মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

চট্টগ্রামে সেমিনার- দেশে হেড ইনজুরিতে মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব বাড়ছে

| প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : মাথায় আঘাতজনিত কারণে (হেড ইনজুরি) দেশে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, অনেকে পঙ্গু হয়ে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছে। এতে করে দেশের অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। পরিবার ও সমাজে পঙ্গু ও কর্ম অক্ষম মানুষের বোঝা বাড়ছে। সুষ্ঠু সড়ক ব্যবস্থাপনা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, জনসচেতনতা এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এ ধরনের মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব কমিয়ে আনা সম্ভব। নগরীতে অনুষ্ঠিত ‘হেড ইনজুরি ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক এক সেমিনারে এমন অভিমত ব্যক্ত করা হয়। গত সোমবার চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতালে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডাঃ নোমান খালেদ চৌধুরী। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দেশের খ্যাতিমান নিউরোসার্জন প্রফেসর ডাঃ এল এ কাদেরী। চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাঃ মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ডাঃ আনিসুল ইসলাম, ডাঃ সাইফুল আলম, ডাঃ কাউসার আলম প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে প্রফেসর ডাঃ নোমান খালেদ চৌধুরী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা, অনিরাপদ নির্মাণ কাজ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, অসচেতনতাসহ নানা কারণে মাথায় আঘাতের ঘটনা ঘটছে। হাসপাতালে মাথায় আঘাতজনিত কারণে যেসব রোগী ভর্তি হচ্ছে তাদের বিশাল একটি অংশের বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছর, অর্থাৎ তারা কর্মক্ষম। মাথায় আঘাতের কারণে এদের বেশিরভাগেরই মৃত্যু হচ্ছে, অনেকে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন। এতে করে সমাজে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবার, সমাজ ও দেশের অর্থনীতিতে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গড়ে ২৩০ জন হেড ইনজুরি রোগী ভর্তি হচ্ছে। অথচ এখানে বেড রয়েছে মাত্র ৪৫টি, যদিও এখন এ সংখ্যা ৯০টি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১০ জেলার জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি। এ বিপুল সংখ্যক মানুষ চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। চট্টগ্রাম মহানগরীতে দুর্ঘটনা, সহিংসতা এবং ছিনতাইকারীর হাতে হেড ইনজুরির ঘটনা বাড়ছে।
অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যেও হেড ইনজুরি রোগীদের সারিয়ে তোলার চেষ্টা চলছে। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতা এবং অসচেতনতার কারণে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের হার কমিয়ে আনা যাচ্ছে না। হেড ইনজুরি রোগীদের বিরাট অংশ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত। এরপরে রয়েছে মারামারি, সংঘাত-সহিংসতার শিকার লোকজন। অনিরাপদ নির্মাণ কাজের কারণেও প্রতিনিয়ত নির্মাণ সামগ্রী পড়ে এবং ভবন থেকে পড়ে শ্রমিক এবং সাধারণ মানুষ মাথায় আঘাত পাচ্ছেন। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে এনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা গেলে এ ধরনের মৃত্যু এবং পঙ্গুত্ব কমে আসবে। তিনি বলেন, সড়ক ব্যবস্থা দেখে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। আবার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। এ দু’টি মন্ত্রণালয়ের অব্যবস্থাপনার শিকার যারা তাদের চিকিৎসা দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ ধরনের দুর্ঘটনা কমাতে তিনি সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
প্রধান অতিথি ডাঃ এল এ কাদেরী বলেন, মাথায় আঘাতজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এ সংখ্যা কমিয়ে আনতে হলে সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে হবে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। এর পাশাপাশি হাসপাতালগুলোতে হেড ইনজুরি রোগীদের জন্য অতিরিক্ত বেড সংযোজনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম নিশ্চিত করতে হবে। দুর্ঘটনা বা অন্য কোন কারণে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত রোগীদের হাসপাতালে নেয়ার পথে সতর্কতা অবলম্বন জরুরী বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাথা কিংবা হাড়ে আঘাতপ্রাপ্ত রোগীদের হাসপাতালে নেয়ার সময় কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হয়। তা না হলে সামান্য আঘাতেও বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তিনি এ বিষয়ে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচির উপর গুরুত্বারোপ করেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন