সিলেটে তাবলিগের দুই পক্ষে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বদিকোনায় তাবলিগের সা’দ পন্থীদের এক আয়োজনকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে এ উত্তেজনা। এই আয়োজনের প্রতিবাদে এবং এটি বন্ধের দাবিতে শুক্রবার দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুলে অবস্থান ধর্মঘটের ডাক দেয় বিপক্ষ। তুমুল উত্তেজনায় সংঘর্ষের আশঙ্কায় চন্ডিপুল ও ধরাধরপুরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের বক্তব্য হল অবস্থান ধর্মঘট বা কোনো ধরনের কর্মসূচির অনুমতি কেউ নেয়নি। তবু ও যাতে কোন সংঘর্ষের ঘটনা না ঘটে সে জন্য পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
ভারতের মাওলানা সাদের অনুসারী তাবলীগ জামাআতের অবস্থান দক্ষিণ সুরমার বদিকোনায়। সেখানে গত বৃহস্পতিবার সাদের অনুসারীদের সাথীদের জমায়েতের আয়োজন করা হয়। এই আয়োজনকে ‘দোআ মাহফিল’ উল্লেখ করে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশকে লিখিতভাবে অবগত করে অনুমতি নেন আয়োজকরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেন দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল। এদিকে, এই আয়োজনকে ‘সিলেট জেলা ইজতেমা’ আখ্যা দিয়ে শুক্রবার দিনভর ফেসবুকে প্রচারণা চালান সাদপন্থী অনেকেই। বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব ‘আব্দুল্লাহ শাকিল’ নামের এই আইডি থেকে বদিকোনার এই আয়োজনকে ‘ইজতেমা’ উল্লেখ করে তাদের বক্তা আলেম ওয়াসিফুল ইসলামের উদ্বোধনী বয়ান অডিও লাইভ প্রচার করা হয়। এদিকে, এসব বিষয় ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সিলেটের আলেম সমাজ ও তাবলীগের অপরপক্ষের সাথীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। উদ্ভত পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বাদ এশা সিলেটের তাবলিগি মারকাজ খোজারখলায় মদিনাতুল উলুম দারুস সালাম মাদরাসার মুহতামিম ও জেলা উপদেষ্টা শায়খুল হাদিস মাওলানা ওলীউর রহমানের সভাপতিত্বে এক পরামর্শসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলার জিম্মাদার সাথী ও বিভিন্ন মাদরাসার দায়িত্বশীলগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়- বদিকোনায় মাওলানা সাদ অনুসারী তাবলিগ জামাআতের এই আয়োজনের বিরুদ্ধে এবং এটি বন্ধের দাবিতে শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুল পয়েন্টে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করা হবে। পরবর্তীতে সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে আঞ্জুমানে খাদিমুল ক্বোরআন আয়োজিত তাফসির মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলিপুরি এই কর্মসূচি পালন করার জন্য সিলেটের ধর্মপ্রাণ মানুষদের আহ্বান জানান এবং কর্মসূচিতে নিজে উপস্থিত থাকবেন বলে ঘোষণা দেন। এ বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে মোবাইল ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে আল্লামা ওলিপুরির ছেলে মাওলানা কামরুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। এ প্রসঙ্গে তেতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. উসমান আলী বলেন, বদিকোনার তাবলিগি মারকাজের মুুরুব্বিরা এখানে তারা একটি দোয়ার মাহফিলের আয়োজন করেছেন বলে আমাদের দাওয়াত দিয়েছেন। ‘ইজতেমা’ বলে দাওয়াত দেননি। অপরপক্ষের কর্মসূচির বিষয়েও তিনি কিছু জানেন না । বদিকোনার আয়োজনের বিষয়ে মাওলানা সাদ অনুসারীদের দায়িত্বশীল সুয়েজ আফজল খান ইনকিলাবকে বলেন, আমরা আল্লার রাস্তায় দ্বীনের কাজে নেমেছি। আমরা বিভেধ নয় ঐক্য চাই। আমাদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। যারা বিরোধীতা করার চেষ্টা করছেন তারা ভুল বুঝছেন। ভুল বুঝাবুঝির অবসান চাই।