স্পোর্টস ডেস্ক : ‘জাদুকরী রাত’ উপহার দেওয়ার ঘোষণাটা আগেই দিয়ে রেখেছিলেন তিনি। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বার্নাব্যু ভক্তদের সত্যিই জাদুকরী একটি রাত উপহার দিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। শেষ চারে নাম লেখাতে ন্যূনতম ৩ গোলের ব্যবধানে জিততে হত রিয়াল মাদ্রিদকে। এমন কঠিন সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে দলের প্রয়োজনীয় তিনটি গোল একাই করলেন পর্তুগিজ তারকা। তার দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকেই টানা ষষ্ঠবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আসরের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিল রেকর্ড দশ বারের চ্যাম্পিয়নরা। শেষ আটের এই লড়াইয়ে দুই লেগ মিলে ভুল্ফসবুর্গকে তারা হারিয়েছে ৩-২ গোলে।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে পরশু রাতে জিনেদিন জিদানের দলের সামনে হিসাবটা ছিল যতটা সহজ কাজটা ছিল ঠিক ততটাই কঠিন। প্রথম লেগে ভল্ফসবুর্গের মাঠে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ায় টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে এদিন তাদের দরকার ছিল ন্যূনতম ৩ গোলের ব্যবধানে জয়। সেই কঠিন কাজটি কি অবলীলায় না করে দেখালো লস ব্লাঙ্কোসরা। মাত্র ১৭ মিনিটেই ভল্ফসবুর্গকে ম্যাচ থেকে ছিটকে ফেলে দিল তারা। এ সময় দুই মিনিটের ব্যবধানে রোনালদো করেন জোড়া গোল। তখনই মূলত ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যায়। ঠিক এই সথা স্বরণ করেই ম্যাচ শেষে রোনালদো বলেনÑ ‘আমরা শুরু থেকেই দৃড়ভাবে লড়তে থাকি, দ্রুত দুটি গোলও পেয়ে যায়।’ তবে শেষ চার নিশ্চিতকরণ গোলটির জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয় ৭৭তম মিনিট পর্যন্ত। ২৫ গজ দূর থেকে নেওয়া রোনালদোর ফ্রি-কিক দেয়ালে লেগে দিক পরিবর্তন হয়ে জালে জড়ায়। সেইসাথে সেমির ভাগ্যও নির্ধারিত হয়ে যায় তাদের। এর আগে ও পরে বেল বেনজেমার সমনেও সুযোগ ছিল দলের ভাগ্য নির্ধারণের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এগিয়ে আসতে হয় সিআর-৭কেই। বিরতির আগে গোলের সুযোগ পেয়েছিল সফরকারীরাও। কিন্তু প্রায় ফাঁকা পেয়েও জালে বল পাঠাতে ব্যর্থ হন ভল্ফসবুর্গের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ব্রুনো হেনরিকে।
এমন ঐতিহাসিক জয়ে স্বভাবতই খুশি রোনালদোÑ ‘আমি সত্যিই খুব খুশি, এটা অসাধারণ একটা ম্যাচ ছিল।’ চলতি আসরে আর মাত্র একটি গোল করলেই ২০১৩-১৪ মৌসুমে নিজের গড়া ১৭ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করবেন তিনি। যে হারে গোল পাচ্ছেন তাতে সেই রেকর্ড ভাঙাও মনে হচ্ছে তার পক্ষে সময়ের ব্যপার মাত্র। নিজের এমন কীর্তিতে উচ্ছাস প্রকাশ করে তিনি বলেনÑ ‘অবশ্যই আমি এর জন্য খেলি না, তবে আশা করি আমি আমার রেকর্ডটা ভাঙতে পারব ও ১৭ এর অধীক গোল করতে পারব। এটা হলে আমার জন্য ও দলের জন্য ভালোই হবে।’ প্রতিপক্ষকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ৩১ বছর বয়সী আরো বলেনÑ ‘আমরা ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করেছি। ভল্ফসবুর্গও ভালো খেলেছে কিন্তু আমার মনে হয় পুরো ৯০ মিনিট আমরাই কর্তৃত্ব করেছি।’
প্রথম লেগে পিছিয়ে পড়েও জয়ের রেকর্ড আগেও ছিল রিয়াল মাদ্রিদের। সর্বশেষ ১৪ বছর আগে এমভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল স্প্যানিশ জায়ান্টরা। বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে সেবার প্রথম লেগে পিছিয়ে পড়েও দলকে জয়সূচক গোল উপহার দিয়েছিলেন দলের বর্তমান কোচ জিনেদিন জিদান। সেকথা স্মরণ করেই পর্তুগিজ তারকা বলেনÑ ‘ঘুরে দাঁড়ানোর বহু উদাহরণ রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে আছে, আজকের (পরশু) রাতে আমরা আরো একবার এটা করলাম।’ উচ্ছ্বসিত ভক্তদের ধন্যবাদ দিয়ে রোমাঞ্চিত রোনালদো বলেনÑ ‘ভক্তরা ছিল অসাধারণ। বার্নাব্যুতে ঘুরে এই দাঁড়ানোটা মানুষের মুখে লেগে থাকবে। সব মিলে এটা ছিল একটি আদর্শ জাদুকরী রাত।’ সত্যিই তো, এমন জাদুকরী রাত ক’জন ফুটবল ভক্তর ভাগ্যেই বা জোটে!
রোনালদোনামা
ষ চলতি আসরে এটি তার তৃতীয় হ্যাটট্রিক, লিগের ইতিহাসে পঞ্চম। ৫ বারের এই হ্যাটট্রিকে তিনি বসেছেন লিওনেল মেসির পাশে।
রিয়ালের জার্সি গায়ে এটি ছিল তার ৩৭তম হ্যাটট্রিক। প্রতি ৯.২ ম্যাচে হ্যাটট্রিক একটি করে।
ষ এ নিয়ে মৌসুমে তার গোলসংখ্যা দাঁড়ালো ১৬। এক মৌসুমে করা সর্বোচ্চ ১৭ গোলের রেকর্ডটিও রোনালদোর। ২০১৩-১৪ মৌসুমে এই কীর্তি গড়েছিলেন তিনি।
ষ সব মিলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ইতিহাসে তার সর্বোচ্চ গোল সংখ্যা দাঁড়ালো ৯৩, ব্যক্তিগত লড়াইয়ে মেসির চেয়ে ১০ গোলে এগিয়ে।
ষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে এক মৌসুমে ১৫ বা এর বেশি গোল করা একমাত্র খেলোয়াড় রোনালদো। এ নিয়ে দুই বার এই কীর্তি গড়লেন তিনি।
ষ সব প্রতিযোগিতা মিলে চলতি মৌসুমে মোট গোল সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৫।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন