রোববার, ২৬ মে ২০২৪, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সাহিত্য

স্বপ্নের নীড়

আ ব্দু স সা লা ম | প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

পূর্বে প্রকাশিতের পর

তারা স্কুল ও পড়াশুনা নিয়েই ব্যস্ত থাকে। অসুস্থ বাবার প্রতি তাদের কোন নজর নেই। তাই অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে আরশাদ সাহেব বিছানায় ছটফট করতে থাকে। যে স্বপ্নের নীড়ের জন্য তিনি এত টাকা খরচ করেছেন সেই স্বপ্নের নীড়ই তার যন্ত্রণাকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে যে, তার উন্নত চিকিৎসার সম্ভাবনা সুদূর পরাহত। সে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে সে বাবা-মায়ের কথা স্মরণ করে তাদের দুঃখ কষ্টগুলো উপলব্ধি করার চেষ্টা করছে। বাবা সামান্য ক’টা টাকার জন্য কতই না কষ্ট করেছে। তিনবেলা ঠিকমতো ভাত জোগাড় করতেও পারেনি। চিকিৎসার অভাবে শেষপর্যন্ত তারা মৃত্যুর কাছে পরাজয় স্বীকার করেছে। অথচ সে তখন দিব্যি মা-বাবাকে আর্থিক সাহায্য করতে পারত। কিন্তু করেনি। শুধু নিজের সুখ-শান্তির জন্যই চিন্তা করেছে। এসব স্মৃতি এখন শুধুই বেদনার।
আরশাদ আরও কিছুদিন বাঁচতে চায়। চিকিৎসার টাকা জোগাড় করার বিষয়ে স্ত্রীর তেমন কোন আগ্রহ নেই বললেই চলে। শুধু তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য নামমাত্র চিকিৎসা করানো হচ্ছে। স্ত্রীকে তিনি কোনভাবেই বাড়ি বিক্রি করানোর জন্য রাজী করাতে পারছে না। পক্ষান্তরে তার স্ত্রী তার মুখের সামনে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে-ক্যানসার কখনও ভালো হয় না। মরতে যখন হবেই তখন অত টাকা খরচ করে কী লাভ? যে স্ত্রীকে সে এত ভালোবেসেছে। সেই স্ত্রীর মুখ থেকেই শেষপর্যন্ত এসব কথা শুনতে হলো তাকে! তার পরিশ্রমের অর্থে গড়ে তোলা স্বপ্নের নীড় এখন স্ত্রী ও সন্তানদের ভোগ দখলে। এসব কথা ভাবতেই তার নয়নের গভীর থেকে বেদনা মিশ্রিত তপ্ত অশ্রুতে বুকের বসন ভিজে যায়। যতদিন যাচ্ছে তার শরীরিক অবস্থা ততই খারাপ হচ্ছে। পাশাপাশি দু’নয়নের আলোও নিভে যাচ্ছে। বাবা-মা, সহদর ভাই-বোন এবং আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি সে যে অবহেলা করেছে সেসব কথা মনে হলেই তার বুকের গভীরে জমে থাকা কষ্টটা অগ্ন্যুৎপাতের মতো বের হয়ে আসতে চায়। সে কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতাও সে হারিয়ে ফেলে। তার স্ত্রী তার সাথে এক বিছানায় তো দূরের কথা এক ঘরেও থাকে না। সঙ্গী ব্যতীত রাতের আঁধার তার কাছে ভয়ংকর মনে হয়। একদিন হঠাৎ অশুভক্ষণ তার প্রাণবায়ুটা ছিনিয়ে নেয়। নিথর দেহটা বিছানায় পড়ে থাকে। অবশেষে দেহের উৎকট গন্ধই প্রিয়জনদের মনে করিয়ে দেয় অনেক আগেই সে ধরা থেকে বিদায় নিয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন