\ শেষ \
বর্তমানে যারা তবলীগ জামাতে আছেন তাঁরা, আমার যতটুকু জানা, ইসলাম প্রচার করছেন না, আগের দিনের সেই প্রয়োজন তেমন আর নেই বলে, বরং মুসলমানদেরকে ইসলামী জীবন যাপনের নিয়ম নীতি শেখাতে চেষ্টা করছেন। এখন তাঁদের দৃষ্টি একটা জরুরী সংকটের দিকে ধাবিত হওয়া প্রয়োজন আর সেই সংকট হচ্ছে সমাজে যৌন বিকৃতির আধিক্য, যা অশ্লীল বিজ্ঞাপনের ক্রমাধিক্যে বিস্তৃতি লাভ করছে। তাদেরকে একটা আন্দোলন গড়ে তোলতে হবে, প্রয়োজনে অতি লোভী সেই ব্যবসায়ীদের কাছে ধরনা দিয়ে, যারা বেশী লাভের লোভে অশ্লীল বিজ্ঞাপনে ঝুকচে।
ধর্মীয় বিষয়ে কখনো কখনো ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয় আর ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত মুফতিগণ তা করে আসছেন আদিকাল থেকে। এত দিন তা হয়েছিল ক্ষুদ্র পরিসরে, স্থানীয় ভাবে। কিন্তুু এখন সেদিন আর নেই। এখন আর কোন মতবাদ স্থানীয় থাকছেনা, জাতীয়, আন্তর্জাতিক হয়ে যাচ্ছে। আর মতবাদ থেকে মতভেদ ছড়িয়ে পড়ছে। এখন আমাদের ধর্মীয় বিষয়ে কোন ব্যাখ্যার প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সেমিনারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যাতে দিল্লি থেকে ঢাকায় আসা কোন আলেমকে অবরোধ করতে আমাদেরকে স্থানীয় বিপর্যয়ের কবলে পড়তে না হয়।
মুসলিম জগতের বিভিন্ন সমস্যাবলী, বিশেষ করে ১৯২৪ সনে ‘খেলাফত’ উচ্ছেদের পর সৃষ্ট সংকট সমূহ কি ভাবে মোকাবেলা করা যায় তা চিন্তায় রেখে আমি প্রথমে ইংরেজীতে আর পরে বাংলায় কিছু লেখি। আমার ইংরেজী লেখাটা The Muslim World needs Leadership and Guidance’ শিরোনামে দৈনিক বাংলাদেশ অবজারভারের সাপ্তাহিক ম্যগাজিনে প্রকাশিত হয় ২৪ জানুয়ারী ২০০৩ সনে। আর একই লেখার বাংলা সংস্করণ ‘উম্মাহ্র জন্য এখন প্রয়োজন একটি কেন্দ্রীয় কর্ত্তৃত্ব’ শিরোনামে প্রকাশিত হয় দৈনিক ইনকিলাব এ ১৭, ১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই ২০০৫ সনে। বাংলা লেখাটার এক স্থানে লিখেছিলাম :
“শরীয়া পরিষদ: বিভিন্ন দেশের ফকিহ ও মোহাদ্দেস গণের সমন্বয়ে শরীয়া পরিষদ গঠন করে শরীয়তের বিভিন্ন বিধান নিয়ে বর্তমানে যে সব বিষয়ে এলোপাতাড়ি ফতোয়া দেয়া হচ্ছে বা মতবাদ দেখা দিচ্ছে সে সব বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা প্রদান।” আন্তর্জাতিক ভাবে যতসব শরিয়তি বাক বিতন্ডার অবসান করতে কোন উপায়ান্তর আছে কি ?
আমার সেই লেখাটায় অমি প্রস্তাব করেছিলাম এমন একটা বিশ্ব-মুসলিম সংস্থার যা হবে একটা গণতান্ত্রিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশসমূহের সমন্বয়ে গঠিত ‘খেলাফত’ যার অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সমূহ বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের সর্ববিষয়ে একটা নিয়ন্ত্রক কাঠামোয় রাখবে। ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন মুসলিম-প্রধান দেশের রাষ্ট্রদূত গণের কছে সেই লেখাটা পাঠিয়ে ছিলাম। একমাত্র নাইজিরিয়ার হাই কমিশনার তাঁর ৮ জুন, ২০০৩ তারিখের পত্রে আমার লেখার প্রাপ্তি স্বীকার করেন। এখন মুসলিম প্রধান রাস্ট্র সমূহের যে একটা কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান আছে তা শুধু মধ্যে মধ্যে অনুষ্ঠিত সভায় আর খানাপিনায় সমাপ্ত হয়, কারো কোন উপকারে আসেনা। সৌদী আরবের মত ধনী দেশ হযরত শাহজালালের জন্মভূমি ইয়েমেন দেশে এমন অত্যাচার করছে যে লক্ষ লক্ষ লোক ক্ষুধায় কাতরাচ্ছে, কলেরায় ভোগছে। বছরের পর বছর যুদ্ধে ইরাক, সিরিয়া ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছে। সৌদী আরব আর মিশর আল্লামা ইউসুফ আল-কারযাভীর মত একজন বিখ্যাত, সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমকে শত্রæ বিবেচনা করছে। এই আল্লামা আল-কারযাভীর ‘আল-হালাল ওয়াল হারাম ফিল ইসলাম’ গ্রন্থটি একটি বিরাট গবেষণার ফল, বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়ে মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবন যাপনে বিরাট উপকারে আসছে। বাংলাদেশে এই গ্রন্থের অনুবাদ করেন বিখ্যাত আলেম মৌলানা মোহাম্মদ আব্দুর রহিম ১৯৮৪ সনে। আমাদের, বিশ্ব-মুসলিমের যদি একটা কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান থাকত তাহলে সঠিক লোকদের সম্মিলিত আলোচনায় সিদ্ধান্ত হত কে ঠিক আর কে বেঠিক।
এখন যে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে কতিপয় সন্ত্রাসী ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে ওংষধসরপ ঝঃধঃব প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড চালাচ্ছে, তাতে মুসলিম জনগণের শুধু বদনামই হচ্ছে, কোন লাভ হচ্ছেনা। আমাদের দরকার একটা নিরস্ত্র সংগ্রাম, একটা একতাবদ্ধ কাঠামো, যা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন “ইন্নামাল মুঃমিনুনা ইখওয়াতুন” অর্থাৎ মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই (সুরা : হুজুরাত, আয়াত ১০)। আমরা যেন আল্লার বাণী অনুসরণ করি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন