল বাদরির পাশে প্রশংসা করতে হবে আন্দ্রে রাসেলকেও। ২৪টি ডেলিভারীর মধ্যে ১২টিই যে ডট করেছেন তিনি।
চলমান টি-২০ বিশ্বকাপে টস ভাগ্যটা শতভাগ থাকল স্যামীর পক্ষে। ৬ ম্যাচের সব ক’টিতেই টসে জয়, আগের ৫টি ম্যাচের মতো ফাইনালেও টসে’র সিদ্ধান্ত চেজিং ! ইংল্যান্ডের কাছে টি-২০ বিশ্বকাপে কখনো হারের রেকর্ড ছিল না ইতোপূর্বে, টসের সঙ্গে সে ভাগ্যটাও কি থাকছে পক্ষে তাদের? টি-২০ বিশ্বকাপ রোল অব অনার
আসর স্বাগতিক চ্যাম্পিয়ন রানার্সআপ
২০০৭ দ.আফ্রিকা ভারত পাকিস্তান
২০০৯ ইংল্যান্ড পাকিস্তান শ্রীলঙ্কা
২০১০ উইন্ডিজ ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া
২০১২ শ্রীলঙ্কা উইন্ডিজ শ্রীলঙ্কা
২০১৪ বাংলাদশ শ্রীলঙ্কা ভারত
২০১৬ ভারত উইন্ডিজইংল্যান্ড
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন