শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

ভারতের মাটিতে পূর্ণাঙ্গ সিরিজের দাবি বিসিবি’র

প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী  : বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদার সমর্থকই শুধু নয়, বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টেরও অংশীদার ভারত। অথচ, ২০০০ সালের ১০ নভেম্বরে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে প্রতিপক্ষ হয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বিসিসিআই (বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া) পক্ষ থেকে যতোটা সহযোগিতার সম্ভাবনা দেখেছে বিসিবি, সে সহযোগিতা কিন্তু পায়নি। ২০০১ সালে আইসিসি প্রবর্তিত এফটিপি (ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম) থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের স্বার্থ উপেক্ষা করে আসছে বিশ্বের সবচেয়ে ধনাঢ্য ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই। এফটিপি প্রবর্তনের সঙ্গে হোম এন্ড অ্যাওয়ে ট্যুর শর্ত হিসেবে আইসিসিজুড়ে দিলেও ভারতীয় বোর্ড সর্বশেষ ২টি এফটিপিতে (২০০১-৫,২০০৬-১২) তা অনুসরণ করেনি। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে আতিথ্য দেয়নি একবারও। চলমান এফটিপিতে (২০০১৪-২০২০) সেখানে ভারত ১টির বেশি টেস্ট খেলতে বাংলাদেশ দলকে আতিথ্য দেয়ার পক্ষে নয়। তাও আবার বাংলাদেশের হোম সিরিজ থেকে একটি টেস্ট কর্তন করে, সেই কর্তিত টেস্টটি তাদের মাঠে আয়োজন করতে চায় ভারত।
টেস্ট মর্যাদার ১৬ বছর পর ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ দল, এমন সুযোগকে বড় করে দেখার কিছুই নেই। কারণ, সর্বশেষ ২টি এফটিপির তুলনায় চলমান এফটিপিতে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ সংখ্যা তুলনামুলক কম। ইতোপূর্বের ২টি এফটিপিতে ভারতের বিপক্ষে ৩টি টেস্ট সিরিজ ২টি ওয়ানডে সিরিজ এবং ২টি ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ বিসিবি আয়োজন করলেও চলমান এফটিপিতে সেখানে ভারতের বিপক্ষে হোম এন্ড অ্যাওয়ে মিলে মাত্র ২টি টেস্ট এবং ৬টি ওয়ানডে ম্যাচে সীমাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। ভারতকে নিয়ে একটিও ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ আয়োজনে বিসিসিআই’র সহযোগিতা পায়নি বিসিবি। পড়শী দেশ বলে দ্বি-পাক্ষিক সফরসূচীতে ভারতের সহযোগিতা যেখানে পাবার কথা, সেখানে এফটিপি প্রবর্তনের পর গত ১৬ বছরে ভারতের বিপক্ষে দ্বি-পাক্ষিক সফরসূচীতে মাত্র ৭টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। চলমান তৃতীয় মেয়াদের এফটিপি বহাল থাকলে ২০ বছরে দ্বি-পাক্ষিক সফরসূচীতে ভারতের বিপক্ষে মাত্র ৮টি টেস্টে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে।
বাংলাদেশ দল ইতোমধ্যে যেখানে খেলেছে ৯৩ টেস্ট, সেখানে ভারতের বিপক্ষে সংখ্যাটা (৭টি)  দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সবচেয়ে কম টেস্ট (৪টি ) খেলেছে বাংলাদেশ ১৬ বছরে,  তার পরের স্থানটিই ভারত। আইসিসি’র সভায় আলোচনার টেবিলে বসে ভারতের সহানুভূতি পায়নি বিসিবি। এমনকি বিসিসিআই’র আমন্ত্রিত হয়ে অসংখ্যবার ভারত সফরেও লাভ হয়নি। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে বিপণন তেমন হবে না, এই ধুয়া তুলে বার বার উপেক্ষা করা হচ্ছে বাংলাদেশকে। তবে এক্ষেত্রে বিসিসিআইকে নয়, অভিযোগের তীর বিসিবি ছুঁড়েছে ব্রড কাস্ট প্রতিষ্ঠানকেÑ ‘এখন ব্রডকাস্টরা অনেক বেশি ক্ষমতাধর। কাদের সঙ্গে সিরিজ খেলে আর্থিকভাবে লাভ ক্ষতি কতোটা, তা নির্ধারন করে দেয় তারা। কার বিপক্ষে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ খেলতে হবে সেটাও তারা নির্ধারন করে দিচ্ছে। মূলত: বিসিসিআই বাংলাদেশকে আতিথ্য দিতে পারছে না তাদের প্রতিবন্ধকতার  কারনেই।’  
২০০৬ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে পূর্ণাঙ্গ সিরিজে আতিথ্য দেয়ার আশ্বাস দিয়েও শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করেছে বিসিসিআই। বাংলাদেশের মাটিতে ভারতকে নিয়ে সিরিজ আয়োজনে বরং আর্থিকভাবে লাভবান হবে বিসিবি, এটাই বিসিবি’র মাথায় দিয়েছে ভালভাবে ঢুকিয়ে বিসিসিআই। ২০১৪ সালে শ্রীনিবাসনের নেতৃত্বে ‘ বিগ থ্রি’ আইসিসি’র রাজস্ব ভাগাভাগির নিয়মে পরিবর্তন এনে, প্রতিপক্ষ অন্য ৭টি টেস্ট প্লেয়িং দেশকে কোনঠাসা করায় এফটিপির উদ্দেশ্যটাই খেয়েছে ধাক্কা। নিজেদের পছন্দের শ্লটে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এবং ভারত নিজেদের মধ্যে চলমান মেয়াদের এফটিপিতে সফরসূচী ঠিক করায় অন্য ৬টি টেস্ট প্লেয়িং দেশের মতো বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশও। তবে এফটিপিতে ভারতের বিপক্ষে নুতন করে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিসিবি’র সিইও নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন। গত ৩ এপ্রিল কোলকাতার ইডেন গার্ডেনসে টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল দেখতে আমন্ত্রিত বিসিবি প্রতিনিধি দল এ ব্যাপারে আলাপ করে বিসিসিআই’র পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে বলে জানিয়েছেন বিসিবি সিইওÑ ‘অনুরাগ ঠাকুর (বিসিসিআই সচিব) লম্বা সময় দিয়েছেন আমাদেরকে। আমাদের ব্যাপারে তিনি পজিটিভ। ভারতের মাটিতে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ আয়োজনের সম্ভাবনা নিয়েও কথা উঠেছে। বলেছেন এটা তোমাদের প্রাপ্য। আশা করছি চলমান এফটিপিতে ভারতের মাটিতে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ বাংলাদেশ দল খেলতে পারবে।’
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ আয়োজন আর্থিকভাবে লাভজনক হওয়ার পরও বছরের পর বছর দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে পাকিস্তানকে আতিথ্য দিচ্ছে না যারা, বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ আয়োজনে ভর্তুকি গুনতে হবে যাদের, তারা কি করে চলমান এফটিপিতে বাংলাদেশকে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে আমন্ত্রণ জানাবে? তাছাড়া চলমান এফটিপিতে ফাঁকা শ্লটটা কই তাদের?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন