ধান উদ্ধৃত্ত জেলা হিসেবে পরিচিত নেত্রকোনায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মওসুমে নেত্রকোনা জেলায় ধান আবাদের লক্ষ্যেমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর জমি। শেষ পর্যন্ত আবাদ করা হয় ১ লক্ষ ৮৪ হাজার হেক্টর জমি। গত বছর অকাল বন্যায় হাওরের বোরো ধান সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে গিয়েছিল। গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে এ অঞ্চলের কৃষকরা দার দেনা করে আবাদযোগ্য সমস্ত জমিতে বোরো ধান রোপন করে। সময়মতো সার, প্রয়োজনীয় সেচ ও নিড়ানি দেয়ায়, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং রোগ বালাইয়ের প্রকোপ না দেখা দেয়ায় নেত্রকোনায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবারও অকাল বন্যার আশংকায় সরকারের নির্দেশে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যায়ে ১৭৩টি পিআইসি’র মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ ও ভেঙ্গে যাওয়া বাধ গুলো সংস্কার করে। স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর মনিটরিং থাকায় এ বছর বাধের কাজ অনেক ভাল হয়েছে। অকাল বন্যা দেখা না দেয়ায় হাওরাঞ্চলের কৃষকরা তাদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমেরসোনালী ফসল ঘরে তুলতে গিয়ে শ্রমিক সংকটে পড়ে। আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখা দেয়ায় উদ্বিগ্ন কৃষকরা অতিরিক্ত মজুরী দিয়ে হাওরের ফসল শেষ পর্যন্ত ঘরে তুলতে সক্ষম হলেও ধানের দাম কম হওয়ায় তারা হতাশ। খালিয়াজুরী উপজেলার চাকুয়া ইউনিয়নেরলেপসিয়া গ্রামের কৃষক আবুল মিয়া বলেন, গত বছর আগাম বন্যায় এক ছটাক ধানও ঘরে তুলতে পারি নাই। এবার মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ৮০ কাটা জমি করেছি। জমিতে ভাল ফলন হলেও ধানের দাম কম থাকায় উৎপাদন খরচও উঠছে না। সারা বছর পরিবার পরিজন নিয়ে কিভাবে চলব ভেবে পাচ্ছি না। মোহনগঞ্জ উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামের জামাল মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এক মন ধান উৎপাদন করতে খরচ হয় প্রায় ৭ শত টাকা, সেখানে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে সাড়ে ৫ শ থেকে ৬ শ টাকায়। গরীব কৃষকের দিকে সরকারের কোন সুদৃষ্টি নাই। মদন উপজেলারগোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের গোবিন্দশ্রী গ্রামের কৃষক আবুল হাশেম জানান, ধান কাটা শ্রমিকের টাকা ও মহাজনের ঋণ দেয়ার জন্য পানির দরে ধান বেচতাছি। সরকার ধানের দামটা কিছুডা বাড়াইলে আমরা কোন রকমে খেয়ে পড়ে বেচে থাকতে পারতাম। বর্তমানে উঝান এলাকায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। অব্যাহত ভারী বৃষ্টিপাত ও বজ্রপাতের কারণে ধান কাটার শ্রমিকরা সহজে হাওর বা বিলে যেতে চাচ্ছে না। ফলে বিপাকে পড়েছে জমির মালিকরা। টানা বৃষ্টিপাত ও শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকরা ঠিকমতো ধান কাটা, মাড়াই, সিদ্ধ ও শুকাতে পারছে না। খাল, বিল, নদী, নালাগুলো ক্রমশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি দ্রæত নামতে না পারায় জেলার অনেক স্থানে বিশেষ করে নিন্মাঞ্চলগুলোর অনেক জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের দুল্লী গ্রামের কৃষক সবুজ মিয়া বলেন, অনেক স্বপ্ন ছিল, ধান ঘরে উঠলে এবার ধুমধাম করে মেয়েকে বিয়ে দেব। ছেলে মেয়েদের ভাল জামা কাপড় কিনে দিব। কিন্তু ধানের দর কম থাকায় সেই স্বপ্ন ভেস্তে যেতে বসেছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো সোহরাব হোসেনের মোবাইলে বার বার যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় ধান চাল সংগ্রহ অভিযান সম্পর্কে কোন তথ্য দেয়া সম্ভব হয়নি।
জেলা প্রশাসক মো মঈনউল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আগামীকাল এ ব্যাপারে মিটিং আছে। মন্ত্রনালয় থেকে বরাদ্দ পেলেই দ্রুত ধান চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন