স্পোর্টস রিপোর্টার: দু’মৌসুম পর ফের জমজমাট হচ্ছে ঘরোয়া হকির সর্বোচ্চ আসর প্রিমিয়ার লিগ। নানা জটিলতায় দু’মৌসুম লিগে খেলেনি বিদ্রোহী খ্যাত চার ক্লাব। ফলে লিগও জমেনি। তবে এবার সব ক্লাবেরই অংশগ্রহণে টার্ফে গড়াচ্ছে এই লিগ। যার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে খেলোয়াড় দলবদল কার্যক্রমের মধ্যদিয়ে। প্রিমিয়ার লিগকে সামনে রেখে গতকাল শুরু হয় দলবদল। যদিও আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগেই নিজেদের ঘর গুছিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন উষা ক্রীড়া চক্র ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড। তবে দলবদলের প্রথম দিন সবাইকে চমকে দিয়ে মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়াম চত্বরে হাজির হয় পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী দল বাংলাদেশ স্পোর্টিং ক্লাব। বিকাল পাঁচটায় ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে ঘোড়ার গাড়ীতে চড়ে এই ক্লাবের খেলোয়াড়রা আসেন দলবদল করতে। আগের হকির সেই দাপুটে স্মৃতিই যেন ফিরিয়ে আনলেন দলটির খেলোয়াড়রা। কিন্তু বাংলাদেশে স্পোর্টিং ক্লাবের তুলনায় অনেকটা নীরবে এদিন দলবদলে অংশ নেয় উষা এবং সোনালী ব্যাংক রিক্রেয়শন ক্লাব। বড় দলগুলোর মধ্যে আজ ঢাকা মোহামেডান ও মেরিনার ইয়াংস ক্লাব দলবদলে অংশ নেবে।
ফেডারেশনের নির্বাচন জটিলতায় মোহামেডানসহ চার বিদ্রোহী ক্লাবের অনড় অবস্থানে গেল প্রায় আড়াই বছর দেশের হকি অঙ্গনে ছিলো প্রায় অচলবস্থা। তবে সংকট কেটে যাওয়ায় আবার আলোয় ফিরে এসেছে ঘরোয়া হকি। ফলে দলবদলে অংশ নিচ্ছে সব ক্লাবই। দু’মৌসুম পর সব ক্লাবের অংশগ্রহণে গতকাল দলবদল শুরু হলেও প্রথম দিনটা ছিল মিশ্রতায় পরিপূর্ণ। এই কার্যক্রমের প্রথম দিন চ্যাম্পিয়ন ঊষা তাদের আট খেলোয়াড়কে নিবন্ধন করায়। এরা হলেন- বর্তমান জাতীয় দলের নিয়মিত খেলোয়াড় অধিনায়ক সারোয়ার হোসেন, পুষ্কর ক্ষিসা মিমো, হাসান যুবায়ের নিলয়, কৃষ্ণ কুমার ও রেজাউল করিম বাবু। জাতীয় দলের স্ট্যান্ডবাইয়ে থাকা মোহাম্মদ নাইম ও আবু সাইদ নিপ্পন। এছাড়া বিকেএসপির রাতুলকেও এদিন নিবন্ধন করায় তারা। দলবদলে এসে ঊষা’র প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম কামাল বলেন, ‘এবারও শিরোপা ঘরে তুলতে চাই। সে লক্ষ্যে জাতীয় দলের তারকা খেলোয়াড়দের দলে ভিড়িয়েছি। বিদেশ থেকেও খেলোয়াড় আনবো। এক্ষেত্রে পাকিস্তান ও ভারতের খেলোয়াড় দেখা যাবে আমার দলে।’
বাদ্যের তালে তালে ঘোড়ার গাড়িতে করে খেলোয়াড় নিয়ে ফেডারেশনে আসা বাংলাদেশ স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. হুমায়ুনের চোখে-মুখে ছিলো উচ্ছ¡াস। এদিন তিনি ১১ জন খেলোয়াড়কে নিবন্ধন করান। এরা হলেন- আবাহনীর ফরোয়ার্ড ইকবাল নাদের প্রিন্স, মোহামেডানের গোলরক্ষক শাকিল, লেফটব্যাক শাহীন, বিমান বাহিনীর মিডফিল্ডার শাহিদ, ফরোয়ার্ড রুম্মান, রক্ষণভাগের মনি ও সোনালী ব্যাংকের স্টপার ব্যাক তাবিব এ নূর। এছাড়া ক্লাবের পুরনো চার খেলোয়াড় রয়েছেন। নিবন্ধন শেষে হাজী হুমায়ুন বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য সুপার সিক্সে খেলা। সে লক্ষ্যে জাতীয় দলের সাবেক পাঁচ খেলোয়াড়কে নিয়ে শক্তিশালী দলই গড়েছি আমরা। ভারত থেকে আরও পাঁচজন খেলোয়াড় আনবো। এবারও দলের কোচের দায়িত্ব পালন করবেন জাতীয় দলের সাবেক তারকা খেলোয়াড় এহতেশাম হোসেন।’
তবে জানা গেছে, দল-বদল শুরুর আগেই ক্লাবগুলো মাঠে নেমেছে খেলোয়াড়দের পায়ে শেকল পড়ানোর জন্য। তারা খেলোয়াড়দের অঘোষিতভাবে একটি গ্রেডিং সিস্টেম চালু করছে। তিনভাগে নাকি ভাগ করা হয়েছে খেলোয়াড়দের। জাতীয় দলের তারকাদের রাখা হয়েছে ‘এ’ গ্রেডে। তারকার বাইরে যারা তারা থাকছেন ‘বি’ গ্রেডে এবং জাতীয় দলে যাদের সুযোগ নেই তাদেরকে রাখা হয়েছে ‘সি’ গ্রেডে।
সূত্র জানায়, হকি ফেডারেশনকে অন্ধকারে রেখে শীর্ষস্থানীয় ক’টি ক্লাবের কর্মকর্তারা সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে এক সভায় বসে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ সভায় খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকও ঠিক করা হয়েছে। গ্রেড ‘এ’ খেলোয়াড়দের তিন লাখ টাকা দেয়া হবে। ‘বি’ গ্রেডের খেলোয়াড়রা পাবেন দুই লাখ আর ‘সি’ গ্রেডের খেলোয়াড়দের দেড় লাখ টাকা দেয়া হবে। ক্লাব কর্মকর্তাদের এমন অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে পারছেন না খেলোয়াড়রা। কারণ নতুন মৌসুমে একটি ক্লাব পাঁচজন করে বিদেশী খেলোয়াড় দলে টানতে পারবে। এ সুযোগটাকেই কাজে লাগাচ্ছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে হুমায়ুনের কথা, ‘খেলোয়াড়দের গ্রেডিং সিস্টেমটা তিন-চারটি বড় ক্লাব মিলে করেছে। এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। তারাই বলতে পারবেন, এটা কতটুকু যুক্তি সঙ্গত হয়েছে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন