শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার

অবৈধ ও চোরাচালানকৃত সিগারেটে বাজার সয়লাব, শতাধিক ব্র্যান্ডের অবৈধ তামাকপণ্য বাজারজাত হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

অবৈধ ও চোরাচালানকৃত সিগারেটের কারণে প্রতি বছর বড় অঙ্কের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এটি বন্ধ করা গেলে সরকার এ খাত থেকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারতো। কিন্তু সার্বিক তদারকির অভাবে অবৈধ সিগারেটের ব্যবহার কমছে তো না-ই বরং দিনদিন বাড়ছে বাজার। যদিও গত ২২ মে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ও রাজস্ব বৃদ্ধিতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত রাজস্ব ফাঁকি দেয়া সিগারেট এবং বিদেশ থেকে অবৈধ পথে আসা চোরাচালানকৃত বিদেশী সিগারেট বাণিজ্য বন্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁনকে চিঠিও দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিগারেট থেকে অধিক রাজস্ব আয়ে বাধা হিসেবে কাজ করছে দেশে তৈরি অবৈধ ও চোরাচালানের মাধ্যমে আসা সিগারেট। তাদের মতে, শুধু রাজস্ব বৃদ্ধি নয়, অবৈধ সিগারেট তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত চক্র নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এ টাকা নানা অসামাজিক কর্মকান্ডে ব্যবহার করছে। যা সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয় ও সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের বর্ধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত অবৈধ সিগারেট ও চোরাচালানকৃত সিগারেটের বাজার বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি।
সূত্র মতে, সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম প্রধান খাত সিগারেট। গত অর্থবছরে এখাত থেকে সরকারের আয় প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ছিল প্রায় ১৯ হাজার কোটি, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ১৬ হাজার কোটি, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের সাড়ে ১১ হাজার কোটি ও ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি। দিনদিন এখাত থেকে সরকারের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কিন্তু অতিরিক্ত রাজস্ব আয়ে বাধা হিসেবে কাজ করছে নানান ব্র্যান্ডের অবৈধ সিগারেট। তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশ থেকে আসা শতাধিক ব্র্যান্ডের অবৈধ তামাকপণ্য বাজারজাত হচ্ছে। যার অধিকাংশই সমুদ্র ও বিমানপথে আসে। আর ধোঁয়াবিহীন তামাক আসে স্থলপথে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত তামাকজাত দ্রব্যের একটা বড় অংশ কর ফাঁকি দিয়ে বাজারজাত করা হয়। সূত্র মতে, চোরাচালানকারীরা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে সুপার সেনর গোল্ড, দেশ ব্ল্যাক, টপি টেন, ফ্রেশ গোল্ড, সেনর গোল্ড, সেনর গোল্ড পিউর, সেনর গোল্ড ক্লাসিক, সেনর গোল্ড নং ১, সেনর গোল্ড এসআর, শাহারা ইত্যাদি সিগারেট উৎপাদন করে ব্যবসা করছে। শুধুমাত্র সেনর গোল্ড নামেই বর্তমানে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে পাঁচ রকমের ব্র্যান্ড। আাইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় অবৈধ সিগারেটের বিক্রি সাময়িক বন্ধ হলেও জব্দকৃত সিগারেটের সমপরিমাণ বিক্রেতাদেরকে বিনামূল্যে সরবরাহ করায় সুযোগ বুঝে অসাধু ব্যবসায়ীরা আবার সরব হন।
এদিকে ধূমপায়ী কমানোর লক্ষ্যে সরকার প্রতিবছর সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি করে থাকে। সিগারেটের এই মূল্য বৃদ্ধির ফলে একদিকে যেমন ভোক্তা ধূমপানে অনুৎসাহিত হয় অন্যদিকে রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পায়। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী- নিম্ন স্তরের সিগারেটের মূল্য (প্রতি ১০ শলাকার প্যাকেট) ২৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ টাকা করা হয়। বাজার ঘুরে দেখা যায় যে, প্যাকেটের মূল্য বৃদ্ধির ফলে নিম্নস্তরের সিগারেটের প্রতি শলাকার মূল্য পূর্বের মূল্য ৩ টাকা থেকে বেড়ে ৪ টাকা হয়েছে।
মূল্যবৃদ্ধির এই সুযোগ নিয়ে কিছু উৎপাদনকারী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সিগারেটের প্যাকেটে নকল/পুনঃ ব্যবহৃত ট্যাক্স স্ট্যাম্প/ ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে প্রতিপ্যাকেট সিগারেট বিক্রি করছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়। যে কারণে প্রতি শলাকা সিগারেট ১ থেকে দেড় টাকায় ভোক্তা পাচ্ছে।
সূত্র মতে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সিগারেটকে মূলত তিনটি স্তরে রাজস্ব আদায় করে। এর মধ্যে নিম্ন স্তরের সিগারেটের ভোক্তাই প্রায় ৭০ শতাংশ। যা থেকে সরকার প্রায় ৭১ শতাংশ (সম্পূরক শুল্ক ৫৫%+ মূল্য সংযোজন কর ১৫%+ হেলথ সারচার্জ ১%) রাজস্ব আয় করে থাকে। এ হিসেবে সরকার ৩৫ টাকা মূল্যে প্রতি প্যাকেটর সিগারেট থেকে প্রায় ২৫ টাকা রাজস্ব পায়। এই রাজস্ব নিশ্চিতে সকল সিগারেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রতিটি সিগারেট প্যাকেটের গায়ে ট্যাক্স স্ট্যাম্প/ব্যান্ডরোল সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই ট্যাক্সস্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল ছাড়া কোন সিগারেট বাজারে ছাড়া হলে সেটা আইনত অবৈধ এবং নকল টাকা তৈরির মতোই বড় অপরাধ।
অবৈধ ও চোরাচালানকৃত সিগারেটের বিক্রেতারা সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতিকে বাঁধাগ্রস্ত করছে বলে উল্লেখ করেছেন তামাক বিরোধী সংগঠন মানবিক-এর কারিগরিক পরামর্শক রফিকুল ইসলাম মিলন। তিনি বলেন, অবৈধ এ বাণিজ্যের জন্য এফসিটিসি (ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল) প্রটোকল স্বাক্ষর করার উদ্যোগ নেওয়াসহ সিগারেটের চোরাচালান বন্ধে নৌ, বিমান ও স্থলবন্দরে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। রফিকুল ইসলাম মিলন বলেন, তামাকের অবৈধ চোরাচালান বন্ধে প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতি স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে, তামাক কোম্পানির গেটে ব্যান্ডরোল মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে, নকল সিগারেট উৎপাদনকারী অবৈধ কারাখানাগুলোকে চিহ্নিত করে সব ধরনের মেশিনারিজ ধ্বংস করতে হবে এবং এর সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন