বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাহিত্য

ভাঙন ও প্লাবনের মুখে প্রণয়ের ঢেউ

প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কালিন্দীর কূলে
ওদের দুঃখ দেখার কেউ নেই। নদীতীরে বসবাসরত বঞ্চিত মানুষের কান্না শোনার কেউ নেই। ওরা বঞ্চিত, নিন্দিত! ওরা অশিক্ষিত ও অবহেলিত। তাই সভ্য ও ভদ্র সমাজে ওদের ঠাঁই নেই।
মহাকালের ঢেউয়ে ঢেউয়ে দুলে দুলে তাদের জীবন চলে দুখের বোঝা বয়ে। মেঘনার তীরবর্তী বিলাসপুরের নৈমদ্দি জেলের ছেলে বাবর কী এমন ভুল করেছিল নি¤œ ও দারিদ্র্য কুলজাত পরিবারে জন্ম নিয়ে? নদীতে মাছ ধরে পেটের অন্ন যোগায় বলে, সে কি মানুষ নয়? তার ভাঙাঘরের ফাঁক দিয়ে নক্ষত্রের কিরণ এসে আঁছড়ে পড়ে বলে, মনের ঘরে কি প্রেমের প্রদীপ জ্বলতে পারে না? মালতীকে ভালোবেসে কী এমন ভুল করেছিল যে, ভাগ্য তাকে পথে নামিয়ে দেয়!
বিবিধ অসাম্যের অত্যাচারে বঞ্চিত মানুষ যুগ যুগ ধরে নিগৃহীত হচ্ছে! তবু প্লাবন ও ভাঙনের ত্রিমোহনায় বসে তারা সুখের স্বপ্ন দেখে, উপরে উঠতে প্রাণপণ লড়াই করে দিন-রাত...
কথাসাহিত্যিক আহমেদ উল্লাহর ‘কালিন্দীর কূলে’ উপন্যাসটি মূলত নদীতীরবর্তী বঞ্চিত মানুষের জীবনালেক্ষ্য। নদীতীরবর্তী দুই কূলে অবস্থিত বিলাসপুর এবং শ্রীপুর গ্রামের মানুষের যাপিত জীবনচিত্র। চর দখল নিয়ে রক্তপাত, সামাজিক বৈষম্যতা, প্রেম-বিরহ এমনকি আঁধারে নিমজ্জিত মানুষের লক্ষ্যহীন পথে ছুটে চলার অসহায়ত্ব চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। তাছাড়াও জন্ম-জন্মান্তরের বিরহ বিষাদ যুগোপযোগী করে লেখক প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছেন।
উপন্যাসের নায়ক বাবরের শেষ জীবনের করুণ আহাজারিতে তা প্রকাশ পেয়েছেÑ ‘কত কাঁটাভরা পিচ্ছিল বিরহের পথ পাড়ি দিয়ে এসে কূল খুঁজে পেয়েছিলাম কালিন্দীর কূলে...!
বিরহের বানে ভেসে ভেসে পাড়ি দিয়ে এসেছি কত স্রোতস্বিনী, ঢেউয়ে ঢেউয়ে বুক ভাসিয়ে সাঁতরে বেড়িয়েছি কত অসীম জলদী! শোনেছিÑ তুমি নাকি মেঘমালা হয়েও শূন্যে ভেসে বেড়াও পরমানন্দে! শুভ্র কুয়াশায় মিশে প্রকৃতির আঙিনায় অনুরাগের আঁচল পেতে ডাকো আমারে! নিবিড় পর্বতারণ্যের ধ্যনময়ী নীরবতায় তোমার কণ্ঠ বেজে ওঠে মনহরী সুরের মূর্ছনায়!
মূলত নদীর ভাঙা-গড়ার মতোই ‘কালিন্দীর কূলে’ উপন্যাস যেন এক প্রেমের ভাঙা-গড়ার অতৃপ্ত উপাখ্যান, জীবনের ছন্দ পতনের এক অন্যন্য ভাবের আখ্যান। কথাসাহিত্যিক ‘আহমেদ উল্লাহ’্ অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে যমুনার দুই কূলে বসবাসরত মানুষের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। যারা অসহায়, ছিন্নমূল ও সহায়-সম্বলহীন তাদের মনেও যে প্রেম থাকে, ভালোবেসে তারাও যে মিলন মোহনায় পৌঁছতে চায় তা লেখক দেখিয়ে দিয়েছেন গ্রাম্য মানুষের ব্যবহৃত ভাষা-বুলি প্রয়োগের মাধ্যমে।
উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লেখক অত্যন্ত সুকৌশলে পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধের মতো জড়িয়ে রেখেছেন। উপন্যাসটি পড়ে শেষ করার পর মনে জেগে ওঠবে এক অতৃপ্ত দীর্ঘশ্বাস!  
উপন্যাসটিতে মাঝে মাঝে শব্দ প্রয়োগে কিছুটা অসাবধানতা এবং বানান বিভ্রাট থাকলেও অবশেষে এই বলা যায় যে, ‘কালিন্দীর কূলে’ বঞ্চিত, অসহায় ও নিগৃহীত মানুষের বাস্তব জীবন দর্শনের এক করুণ ও বাস্তবধর্মী উপাখ্যান।
কালিন্দীর কূলে
লেখক : আ হ মে দ  উ ল্লা হ্
প্রকাশনী : রোদেলা প্রকাশনী
প্রকাশকাল    : ফেব্রুয়ারি ২০১৬
প্রচ্ছদ : রাকিবুল হাসান
মূল্য : ১৬০ টাকা।
হ মাহমুদা আক্তার

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন