আধুনিক জীবনযাপনে হার্টের সমস্যা আর স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে। হাসপাতাল থেকে নার্সিংহোম, একটু ঘুরলেই এর বাস্তবতা চোখে পড়ে। কাজের চাপ ও সংসারের বাড়তি স্ট্রেস এর জন্য অনেকখানি দায়ী। কাজের চাপের পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর খাবার আর দূষণ দারুণ সমস্যা তৈরি করছে। সেই সঙ্গে কাজের তোড়ে কমছে শরীরচর্চা। সব মিলিয়ে কমবেশি চাপের মুখে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। চাপ আর শারীরিক সমস্যার প্রতিবিধান দিতে চিকিৎসকদের পরামর্শ খাদ্যের ওপর নজর রাখুন। অনেক রোগের ঝুঁকি নাকি কমানো যায় ডায়েটের রকমফের করে। কোন খাবার খেলে ভালো, আর কোনটা ভালো না- এনিয়ে নানা সময়ে নানা কথা শোনা যায়। ডিমের পক্ষে একসময় যেমন প্রচার ছিল তুঙ্গে, মাঝে ডিম খাওয়া নিয়ে নানা রকমের সতর্কবার্তাও শুনতে হয়েছে। এবারে আবারও ডিমের পক্ষে রায় দিয়েছেন চিকিৎসকরা। আবার ব্রেকফাস্টে রোজ ডিম খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, ডিমের মধ্যে থাকা উচ্চমানের প্রোটিন নাকি স্ট্রোকের ঝুঁকিকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের এপিডস্টাট ইন্সটিটিউটের গবেষক আলেকজান্ডার সম্প্রতি এমনটাই জানিয়েছেন। ডমিনিকের দাবি, একটা ডিমের মধ্যে থাকা ছয় গ্রাম উচ্চমানের প্রোটিন, লুটেন ও জেক্সানথিনের মােত অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। এছাড়া, ডিমের কুসুমে রয়েছে ভিটামিন এ, ই এবং ডি। তেলে দ্রবণীয় এই ভিটামিন রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে দারুণ সাহায্য করে। পরীক্ষাকালীন প্রমাণও দিয়েছেন ডমিনিক আলেকজান্ডার। ১৯৮২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সিস্টেমেটিক রিভিউ এবং মেটা-অ্যানালিসিসের ওপর ভিত্তি করে গবেষণাটি চালানো হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ানোর জন্য অনেক চিকিৎসকই এতদিন মনে করতেন ডিম হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। ডমিনিকের নতুন গবেষণা কিন্তু বলছে একেবারে উলটো কথা। গবেষণা তথ্য বলছে-ডিম খাওয়ার সঙ্গে হার্টের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সরাসরি কোনো সম্পর্কই নেই। গবেষণার ভিত্তিতে ডমিনিক হাতেনাতে দেখিয়ে দিয়েছেন ডিমের সঙ্গে হৃদরোগের কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই।
ডিম এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্যকর খাবার। দামে সস্তা এই সহজলভ্য প্রোটিন উৎসকে যে-কোনো পরিস্থিতিতে নেওয়া যায়। গোটা বিশ্বেই যেখানে সেখানে মেলে ডিম। অন্যান্য খাবারের মতো ডিম তৈরি করে খেতে কোনো বাড়তি রন্ধন প্রক্রিয়াকে অবলম্বন করতে হয় না। সামান্য ভেজে নেওয়া থেকে পানিতে সেদ্ধ করে নিলে মাঠেঘাটে যেখানে খুশি খাওয়া যায়। পুষ্টিতে ভরপুর ডিম নিয়মিত খেলে শরীরের নানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। সেই সঙ্গে বাড়ে দৃষ্টিশক্তি। ডমিনিকের গবেষণালব্ধ ফলাফল জার্নাল অব দ্য আমেরিকান কলেজ অব নিউট্রিশনে প্রকাশিত হওয়ার পরেই আবারও ডিম নিয়ে নতুন করে আশা জাগছে। আকজের এই দুর্মূল্যের বাজারে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মানুষদের ডিম ছাড়া আর সুষম প্রোটিন জোটে না। ডিম নতুন করে পুরানো আসনে ফেরায় অনেকেই মনে মনে আনন্দ পাচ্ছেন। তবে কোলেস্টেরলের ভয় এখনো কাজ করছে অনেকের মনে। কিন্তু যাঁরা শারীরিক পরিশ্রম করেন তাঁদের ক্ষেত্রে সেই ভয় এক শতাংশও নেই।
আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন