শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

সেবার গল্প রূপকথা নয় বাস্তবতা, বিরল নজির স্থাপন করেছেন পরিচালক

বদলে যাওয়া মমেক হাসপাতালের আনন্দ-বেদনার গল্প-১

| প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মো: শামসুল আলম খান : সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা মেলে না। এই বাক্যটি এখন অন্তত বেমানান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের বেলায়। অথচ মাত্র বছর তিনেক আগেও এ হাসপাতালটির কথা ওঠলে মানুষের মনে সুখকর চিত্র ভেসে ওঠতো না।
অপরিচ্ছন্ন নোংরা পরিবেশ, দালালদের উৎপাত, অপর্যাপ্ত জনবল, চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি বা সেবায় অনীহা ও জরুরি ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনা-এসবের ফলে সরকারি এ হাসপাতালের ওপর নুন্যতম আস্থা ছিল না স্থানীয় জনসাধারণের। তবুও বাধ্য হয়ে মধ্য ও নি¤œবিত্ত জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশ এখানে চিকিৎসা নিতে যেতেন। ফলে হাসপাতালের অন্দরে-বাইরে নিত্যদিন যেন গুমরে কেঁদে উঠতো মানবতা!
কিন্তু মাত্র আড়াই বছরেই দেশপ্রেমিক সেনা বাহিনীর একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় যুগান্তকারী এক পরিবর্তন এনেছেন। তার নাম নাসির উদ্দিন আহমেদ। তিনি নিজের মেধা, শক্তি-শ্রমের অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়ে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলেছেন এক সময়কার ডুবন্ত এ হসাপাতালকে। এ হাসপাতালে সেবার গল্প আর কোন রূপকথা নয় বাস্তবতা। গত কয়েকদিন সরেজমিনে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেলো এমন চিত্রের।
জানা গেছে, এ হাসপাতালে অনিয়ম ও দুর্নীতির মহোৎসবের বিদায় ঘন্টা বাজিয়ে ওষুধ পাচার ঠেকিয়ে দিয়েছেন হাসপাতাল পরিচালক। দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে এখন শুধুমাত্র ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই শতভাগ ওষুধ বিনামূল্যে দেয়ার রেকর্ড গড়েছেন এ সেনা কর্মকর্তা। দেখা গেছে, এক সময় এ হাসপাতালে দালালদের কথাই শেষ কথা হলেও এখন এখানে দালালের উৎপাত নেই। দালালরা হাসপাতালে টিকতে না পারায় আশেপাশের প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতালে এখন রোগী ‘চালান’ হয় না। সরকারি এ হাসপাতালের অন্দরমহলের বিশ্রী-কদাকার দৃশ্যও এখন অতীত।
দেখা গেলো, গোটা হাসপাতালজুড়েই পরিচ্ছন্ন-পরিপাটি ভাব। সফলতার সঙ্গে চালু রয়েছে ২৪ ঘন্টার ওয়ানস্টপ সার্ভিস সুবিধা। এর ফলে আধুনিক সব যন্ত্রপাতির মাধ্যমে নামমাত্র খরচায় উপহার দিয়েছেন সব ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এ সার্ভিসে চিকিৎসা নিতে আসা ফুলপুরের দিনমজুর সোহরাব হোসেন, শেরপুরের নকলা উপজেলার দীন ইসলামসহ কয়েকজন রোগী।
সরেজমিনে আরো দেখা গেছে, এক সময় এ হাসপাতালটির প্রবেশপথের নামকাওয়াস্তে সাইনবোর্ড ছিল। এখন সেখানে স্থাপন করা হয়েছে ইলেকট্রনিক সাইনবোর্ড। ছিল না সীমনা প্রাচীর। এখন সীমনা প্রাচীরের ওপরে জ্বলছে লাইট। হাসপাতালের ইলেকট্রনিক সাইনবোর্ডে ভেসে ওঠছে নিয়ম-কানুন ও করণীয়। বাইরে থেকে এখন এ হাসপাতালটি আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন। ভেতরেও লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। হাসপাতালের সামনে রয়েছে সুদৃশ্য বাগান।
প্রশস্তকরণ করা হয়েছে ফুটপাত। সড়ক হয়েছে। আনসার সদস্যদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দৃশ্যমান এসব পরিবর্তনের জন্য যাবতীয় খরচাদি করা হয়েছে হাসপাতালের নিজস্ব তহবিল থেকেই। এছাড়া জরুরি বিভাগ তো বটেই হাসপাতালের প্রতিটি দেয়ালে সাঁটানো হয়েছে ‘সরকারি শতভাগ ওষুধ প্রদান করা হচ্ছে।’ রোগীরা পাচ্ছে ভালো মানের খাবার, জানালেন বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন একাধিক রোগী।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ হাসপাতালের আমুল পরিবর্তন ও সেবার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় রোগীর চাপ বেড়েছে। ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোণা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ তো বটেই সিলেট, সুনামগঞ্জ, রংপুর, গাজীপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রোগীরা এ হাসপাতালে ভিড় করছেন। আগে এ হাসপাতালে গড়ে ১ হাজার ৩’শ থেকে ১ হাজার ৫’শ জন রোগী ভর্তি থাকতো। এখন ২ হাজার ৫শ’ থেকে ২ হাজার ৭শ’ রোগী ভর্তি হচ্ছেন। আউটডোরে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ হাজার রোগী আসছে। জরুরি বিভাগের ওয়ান স্টপে আসছে ৪শ’ থেকে ৫শ’ রোগী। সব মিলিয়ে হাসপাতাল চত্বরে প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ হাজারের বেশি মানুষ অবস্থান করছেন।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা দৃশ্যপট বদলে দেওয়ার জন্য কৃতিত্ব দিয়েছেন এ হাসপাতালেরই রোগীদের জন্য প্রকৃত বন্ধুর দূতস্বরূপ ব্যক্তিত্ব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহমেদকে। এ হাসপাতালে যোগ দেয়ার আগেই স্থানীয় জনসাধারণের ভাবনা, চেতনা, স্বপ্ন, অভিলক্ষ, প্রত্যাশা সব কিছুই তিনি ধারণ করতে পেরেছিলেন।
শুধু এ হাসপাতালেই যে তিনি সফলতা দেখিয়েছেন বিষয়টি মোটেও তেমন নয়। যখন যেখানে ছিলেন সেখানেই আলো ছড়িয়েছেন। নানামুখী লড়াই আর সংগ্রাম শেষে উপহার দিয়েছেন মডেল একটি হাসপাতাল।
তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে খাগড়াছড়ি বালিয়াপাড়া বিজিবি হাসপাতাল, চুয়াডাঙ্গা বিজিবি জেনারেল হাসপাতাল, ঠাঁকুরগাঁও বিজিবি হাসপাতাল এবং পরবর্তীতে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের কমাডেন্ট হিসেবে এ হাসপাতালকেও বিশ্বমানে নিয়ে গেছেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহমেদ চাঁদপুর জেলার বাসিন্দা। তার বাবা ডা: আব্দুস সাত্তার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন এবং হাজিগঞ্জের দুইবারের সংসদ সদস্য ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন