স্পোর্টস ডেস্ক : চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল মাঠে গড়াবে ২৬ মে। তখন চলবে পবিত্র রমজান মাসের ৯ম দিন। শুধু তা-ই নয়, কিয়েভে যখন ফাইনালটি চলবে, তখনো ইফতারির সময় হবে না। স্থানীয় সময়ে সূর্যাস্ত যখন হবে, ততক্ষণে খেলা শুরুর বাঁশি বাজবে। খেলা চলার মধ্যেই হয়ে যাবে ইফতারের সময়।
এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালটিতে রোজার প্রসঙ্গ বেশ ভালোভাবে আসছে। কারণ দুই দলে অন্তত পাঁচজন খেলোয়াড় আছেন, যারা ধর্মপ্রাণ মুসলিম। ইউরোপের একসময়ের সেরা দল লিভারপুল ১৩ বছর ধরে এই ট্রফিটা জেতেনি। ফাইনালেই তারা উঠল ১১ বছর পর। এই ট্রফি নিয়ে তাদের আকাক্সক্ষা বেশ তীব্র। আশাও বেশি, বিশেষ করে মোহাম্মদ সালাহ যে জাদুকরী ফুটবলটা খেলছেন। এই মিশরীয় তারকার কারণেই রোজার প্রসঙ্গটি উঠছে আরও বেশি করে। কারণ সালাহ খুবই ধর্মপরায়ণ।
শুধু সালাহ নয়, লিভারপুলের আরও দুই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় সাদিও মানে ও মিডফিল্ডার এমেরে কান ধর্মভীরু মুসলিম। রিয়ালের স্কোয়াডেও মুসলিম আছেন দুজন। করিম বেনজেমা আর আশরাফ হাকিমি। সেমিফাইনালের ফিরতি লেগে জোড়া গোলের পর বেনজেমাকে বসিয়ে রাখার প্রশ্নই আসে না। বেনজেমাও নামাজ-রোজা পালন করেন। হজ ও উমরাহ পালন করতেও দেখা গেছে তাকে।
ইউরোপের এই ফুটবলারদের রোজা রাখার প্রসঙ্গটি প্রতিবছরই আসে। প্রত্যেক রোজাতেই তো তাদের খেলতে হয়। তবে বিশ্বব্যাপী ততটা আলোচিত হয় না, যতটা আলোচিত হয়েছিল ২০১৪ বিশ্বকাপের সময়। এমনিতে ব্রাজিলের গরমে লম্বা দিনের কারণে বিশেষ পানি পানের বিরতি পর্যন্ত চালু করতে হয়েছিল। ওই সময় রোজাও শুরু হয়ে গিয়েছিল। রমজান মাসে পাক্কা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোজা রেখে মাঠ মাতিয়েছেন এই ওজিল। তার জাদুকরি ফুটবলে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল তার দেশ।
জার্মানির সেরা আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে তার যথেষ্ট সুনাম। ওজিলের জীবনে যা কিছু অর্জন, তার পুরোটাই ফুটবলকে ঘিরে। আর মেসুত ওজিলের ফুটবলে যা কিছু অর্জন, তা সম্ভব হয়েছে মাঠে নামার আগে পবিত্র আল-কোরআন তেলাওয়াত ও নামাজ আদায় করে নেওয়ার কারণে- এমনটাই জানিয়েছেন জার্মান তারকা নিজে।
সামনে আরেকটি বিশ্বকাপ। যদিও এবার রমজানের শেষ দিবসে রাশিয়ায় বসবে আসরটি। বিশ্বের প্রায় ১ বিলিয়ন মুসলমানের মধ্য থেকে ছয়টি মুসলিম প্রধানদেশসহ আরো কয়েকটি থেকে ১০০ জনেরও বেশি ফুটবলার অংশ নিচ্ছেন এবারের বিশ্বকাপে। সামনে পেশাগত জীবনে সবচেয়ে বড় দিনের জন্য প্রস্তুতির একটি মাস। প্রস্তুতির জন্য অনেক কম সময়। ক্লাবের ব্যস্ততা শেষে এরই মধ্যে জাতীয় দলের ডেরায় ফিরতে শুরু করেছেন ফুটবলাররা। প্রাথমিক দলসহ এরই মধ্যে অনেক দেশই ঘোষনা করে দিয়েছে তাদের চূড়ান্ত স্কোয়াড। বিশ্ব ফুটবলের মুকুট মাথায় পড়তে দলগুলোতে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। ঠিক এমন সময় মুসলিম ফুটবলারদের সামনে হাজির বিশাল এক চ্যালেঞ্জ, রোজা।
বাংলাদেশে আজ প্রথম রমজান হলেও একদিন আগেই মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপে শুরু হয়ে গেছে রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মহিমান্বিত এই মাস। সুবেহ্ সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার থেকে বিরত থেকে আত্মশুদ্ধির মাস রমজান। শারীরিক কসরতের খেলা ফুটবলে কতটা প্রভাব ফেলে রোজা রেখে খেলা? এমন প্রশ্নের উত্তর নানা মনে নানা মত হতে পারে। তবে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কাছে রমজান কষ্টের বদলে অনাবিল এক প্রশান্তির নাম। এই যেমন রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রাথমিক দলে ঠাঁই পাওয়া মিশরের ডিফেন্ডার ওমার গাবের বলেন, ‘রোজা রেখে খেলা এবং অনুশীলন করা সহজ নয়, তবে আমাকে এটা করতে হবে। অনেকে পরে (কাযা) আদায় করে নেন, কিন্তু আমার জন্য, এটি পুরো বছরের মাত্র ৩০ দিন। মুসলিম ধর্মাঅনুসারে এমন একটি মাস যা আমাদের সৃষ্টিকর্তার খুব কাছে নিয়ে যায়।’ সাবেক আইভরিয়ান ডিফেন্ডার কোলো তোরে জানান, ‘রোজার মাধ্যমে আপনি আপনার শরীর ও আত্মা পরিষ্কার রাখছেন। যার ফলে অবশিষ্ট সময়গুলেতোও যা আপনাকে প্রেরণা যোগাবে।’ মিসরের গোলরক্ষক কোচ জাক আব্দেল বলেন, ‘আমরা যখন কিংবদন্তি মিশরীয় মিডফিল্ডার মোহাম্মদের সঙ্গে ছিলাম, তখন তাকে মানসিকভাবে অনেক শক্তিশালী দেখাতো। কারণ তখন তিনি রোজারত অবস্থায় ছিলেন।’
শুধুমাত্র ২০১৮ সালের বিশ্বকাপেই প্রথম নয়, এর আগেও অনেক বড় বড় আন্তর্জতিক ক্রীড়ার আসর রমজান মাসে পালিত হয়েছিল। এই যেমন ২০১২ সালের অলিম্পিক, ২০১৩ ইউরো এবং সবচেয়ে বড় কথা ফুটবল বিশ্বকাপের গত আসরের নকআউট পর্ব পর্যন্ত হয়েছিল রোজার মধ্যে। এবার মূল আসরে মাঠের লড়াইয়ে নামার আগেই মুসলিম ফুটবলারদের দিতে হচ্ছে এই পরীক্ষা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন