বিশেষ সংবাদদাতা, খুলনা ঃ খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংক বন্ধকী ঋণ দিয়েছে খুলনা-যশোর রোডের শিরোমনির বাদামতলার বেগ আমজাদ হোসেনের গুদামে। পরে পাল্টাপাল্টি অভিযোগে পাট গুদামের দায়বদ্ধ মালিকানা স্বত্ব বিরোধ আদালতে গেছে ব্যাংক দু’টি। অভিযোগ উঠেছে, সোনালী ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ মাগুরা জুট ট্রেডার্সের পাট ভর্তি গুদাম জবরদখল করে নিয়েছেন গুদাম মালিকের ছেলে এনামুল হাসান চঞ্চল। দখলের পর ‘বেগ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ নামক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড গুদামে লাগানোর পাশাপাশি একদিনের মধ্যে রূপালী ব্যাংক দৌলতপুর শাখা থেকে গুদামজাত পাটের বিপরীতে অন্তত দুই কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন তিনি। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক দু’টির দায়বদ্ধ মালিকানা স্বত্ব বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। আগামীকাল ২৬ জানুয়ারি যুগ্ম জেলা জজ দ্বিতীয় আদালত খুলনায় মামলাটির শুনানি অনুষ্ঠিত হতে পারে।
এ ঘটনার পর মাগুরা জুট ট্রেডার্স মালিক সৈয়দ ফখরুল ইসলাম ও সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম বাদী হয়ে আদালতে মেসার্স বেগ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক বেগ এনামুল হাসান চঞ্চল, রূপালী ব্যাংক দৌলতপুর কর্পোরেট শাখার এজিএম মোঃ গোলাম মোরশেদ ও রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককের বিরুদ্ধে গুদাম দখলের মামলা করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মহানগরীর শিরোমনির বাদামতলা এলাকায় বেগ আমজাদ হোসেনের গুদাম ভাড়া নিয়ে মাগুরা জুট ট্রেডার্সের মালিক সৈয়দ ফখরুল ইসলাম গত তিন বছর ধরে ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। খুলনা সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখা থেকে এই গুদামের পাটের বিপরীতে দুই কোটি টাকা ঋণও নিয়েছিলেন তিনি। ব্যাংক বিধি মোতাবেক গুদামে সোনালী ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ লেখা সম্বলিত সাইনবোর্ড সেটে দেয়া হয়। কিন্তু গুদাম মালিক বেগ আমজাদ হোসেনের মৃত্যুর পর তার ছেলে এনামুল হাসান চঞ্চল গেল বছরের ৩ জানুয়ারি তার লোকজন নিয়ে সোনালী ব্যাংকের সীলগালা করা তালা ভেঙে পাটসহ গুদাম নিজের দখলে নিয়ে নেন এবং রূপালী ব্যাংক দৌলতপুর শাখার তালা লাগিয়ে নতুন করে সীলগালা করেন। এ সময় মাগুরা জুট ট্রেডার্স আর সোনালী ব্যাংকের সাইনবোর্ড ফেলে দিয়ে ‘বেগ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ ও রূপালী ব্যাংক দৌলতপুর শাখার কাছে দায়বদ্ধ লেখা সাইনবোর্ড লাগানো হয়।
এ ব্যাপারে সোনালী ব্যাংক’র ডিজিএম সমীর কুমার দেবনাথ বলেন, ‘বেগ আমজাদ হোসেনের কাছ থেকে গুদাম ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করে আসছিল মাগুরা জুট ট্রেডার্স’। গুদামের ১২ হাজার ৬৫১ বেল পাটের বিপরীতে ব্যাংক এক কোটি ৯০ লাখ টাকা ঋণও দিয়েছিলাম। গুদামে যে পাট ছিল তার বিপরীতে সাধারণ বীমা প্রতিষ্ঠানে বীমাও রয়েছে। ব্যাংক ঋণ প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ, কিন্তু সেখানে রূপালী ব্যাংক দৌলতপুর শাখা কিভাবে রাতে দখল করা গুদামে সকালেই ঋণ দিয়ে দেয়? তা বোধগম্য নয়!
তিনি আরও বলেন, ‘নোটিশের জবাবে রূপালী ব্যাংক জানিয়েছে সৈয়দ ফখরুল ইসলামের কাছে গুদাম ভাড়া পাওনা থাকায় তিনি স্বেচ্ছায় গুদাম আর পাট ছেড়ে দিয়েছেন। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ গুদামের রক্ষিত পাটের মালিক সৈয়দ ফখরুল ইসলাম নয়, সোনালী ব্যাংক খুলনা কর্পোরেট শাখা। ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, বকেয়া ভাড়ার জন্য গুদাম বুঝে নিতে হলে সোনালী ব্যাংককে আগে অবহিত করতে হবে। একইভাবে এই গুদামের ঋণ দেবার আগে সোনালী ব্যাংকের সনদপত্র নেয়ার কথা।’
এ প্রসঙ্গে বেগ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’র স্বত্ত¡াধিকারী এনামুল হাসান চঞ্চল বলেন, সৈয়দ ফখরুল ইসলামের কাছে গুদাম ভাড়া বাবদ অনেক টাকা পাওনা ছিল। আমার আব্বার জীবিত থাকাবস্থায় মাগুরা জুট গুদাম ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। পরে নতুন করে পাটের বিপরীতে ঋণ নিয়েছি আমি। এখানে দখলের কোনো ঘটনা ঘটেনি। সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তারাদের ভূল বুঝিয়ে এবং নিজেদের দায় এড়াতে এই মামলা করা হয়েছে। আগামী ২৬ জানুয়ারি মামলার শুনানী রয়েছে। আদালতেই বিস্তারিত জানাবো।
রূপালী ব্যাংক দৌলতপুর শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোঃ গোলাম মোরশেদ বলেন, ‘যথাযথ নিয়ম মেনেই ঋণ দেয়া হয়েছে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন