শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মানবাধিকার লঙ্ঘন করে সরকার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চায়

গোলটেবিলে মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্য সরকার এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকার দেশে একের পর এক মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার পায়তারা করছে। এই কারণে তারা আজকে কোনো নিয়ম-কানুন, ন্যায়-নীতি, সংবিধান কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে তারা একের পর এক মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় গুলশানে হোটেল লেক শোরে বিএনপির উদ্যোগে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ জানাবো- বাংলাদেশে এখন কী হচ্ছে তা নোট করুন। আমরা একটি গণতান্ত্রিক জাতি। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল, আমরা গণতন্ত্রের বিশ্বাসী করি। অথচ এই সরকার তাদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য বিরোধী দলের অত্যাচার-নির্যাতন, নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। আজকে শুধু এনফোর্স ডিজএপিয়ারেন্স নয়, আমাদের হিসেবে ৫শ এর অধিক নেতৃবৃন্দ হারিয়ে গেছেন, তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের হিসেবে ১০ হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে রাজনৈতিকভাবে হত্যা করা হয়েছে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত সারাদেশে আমাদের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ৭৮ হাজার মামলা করা হয়েছে, ১৮ লাখ মানুষকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিন খবরের কাগজে এই ছবিগুলো দেখছি। মাদক নিয়ন্ত্রণের নামে লাশ পড়ে থাকছে। এ বিষয়গুলোকে আমরা অনেকবার সামনে নিয়ে এসেছি। কিন্তু সরকার কোনো কিছুই তোয়াক্কা করছে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, যা আপনারা গত কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দেখেছেন। নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে নানা কৌশলে সম্পূর্ণভাবে সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করছে ফলাফলকে নিজের করায়ত্ব করছে। বিএনপি ছাড়া কোন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এই সরকারের অধীনে দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেনা অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন ভোটারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না। তাদের ভোট অন্যরা দিয়ে দেয়। মৃত মানুষও এখন ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থীদের প্রচারণা চালাতে দেয়া হয় না। বিরোধী দলের এজেন্টরা কেন্দ্রে যেতে পারে না। কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া, ভয়-ভীতি দেখানো হয়। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী হয়রানি করে। মামলা দেয়, গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে খুলনা-গাজীপুরসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করলেই আপনারা দেখতে পারবেন প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতায় কি রকম অনিয়ম হয়েছে। ভোট কেন্দ্রে কিভাবে ভোট জালিয়াতি হয়েছে, ব্যালট ছিনতাই হয়েছে। এসব দেখলেই আপনারা বুঝতে পারবেন এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কিনা?
খালেদা জিয়াকে বন্দি করে এবং তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেও মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে ‘নির্জন কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। প্রথম শ্রেণির কারাবন্দি হিসেবে তার যে প্রাপ্যটুকু সংবিধান তাকে দিয়েছে সেটা থেকেও তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, সাতবার খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য আবেদন করা হলেও সরকার কর্ণপাত করেননি। এমনকি, সর্বশেষ ১১ দিন ধরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কাউকে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি কারাগারে অসুস্থ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর ‘রাইট টু লাইফ: এ ফার ক্রাই ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে ১৫ মিনিটে প্রামাণ্য চিত্র উপস্থাপন করা হয়।
বিএনপি মহসচিব মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও মানবাধিকার বিষয়ক আসাদুজ্জামানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় মানবাধিকারসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য রিয়াজ রহমান, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, সিরাজুল ইসলাম, মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট ইলিনা খান, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মানবাধিকার বিষয়ক সচিব মাইক ক্রেমার, ফ্রান্স দূতাবাসের উপ-প্রধান জ্যঁ-পিয়ের পঁশে, ভারতের রাজনৈতিক বিভাগের শান্তনু মুখার্জীসহ কানাডা, সুইডেন, পাকিস্তান, ইরান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ প্রভৃতি দেশ ও সংস্থার কুটনীতিকরা অংশ নেন।
এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, সেলিমা রহমান, রুহুল আলম চৌধুরী, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, জয়নুল আবেদীন, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, আবদুল কাইয়ুম, প্রফেসর সুকোমল বড়ুয়া, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ফাহিমা মুন্নী, রুমিন ফারাহানা, মীর হেলালউদ্দিন, সারোয়ার হোসেন, সৈয়দ এজাজ কবীর, জি-নাইন এর সাধারণ সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ান্থ, আহাদ আহমেদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।###

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন