৭৭৭. চুমো খেত আবেগ ভরে সেই মোবারক নাম ’পরে
চোখে মুখে লাগাত তা, করত কদর প্রাণ ভরে।
৭৭৮. উযির পাপীর ফিতনা কালে- দিয়েছি যার বর্ণনা
সে নামগুণে রক্ষা পেল ফিতনাতে সে কয় জনা।
৭৭৯. রক্ষা পেল তারাই কেবল ফিতনা থেকে আমীরদের
ছিল যারা নাম-শরণে দয়াল নবী আহমাদের।
৭৮০. বংশ তাদের বৃদ্ধি পেল, হলো অনেক সংখ্যা তার
তারাই পরে ঈমান এনে হলো নবীর মদদগার।
৭৮১. নাসারাদের আরেকটি দল পুষত মনে দুশমনি
করত তারা বেয়াদবি দয়াল নবীর নাম শুনি।
৭৮২. জড়িয়ে তারা পড়ল ভীষণ উযির-আমীর ফিতনাতে
মহাক্ষতি হলো তাদের জানের, মালের- সবটাতে।
৭৮৩. উযির ও তার ভ্রষ্ট কিতাব পাকালো যে কুটিল জট
পাল্টালো তায়, ধর্ম, কানুন, খ্রিস্টসমাজ-দৃশ্যপট।
৭৮৪. রক্ষাকবচ যখন এরূপ নাম মোবারক আহমাদের
বুঝো, তখন রক্ষা করার শক্তি কতো তাঁর নূরের !
৭৮৫. নাম আহমাদ দূর্গ যখন দুঃসময়ে দুর্যোগের
বুঝো, কেমন অভয় শরণ সত্তা রূহুল আমীনের১ !
আরেক যাহুদী যালিম বাদশার কাহিনী
পূর্বোক্ত যালিম য়াহুদী বাদশার বংশেই পরবর্তীতে জন্ম হয় আরেক যালিম য়াহুদী বাদশার। সেও খৃস্টানদের ধ্বংসযজ্ঞে মেতে ওঠে। কুরআনুল কারীমের সূরা বুরুজে এর বিবরণ রয়েছে। মাওলানা মসনবীতে কাহিনীটির বর্ণনা দিয়েছেন এবং এই সূত্র ধরে তুলে ধরেছেন তার নিজস্ব ধারায় অনেক তত্তকথা ও সূক্ষ বিষয়। আমরা মূল কাহিনী সংক্ষিপ্ত ভাবে পেশ করছি।
ঈমানদার খৃস্টানদের উপর যুলুমের মাত্রা সীমা ছাড়িয়ে গেল তবুও তারা ধর্ম ত্যাগ করল না। এতে বাদশা আরো বেসামাল হয়ে তৈরি করল এক বিশাল অনলকুন্ড এবং তার পার্শ্বে স্থাপন করল এক দেবতা-মূর্তি। বাদশা ঈমানদারদের ডেকে আনতে লাগল একে একে এবং নির্দেশ দিয়ে চলল প্রতিমাকে সিজদা করার। যারা সিজদা করতে অস্বীকার করল তাদেরকে নিক্ষেপ করতে লাগল জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে। এভাবে চলছিল অকথ্য নির্যাতন নিপীড়ন। ইতোমধ্যে ঘটল আর এক লোমহর্ষক ঘটনা।
যালিমরা সেখানে নিয়ে এল এক ঈমানদার মহিলাকে। কোলে তাঁর নিজ দুগ্ধপোষ্য শিশুপুত্র। বাদশা হুকুম দিল বুত-প্রতিমাকে সিজদা করার। ঈমানের বলে বলিয়ান পুণ্যবতী মহিলা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করল এই কুফরী কাজ করতে। এতে বাদশা অগ্নিশর্মা হয়ে মহিলার কোল থেকে তার কচি বাচ্চাকে ছিনে এনে নিক্ষেপ করল ভয়ঙ্কর অনলকুন্ড। এই নারকীয় দৃশ্য দেখে হাহাকার করে উঠল মাতৃ হৃদয়। মাওলানা রূমীর ভাষায়-
“প্রাণের যাদু ছাই হয়ে যায় অগ্নি মাঝে সেই ভয়াল
দেখে ব্যাকুল মাতৃ হৃদের ঈমান হল টালমাটাল
উন্মাদিনী রূপে আগায় সিজদা দিতে এই সময়
থামো মাতা! ‘যিন্দা আমি’, অগ্নি থেকে বাচ্চা কয়।
তোমরা দেখ অগ্নি বটে, কী যে মহান খোদার শান
অগ্নি এ নয়, অগ্নি এ নয়, চিত্তহারী ফুল বাগানা।
এসো মাতো! দের করোনা, শীঘ্র এসো ভেতর এর
দেখবে চির সুখের নিলয় এই খানে নেক বান্দাদের।
এসো মাতো! ভেতর এসো, এসো মুমিন ভাই সকল
মিঠে পানি হেথা কেবল- ওই দুনিয়ার সব গরল।
মা প্রাণাধিক পুত্রের এ আবেগাকুল আহ্বান শুনে কাল বিলম্ব না করে ঝাপ দিয়ে পড়ল অনলকুন্ডে আর পুত্রকে জড়িয়ে ধরল তার তৃষ্ণার্ত বুকে। এবার মা-বেটা মিলে দ্বৈত কণ্ঠে আহ্বান জানাল-
এসো এসো এসো হেথা, এসো মুমিন ভাই সকল
শান্তি হেথা, বেহেশ্ত হেথা, গুলিস্তান এ, নয় অনল।
মুমিন বান্দারা বিমুগ্ধ বস্ময়ে শুনল শিশু ও তাঁর মায়ের ঈমান-উদ্দীপক এ আহ্বান এবং শাহাদতের তামান্নায় এখন তাদের কাছে-
জীবন-মরণ তুচ্ছ সবই, তুচ্ছ ধরার সব বিভব
তাই লেলিহান অগ্নি মাঝে ঝম্প দিয়ে পড়ল সব।
অলৌকিক এ দৃশ্য রাজা দেখল নিয়ে সঙ্গী তার
দেখল, তবে দৃষ্টি নিয়ে উপেক্ষা ও অবজ্ঞার।
এই নর পিশাচ্, পাষন্ড যালিম বাদশার প্রতিক্রিয়া ও পরিনতির কথা মাওলানা বর্ণনা করেছেন এভাবে-
শুভার্থীরা বলল রাজন! এবার থামুন নয়কো আর
টেনে ধরুন বল্্গা এবার অত্যাচারের অশ্বটার।
শুনল না সে এই উপদেশ, করল বরং উল্টো তার
বন্দি করে তাদের পরে চালাল ঢের অত্যাচার।
গায়বী আওয়ায হলো তখন : থামরে কুকুর দ্যাখ্্ এবার
আসছে ধেয়ে ভয়াল ভীষণ মহাগযব খোদ খোদার।
অগ্নি হলো প্রচন্ডতর, চালিশ গজে উঠল ধাই
বাদশা ও তার সঙ্গীদেরে করল পুড়ে ভষ্ম ছাই।
৭৮৬. সেই য়াহুদী ভন্ড উজির পূর্বে গেছে যার বয়ান
ফিতনাতে যার নিহত হয় হাজার হাজার খ্রিষ্টান।
৭৮৭. তার কিছুকাল পরে আরেক অধঃপুরুষ এক সেই শাহের
দারুন ভাবে উঠল মেতে ধ্বংসলিলায় খ্রিস্টানের।
৭৮৮. ভয়াল ভীষণ অত্যাচারের কিচ্ছা আছে সেই শাহের
ত্রিশতম পারার মাঝে বুরুজ সুরায় কুরআনের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন