নগরীর আমবাগান ফ্লোরাপাস আবাসিক এলাকার একটি ভবনে হানা দিয়ে মা-মেয়েকে খুনের পর লাশ পানির ট্যাঙ্কে গুম করা হয়েছে। রোববার দুপুরে খবর পেয়ে পুলিশ লাশ দু’টি উদ্ধার করে। তারা হলেন- মনোয়ারা বেগম (৯৭) এবং তার মেয়ে রুপালী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল অফিসার শাহ মেহেরুন নেছা বেগম (৬৭)। নিহতের স্বজন বেলাল হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, চিরকুমারী মেহেরুন নেছা মাকে নিয়ে চার তলা ভবনের নিচতলায় থাকতেন। সকালে আমেরিকা প্রবাসী মনোয়ারা বেগমের ছোট ছেলে আসাদুর রহমান মোবাইলে মাকে না পেয়ে আত্মীয় স্বজনদের কাছে খবর দেয়। খবর পেয়ে বেলাল হোসেন ওই বাড়িতে যান। তিনি বলেন, বাড়িতে ঢুকে ঘরের দরজা, আলমিরা ভাঙ্গা এবং তছনছ অবস্থায় দেখতে পান। কিন্তু ঘরে তাদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না। তিনি খুলশী থানায় খবর দিলে পুলিশ সেখানে ছুটে যায়। পরে ফ্লোরে পড়ে থাকা রক্তের চিহ্ন ধরে এগিয়ে যেতে নিচতলার পানির রিজার্ভ ট্যাঙ্কে মনোয়ারা বেগমের পা দেখতে পান তিনি। এরপর পুলিশ সেখানে দু’জনের লাশের সন্ধান পায়। জোড়া খুনের ঘটনা শোনার পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে ছুটে যান। দমকল বাহিনীর কর্মীরা বিকেলে লাশ দু’টি ট্যাঙ্ক থেকে বের করে আনে।
খুলশী থানার ওসি শেখ নাসির উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, রাতে যে কোনো সময় তাদের দু’জনকে খুনের পর লাশ দু’টি ট্যাঙ্কে ফেলে দেয়া হয়। এরপর বাসায় লুটপাট করারও আলামত দেখা গেছে। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড জানিয়ে ওসি বলেন, কেন এই হত্যাকাণ্ড তা তদন্ত করে খুনীদের পাকড়াও করা হবে। তবে নিহত মেহেরুন নেছার বোনের ছেলে বেলাল হোসেনের দাবি বাড়িটি দখল করার উদ্দেশেই দু’জনকে খুন করতে পারে। কারণ দীর্ঘদিন থেকে তারা মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে আসছিল। তিনি সাংবাদিকদের জানালেন, ২০০৬ সালে এই ভবনটি তৈরি হয়। তখন থেকেই এলাকার একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর এই জায়গার প্রতি লোভ ছিল। সেই লোভেই মনোয়ারা ও মেহেরুন নেছাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি বেলাল উদ্দিনের।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মনোয়ারা বেগমের পাঁচ মেয়ে ও চার ছেলে। এর মধ্যে দুই ছেলে মারা গেছেন। দুই মেয়ে ও এক ছেলে দেশের বাইরে থাকেন। এক ছেলে থাকেন ঢাকায়, এক মেয়ে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে এবং অন্য মেয়ে থাকেন ময়মনসিংহে। নয় ছেলেমেয়ের মধ্যে কেবল মেহেরুন নেছাই বিয়ে করেননি। মাকে নিয়েই ছিল তার সংসার। তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উপজেলায়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আব্দুল ওয়ারিশ খান বলেন, মা-মেয়ের মৃত্যুর কারণ এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি তারা। কে বা কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সেটিও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন